পশ্চিম মেদিনীপুরের দীপ্তি বাসুরি সামন্তের হাত ভেঙেছে, ওই জেলারই ভোলানাথ শাসমলের পিঠের ডানদিকে ঘাড়ের কাছে চামড়া ফেটে গেছে। পা ভেঙেছে ঝাড়গ্রামের পায়েল রায়ের। নদীয়ার রিম্পা কর্মকারের কান্না থামছে না। পুলিশের লাঠির আঘাতে তাঁর হাতের শাঁখা ভেঙে আঘাত পেয়েছেন। ফের রাজ্যে বহু যুবক যুবতী আক্রান্ত, আহত।
কাজের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থামাতে রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশের আরও একবার নির্মম নির্যাতনের শিকার হলেন চাকরি প্রার্থীরা। মঙ্গলবার বিধাননগরের আচার্য সদন ভবন, সেক্টর ফাইভ মেট্রো স্টেশন, করুণাময়ী মেট্রো স্টেশন এবং সংলগ্ন অঞ্চল থেকে টেনে, হিঁচড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রায় ৪০০জনকে আটক করা হয়। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে এদিন আচার্য সদন অভিযান ছিল চাকরি প্রার্থীদের। গত ন'বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি এবং শূন্যপদ আপডেট করা হয়নি। উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকদের শূন্যপদ প্রায় চল্লিশ হাজার হলেও নিয়োগ নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই বলে অভিযোগ।
এদিন উচ্চ প্রাথমিকে মেধা তালিকাভুক্ত প্রার্থীরা আচার্য সদন অভিযানের ডাক দেয়। সকাল থেকেই নানা ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বঞ্চিতরা বিধাননগরে আচার্য সদনের সামনে জড়ো হতে থাকে। ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। করুণাময়ী চত্বর জুড়ে বিরাট পুলিশ বাহিনীও পথে নেমে পড়ে। মেট্রো স্টেশনগুলো ঘিরে ফেলে। মেট্রো করে এসে করুণাময়ী মেট্রো, সেক্টর ফাইভ মেট্রো স্টেশন থেকে বেরোতেই বিক্ষোভকারীদের আটক করা শুরু হয়। টেনে, হিঁচড়ে ধাক্কা মারতে মারতে পুলিশের প্রিজন ভ্যান, বাসে তোলা শুরু হয়। অন্যদিকে আচার্য সদনের সামনে বিক্ষোভরতদের উদ্দেশে পুলিশ অঞ্চল ফাঁকা করার ঘোষণা শুরু করে। পুলিশের হুমকি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ চলতেই থাকে। এবার বিধাননগর কমিশনারেটের বিশাল বাহিনী এসে বলপ্রয়োগ শুরু করে। আর তাতেই শুধু ইন্টারভিউর দাবিতে আসা যুবক যুবতীরা আহত, অসুস্থ, আক্রান্ত। অনেককেই বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়। বিধাননগরের করুণাময়ী থেকে কলেজ মোড় জুড়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে নির্মম, অমানবিক আক্রমণের আরও এক নিদর্শন। পথ চলতি মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
বিক্ষোভকারীদের পক্ষে নদীয়া জেলার নবদ্বীপের বাসিন্দা হাবিব শেখ জানালেন "২০১৫ সালে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণদের মধ্যে ইন্টারভিউর ডাক না পাওয়ার সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। টেট, বিএড পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়োগ করা হচ্ছে না। শূন্যপদ ছিল ১৪হাজার ৩৩৯। তারপরে ন'বছর নিয়োগ হয়নি, হয়নি শূন্যপদ আপডেট। কমিশনের গেজেটে নির্দেশ থাকলেও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। বর্তমানে শূন্যপদ ৪০ হাজারের বেশি। তার নির্দিষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আন্দোলন আর আদালত করতে করতে আমাদের জীবনের দীর্ঘ সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বয়স বেড়ে যাচ্ছে। রাজ্যের সরকার, শিক্ষা দপ্তর উদাসীন।"
এদিন বহু যুবক যুবতী আহত হন। কারোর আঙুল ফেটে গেছে, কারোর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাঠির দাগ। অসুস্থ হয়ে পথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অসুস্থ, আহতদেরও পুলিশ টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। হাত, পা ভেঙে যাবার ঘটনাও ঘটেছে। তাঁদের আটক করে বিধানগরের পুলিশ কমিশনারেট অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন থানায় নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখা হয়। বিধাননগর উত্তর থানায় ৫৬ জন, ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় ২০০জন, নিউটাউন থানায় ২৯জন, ইকোপার্ক থানায় ৬৬জন, বিধাননগর দক্ষিণ থানায় ৪৯জনকে রাখা হয় বলে জানা গেছে। রাত আটটার পরে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে আগতরা নিউটাউন, বিধাননগরের বিভিন্ন থানা থেকে বাড়ি ফিরতে আরও সমস্যার মধ্যে পড়েন।
Comments :0