গল্প
নীল
সৌরীশ মিশ্র
মুক্তধারা
এগারো বছরের নীল ওর মা-র সাথে বাড়ির বাইরে পা দেওয়া মাত্রই বুঝতে পারল গত পরশু কি তাণ্ডবই না চালিয়ে গিয়েছে এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। আশেপাশে সেই ছাপ এখনো স্পষ্ট। পাড়ার মুদি দোকানে চলেছে দু'জনে। কিছু জিনিস না আনলেই নয় যে। নীলের বাবা চাকরি সূত্রে থাকেন উড়িষ্যায়। কলকাতার এই বাড়িতে নীল আর ওর মা-ই থাকে বছরের বেশিটা সময়।
এই গলিটা থেকে বেড়িয়ে বড় রাস্তাটায় পড়ে ডান দিকে একটু এগোলেই প্রদীপ সাহার মুদি দোকান। ঐ দোকান থেকেই সব মুদি দোকানের জিনিস আসে নীলদের বাড়িতে।
বড় রাস্তাটার মুখেই নীল দেখল বাজারের থলে হাতে ওদের দিকে এগিয়ে আসছেন ফণীদাদু। নীল বুঝতে পারল, বাজার করে ফিরছেন উনি। নীলদের পাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ ইনিই। ফণীদাদুদের বাড়িতে লোক বলতে ফণীদাদু আর দিদিমা, এই দু'জনই। বাবা-মা'র কাছে শুনেছে নীল, ওনাদের আর কেউ নেই।
নীল লক্ষ্য করল, বয়সের ভারে কিছুটা নুয়ে পড়া মানুষটা যেন বাজারের থলেটার কারণে আরও বেশ কিছুটা ঝুঁকে পড়েছেন। মনে মনে ভাবে নীল, বাজারের থলেটা নিয়ে চলতে নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হচ্ছে ফণীদাদুর।
নীল ওর মা'র হাতটা নাড়িয়ে গলা নামিয়ে বলল, "মা দেখেছো, ফণীদাদুর বাজারের ব্যাগটা নিয়ে হাঁটতে কেমন কষ্ট হচ্ছে। আমি ব্যাগটা ফণীদাদুর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি?"
ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলেন নীলের মা-ও। ওনার-ও খারাপ লাগছিল। ছেলের কথা শুনে তাই তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বললেন, "যা, দিয়ে আয়।"
ফণীভূষণ চক্রবর্তী ততক্ষণে এগিয়ে এসেছেন আরো কয়েক পা। মায়ের পারমিশন পেয়ে এক মুহূর্তও আর সময় নষ্ট করল না নীল। এক ছুটে সে পৌঁছল ফণীভূষণবাবুর কাছে। তারপর একপ্রকার টানাটানি করেই ওর ফণীদাদুর হাত থেকে থলেটা নিয়ে নিল নীল আর তারপর হাঁটতে থাকে সে ওটা নিয়ে ওর ফণীদাদুর পাশে পাশে।
কয়েকক্ষণের মধ্যেই ফণীভূষণবাবু, সাথে নীল, নীলের মায়ের একেবারে সামনে এসে পড়লেন।
"দেখেছো বৌমা, তোমার ছেলের কাণ্ড!" নীলের মাকে বললেন ফণীভূষণ চক্রবর্তী।
"এ আর এমন কি করছে ও, জ্যেঠু। করুক না এটুকু।"
"তুমি এখানেই একটু দাঁড়াও মা, আমি এক্ষুনি আসছি দাদুর বাড়িতে ব্যাগটা রেখেই।" মা-কে বলে নীল।
"ঠিক আছে, যা। জ্যেঠু, আপনিও সাবধানে যাবেন। পিছল হয়ে রয়েছে কিন্তু রাস্তাটা।"
"ঠিক আছে বৌমা। এলাম তবে?"
"হ্যাঁ আসুন।"
নীলের মা'র কাছে বিদায় নিয়ে সরু গলিটা ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেন ফণীভূষণ চক্রবর্তী। তাঁর পাশে চলেছে বাজারের থলে হাতে নীল। নীলের মা ঐ দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে মনে প্রার্থনা করেন তাঁর ছেলে যেন এমনই পরোপকারী থাকে সারাটা জীবন।
Comments :0