AMBANI WEDDING EXTRAVAGENZA

আম্বানিদের বিয়ে: বিত্তের কুৎসিত প্রদর্শন বৈষম্যের ভারতে

জাতীয়

AMBANI WEDDING BENGALI NEWS INDIA WEALTH INEQUALITY

জামনগরে প্রাক বৈবাহিক অনুষ্ঠান। তারপর দ্বিতীয় দফার অনুষ্ঠান সমুদ্রের বুকে বিলাসবহুল ইয়টে। তৃতীয় তথা শেষ দফায় বিয়ের মূল অনুষ্ঠান। এবার খাস মুম্বাই শহরে। উপলক্ষ রিলায়েন্সের মালিক মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের বিবাহ। 

আম্বানি পরিবারের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তিন দফা মিলিয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে অনন্ত আম্বানির বাবা মুকেশ আম্বানির। মার্কিন ডলারের হিসেবে ৬৭৫ মিলিয়নের আশেপাশে। 

রিলায়েন্সের যদিও দাবি, তাঁদের বার্ষিক আয়ের মাত্র ০.৫ শতাংশ খরচ হয়েছে ‘বৈভব প্রদর্শনে’। 

ইতিহাসবিদরা বলছেন, অতীতে রাজা বাদশাহদের বিয়েতে এমন জাঁকজমক দেখিয়ে বিত্তের বড়াই চলত। সেই সংস্কৃতিরই অশ্লীল প্রদর্শন চলে এখনও। তার একটিট প্রকট উদাহরণ আম্বানি পরিবারের বিয়ে। তাঁরা বলছেন, মুঘল বাদশা শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারাশুকোর বিয়েতে দেখা গিয়েছিল এমন বৈভব। ১৬৩৩ সালে দারা’র বিয়েতে খরচ হয়েছিল তৎকালীন ৩২ লক্ষ টাকা, যা আজকের মুদ্রায় ৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঐতিহাসিক হিসেব অনুযায়ী, শাহজাহান নিজের ছেলের বিয়েতে যত টাকা খরচ করেছিলেন, মুকেশ আম্বানির খরচ তার ২০ গুণের বেশি।  

আম্বানি পরিবারের বৈভবের এমন নির্লজ্জ প্রদর্শন ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই উঠতে শুরু করেছে একাধিক প্রশ্ন। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের বক্তব্য, অক্সফ্যামের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। আম্বানিদের মত অতি ধনীদের পকেটে দেশের ৭৭ শতাংশ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে। ২০১৭-তে যত সম্পদের সৃষ্টি হয়েছে তার ৭৩ শতাংশ গিয়েছে বিপুল ধনী ১ শতাংশের হাতে। ওপরতলার এই অংশের অন্যতম প্রতিনিধি আম্বানিরা। 

এর উলটোদিকে ভারতের দরিদ্রতম ৬৭ কোটি মানুষের হাতে রয়েছে জাতীয় সম্পদের মাত্র ১ শতাংশ। গত ১০ বছরে ভারতে অতি ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির হার বুলেট ট্রেনের গতিকেও হার মানাবে। ২০১৮-১৯ সালে ভারতের বাজেট ছিল ২৪ লক্ষ ৪২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। দেশের অতি ধনীদের মোট সম্পদ সেই অঙ্ককে ছাপিয়ে গিয়েছে। 

ওয়াকিবহাল মহল বলছে, একজন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কর্মরত শ্রমিক ১ হাজার বছর ধরে চেষ্টা করলেও, সম্পদের নিরিখে এই অতি ধনীদের কাছে পৌঁছতে পারবে না। ৬ কোটি ভারতবাসী প্রতিবছর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে গরিবে পরিণত হচ্ছেন। ঘড়ির কাঁটার হিসেবে প্রতি সেকেন্ডে ২ জন। এই অবস্থায় আম্বানি পরিবারের এমন সম্পদের প্রদর্শন কুৎসিত বললেও কম বলা হয়। 

এই অংশের বক্তব্য, অতি ধনীদের উপর সম্পত্তি কর বসানোর পরিকল্পনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। সেই অর্থে দেশের উন্নয়ন করা হয়। কারণ এই ব্যক্তিগত সম্পদের পিছনে থাকে সরকারি বহু ছাড়, বিনিয়োগের ব্যবস্থাপনা।  সমবন্টন মূলক সমাজের দাবিও উঠছে বিশ্বজুড়ে প্রবল বৈষম্যের কারণে। কিন্তু ভারতে চিত্র সম্পূর্ণ উলটো। ধনীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে অতি ধনী হতে। সরকার জলের দরে রাষ্ট্রীয় সম্পদ তুলে দিচ্ছে রিলায়েন্সের মত সংস্থার হাতে। সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে নামমাত্র সুদে ঋণ পান এই বিত্তবানরা। তাঁরা ঋণ শোধ করতে না পারলে মকুব করে সরকার। অথচ কৃষকের কৃষিঋণ মকুব করা হয় না এদেশে।

১০ শতাংশের কম হারে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পান না পড়ুয়ারাও। গত দশ বছরে ঋণ শোধ করতে না পারায় ১ লক্ষ ১২ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু আম্বানিদের মত সম্পদশালীদের ৫ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ গত ৫ বছরে মকুব করেছে বিজেপি।

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, এই কদর্যতার একমাত্র সমাধান বিত্ত কর বসানো। কিন্তু বিজেপি এবারের নির্বাচনে এমন ভাবনার বিপক্ষে সদলবলে প্রচার চালিয়েছে। 

  

Comments :0

Login to leave a comment