বিধানসভা ভোটের আগে একগুচ্ছ প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রকল্পের মধ্যেই রয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের ‘তাত্ত্বিক পথপ্রদর্শক’ সাভারকরের নামে সরকারি কলেজ নির্মাণের শিলান্যাসও। নজফগড়ের রোশনপুরায় সাভারকরের নামের কলেজের শিলান্যাসকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। প্রতিবাদে সরব হয়ে কংগ্রেস বলেছে, ভোটের মুখে বিভাজনের জিগির তুলেই এমন উদ্যোগ কেন্দ্রের।
নানাভাবে উগ্র হিন্দুত্বের ভাবনাকে রাজনীতির আঙিনায় টেনে এনে নির্বাচনী ফায়দা লুটতে চায় বিজেপি। সেই লক্ষ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের আগে একারণেই সাভারকরের নামাঙ্কিত কলেজের শিলান্যাস করলেন মোদী বলে অভিযোগ। এই কলেজ নির্মাণে খরচ হবে ১৪০ কোটি টাকা, সেই অর্থ জোগাবে কেন্দ্রীয় সরকারই। ওই কলেজে সমস্ত ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা থাকবে। শুধু তাই নয়, উগ্র হিন্দুত্বের ধারক বাহকের নামের কলেজ নির্মাণেই স্পষ্ট, দেশকে কোন অভিমুখে নিয়ে যেতে চাইছেন মোদীরা।
এমনকি এদিন বিজেপি’র সদর দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করে দলের তরফে কংগ্রেসকে আবার উগ্র হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা, সংস্কৃতি বহন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর এদিন বলেছেন, ‘‘নেহরু-গান্ধীর পরিবারের ইতিহাস পাঠের চেয়ে বরং বল্লভভাই প্যাটেল, সাভারকর, সুভাষ বসু এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির অধ্যায় পড়া উচিত। ওটাই ‘প্রকৃত ইতিহাস’ বলে দাবি করেন চন্দ্রশেখর। তিনি হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘‘দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর নামে করেছে কংগ্রেস। এখন কংগ্রেস যদি আমাদের বলে তাহলে এর মধ্যে দু-তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রয়াত প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও এবং মনমোহন সিংয়ের নামে করে দিতেই পারি।’’ কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের তরফে সরকারি আনুকূল্যে নির্মীয়মাণ ওই কলেজের নামকরণ সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নামে করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে। দিল্লিতে মেরুকরণের লক্ষ্যে বিজেপি উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে বলেও দাবি করেছে কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যেই দিল্লির ভোটের মুখে সাভারকরের নামে কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত। আবার কংগ্রেস নেতা নাসির হুসেন স্পষ্টই বলেছেন, একজন মুচলেখা দেওয়া ব্যক্তিকে মহিমান্বিত করার জন্যই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ওই কলেজের নামকরণ করা হচ্ছে। এদেশে বহু মানুষ বসবাস করেন এবং দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁদের যথেষ্ঠ অবদানও রয়েছে। কিন্তু বিজেপি মুচলেখা দিয়ে মুক্তি পাওয়া এবং ব্রিটিশদের পেনশনভোগী ব্যক্তিকেই মহান হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে বিজেপি।
এদিকে, দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে বিজেপি-আপ। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আপ-কে ‘দিল্লির বিপর্যয়’ বলে আক্রমণ করেন। এই বিপর্যয় গত ১০ বছর ধরে কব্জা করে রেখেছে দিল্লিকে। পালটা প্রত্যাঘাত করেন আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। তিনি বলেন, ‘দিল্লিতে কোনও বিপর্যয় হয়নি। যা বিপর্যয় হয়েছে তা বিজেপি’র অন্দরেই।’
এদিন রাজধানী দিল্লিতে আবাসন, শিক্ষাক্ষেত্র সহ পরিকাঠামোগত প্রকল্পের উদ্বোধন করতে গিয়ে মোদী তুলোধনা করলেন আপ পরিচালিত রাজ্য সরকার এবং পৌরসভাকে। তিনি বলেন, ‘‘এই আপ যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে দিল্লির পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’’ মোদীর দাবি, একদিকে যখন তাঁর সরকার উন্নয়নের প্রশ্নে নানা রকম উদ্যোগ নিচ্ছে তখন অন্যদিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকার ডাহা মিথ্যার ওপর ভর করে প্রশাসন চালাচ্ছে। নাম করে আপ সরকার, কেজরিওয়ালকে শূলে চড়িয়ে মোদী বলেছেন, ‘‘গত ১০ বছর ধরে দিল্লিকে ঘিরে রয়েছে ‘আপদা’ বা ‘বিপর্যয়’। আন্না হাজারেকে সামনে রেখে কিছু কট্টর বেইমান লোক দিল্লিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। মদ দুর্নীতি, শিশুদের স্কুল নিয়ে দুর্নীতি, গরিবের চিকিৎসা নিয়ে দুর্নীতি, বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে লড়ার নামে দুর্নীতি। গোটা দিল্লিকে দুর্নীতিতে ঘিরে ফেলা হয়েছে।’’
এর প্রত্যুত্তরে কেজরিওয়াল সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, ‘‘দিল্লিতে কোনও উন্নয়নই করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে প্রধানমন্ত্রী আপ সরকারকেই যতই গালমন্দ করুন না কেন, তাতে কিছু যাবে আসবে না। তিনি আরও বলেন, ‘বিজেপি’র প্রথম বিপর্যয় হলো দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তাদের কোনও মুখ নেই। দ্বিতীয় সমস্যা হলো, বিজেপি’র বলার মতো কিছু নেই, কোনও আখ্যান নেই। তৃতীয়ত, বিজেপি’র কোনও কর্মসূচি ও দিশা নেই। যদিও একটা বিপর্যয় দিল্লিতে রয়েছে, সেটা হলো দিল্লির আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব তিনি যেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিল্লির জন্য একটু সময় বের করার কথা জানান।’
Comments :0