STORY — BIDHUYTH RAJGURU | MITHAR JATHARE — NATUNPATA | 16 JUNE 2024

গল্প — বিদ্যুৎ রাজগুরু | মিথ্যার জঠরে — নতুনপাতা | ১৬ জুন ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

STORY  BIDHUYTH RAJGURU  MITHAR JATHARE  NATUNPATA  16 JUNE 2024

গল্প

মিথ্যার জঠরে
বিদ্যুৎ রাজগুরু

নতুনপাতা

( গত সপ্তাহের পর )

আবার পথ চলা। বর্ষার দিনে জোনাকির আলো তারাদের মতো যেন আকাশ ছেড়ে গাঁয়ের পথে-ঘাটে আর একটা আকাশ তৈরি করছে। না-জানা পোকামাকড়ের অর্কেস্ট্রা শুনতে শুনতে ঘরে ফেরা। গাঁয়ে ঢোকার মুখে জমিরুদ্দিনের চায়ের  
দোকান। বাল্যবন্ধুদের সঙ্গে কিছুক্ষণ চায়ের আড্ডা। ঘরে ঢোকার মুখে সাইকেলের পিছনে ছুটতে ছুটতে বিকাশ বাবার সঙ্গ নিতে চায়, বাবার। 'জানো বাবা আজ ফকির কাকুর ছেলে ফোন করেছিল। দাদার একটা কাজ দেখেছে, বিকাশ  
সাইকেল থেকে নামতেই বাবাকে এমন খবর দিল। আকাশের সঙ্গেই পড়ত ফয়েজ। মাধ্যামিক পাশ করে সে এখন দক্ষিণ ভারতের একটা শহরে রাজমিস্ত্রির জোগানদারের কাজ করে। সেই কাজে ফয়েজ তাঁর বন্ধু আকাশকে নিয়ে যেতে  
চাই। আকাশকে কয়েকদিনের মধ্যে পৌঁছাতে হবে। বিকাশের কথা শুনে একটা দুশ্চিন্তার কালো মেঘ কখনো একটু স্বস্তির পরিছন্ন আকাশ চোখের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সিদ্ধান্তহীনতায় কিছুটা ভুগছে মোহন। আর আকাশের দিকে  
তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। আগামী হাটে উৎপাদিত সবজি নিয়ে বসবে কে? বিকাশ তো লাজুক স্বভাবের। স্কুল আছে। রোজ তো আর স্কুলের হেডমাস্টার ছাড়বে না। হাতে মুখে জল দিয়ে বাঁশের তৈরি বেঞ্চে বসে ভাবতে থাকে মোহন অনেক  
কিছু। এদিকে স্ত্রী নির্মলা রাতের খাবারের ডাক দিয়েছে। শীতের রাত দেরি করা যাবে না। খাবার খেয়ে কাঠের পড়ে থাকা শেষ আংরার লাল টুকটুকে আগুনে হাত তাপিয়ে আবার আকাশের কথা ভাবা যাবে। আকাশ কোন পথে যাবে।  
আসলে আকাশ বিকাশকে ছেড়ে কোনো দিন থাকেনি নির্মলা মোহন। তবুও আকাশকে রুটিরুজির সন্ধানে ভিন রাজ্যে যেতে হবে। সেদিন স্কুলের দিদিমনির কাছে খুব বকা খেয়েছে নবম শ্রেনির ছাত্র বিকাশ। উপস্থিতির হার খুব কম।  
সপ্তাহে দু'দিন তো হাটবার। প্রায় দিন ছুটি নিয়ে টিফিনের পর হাটে পসরা সাজাতে হয়। এবার তো দাদা আকাশও থাকবে না। যাইহোক আজ শুক্রবার হাটের দিন। স্কুলে এসেছে বিকাশ। কিন্তু ছুটি নিতে হবে টিফিনের পর। তাই পেটে  
ব্যথার কথা বলে হেডস্যারের কাছে কাঁচুমাচু করা। অবশেষে ছুটি মিলল। অনেকেই এই ভাবে ছুটি মঞ্জুর করে। বিকাশ ছুটি নিয়ে সটান হাটে। হেডস্যারও ছুটির পর মাঝে মধ্যে হাটের দিন বাজার করে। যেখানে বাঘের ভয় সেখনে সন্ধ্যা  
হয়। লাল শাক আর কিছু তেতো পাট শাক নিয়ে বসছে বিকাশ। হেডস্যার আজ শাক কিনতে হাজির। তাও আবার বিকাশের দোকানে। 'কী ব্যপার তোর পেটে ব্যথা বলে ছুটি নিলি। আর এখানে শাক বিক্রি করছিস। এই কথা বলে একশো  
টাকা ধরিয়ে দুইটা শাকের গোছা তুলে নিল হেডস্যার। বিকাশ লাজুক নয়নে স্যারের একশো টাকার নোটটা ভাঙিয়ে খুজরো বার করছে স্যান্ডো গেঞ্জি আর পেটের উপরে গুটানো পায়জামার কোচর থেকে। দুটো চোখ নোনা জলে ভরা। দুই  
গাল বেয়ে কান্নার জল গড়িয়ে পড়ছে। বিকাশের কানের গোড়া গরম হয়ে আসছে। যেনো একটা বঙ্গপোসাগর তৈরি হল বিকাশের হাপুস নয়নে। অঙ্কে কাঁচা বিকাশ খুব সহজে যোগ-বিয়োগের অঙ্ক কষে বাড়তি টাকা স্যারকে ফেরৎ দিল।  
শেষ গাড়িটা ধরবে বলে চৌপথিতে অপেক্ষায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, মিথ্যার জঠরে অনেক উলঙ্গ সত্যি লুকিয়ে থাকে। সত্যি পেটের ব্যথার কারণ আমরা খুঁজবো কবে?এ তো ঔষধে সারে না। সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্নটা  
দেখতে দেখতে ভিড় বাসের পাদানিতে পা রেখে উঠে পড়লেন হেডস্যার।
(সমাপ্ত)

Comments :0

Login to leave a comment