অর্পণ সেনগুপ্ত
২০৩৪‘র বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হবে সৌদি আরবে। ঘোষণা করেছে ফিফা। সেই ঘোষণার পরই শুরু হয়েছে বিতর্ক। ২০২২’র কাতার বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রবাসী শ্রমিকদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজ করানোয় লঙ্ঘিত হয়েছিল মানবাধিকার সংক্রান্ত বেশ কিছু নিয়মকানুন। শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ঘিরে ছিল সেই বিশ্বকাপকে। বিশেষ করে শ্রমিকদের সুরক্ষা অবহেলিত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শোরগোল উঠেছিল। এবার একই ধরনের অভিযোগ সৌদির বিশ্বকাপ ঘিরে।
ফিফার সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তুলে সরব মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টরন্যাশনাল। জুড়ে গিয়েছে মানবাধিকার সংক্রান্ত আরও কয়েকটি সংগঠন এবং মঞ্চ। ‘চরম বিপদের মুহূর্ত'- এই শিরোনামে মোট ২১টি সংস্থা ফিফাকে যৌথভাবে একটি চিঠি দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে নেপাল ও কেনিয়ার বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন। অ্যামনেস্টির শ্রম অধিকার বিভাগের শীর্ষকর্তা স্টিভ ককবার্ন বলেছেন, ‘‘ফিফার এরূপ সিদ্ধান্তে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে প্রচুর শ্রমিকের জীবন। ফিফা ভালোমতোই জানে যে শ্রমিকরা এক্ষেত্রে শোষিত অথবা তাদের জীবনও বিপন্ন হতে পারে।’’
নেপালের প্রবাসী শ্রমিক সংগঠন ‘শ্রমিক সাঞ্জাল’-র সহ প্রতিষ্ঠাতা ভীম শ্রেষ্ঠা জানিয়েছেন যে, তাঁরা দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনের সুরক্ষা নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কায় রয়েছেন। তাঁদের এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক ভাই-বোনেরা এই বিশ্বকাপে কাজ করবেন। তাই তাঁদের জীবনের সুরক্ষার দিকটি ফিফার দেখা দরকার। ফিফা যেন এই বিষয়টি থেকে দৃষ্টি না ঘুরিয়ে এটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে।
শ্রম বিধি ভেঙে অসুরক্ষিত অবস্থায় শ্রমজীবীদের কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে বিশ্বজুড়ে। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে করা হচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা নিশ্চিত করতে। পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম ইউরোপ বা আমেরিকায় শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ঘিরে তুলনায় অনেক কম সরব, আছে এমন অভিযোগও। তবে বিশ্বকাপের আয়োজনের মতো বিপুল প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের সুরক্ষা বিধি না মেনে কাজ করাতে বাধ্য করানোর অর্থ, গুরুতর ঝুঁকির মুখে শ্রমজীবীদের ঠেলে দেওয়া।
২০৩৪’র বিশ্বকাপ সৌদি আরবে হওয়ার আগে অবশ্য রয়েছে আরো দুটি বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা। ২০২৬ সালে একেবারে নতুনভাবে ৪৮টি দলকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ। উত্তর আমেরিকার তিনটি দেশ- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে হবে এই প্রতিযোগিতা। প্রত্যেকটি দেশের মোট ১৬টি ভেন্যুতে মোট ১৬টি গ্রুপের খেলা হবে। প্রত্যেকটি গ্রুপে তবে ৩টি করে দল।
২০৩০’র বিশ্বকাপ হবে তিনটি মহাদেশের মোট পাঁচটি দেশে। ইউরোপের পর্তুগাল ও স্পেন, আফ্রিকার মরক্কো এবং দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়েতে এই সঙ্গে হবে এই বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা। ১৯৩০ সালে শুরু হয়েছিল ফুটবল বিশ্বকাপ। তখন সেই কাপের নাম ছিল ‘জুলে রিমে কাপ’। তিনবার বিশ্বকাপ জিতে জুলে রিমে কাপ নিয়ে যায় ব্রাজিল।
সেটা ১৯৭০। তারপর থেকে নতুন করে শুরু হয় ফিফা বিশ্বকাপ। ট্রফির চেহারাই যায় বদলে। ইতালির শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিগার নকশায় তৈরি হয়েছিল এই বিশ্বকাপ। ২০৩০’র বিশ্বকাপে জুলে রিমে কাপের শতবর্ষ পালিত হবে।
Comments :0