আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা চাপের কাছে নতি স্বীকার করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার গোপনে ভারতের বিদেশনীতি, প্রতিরক্ষানীতি, বাণিজ্য নীতি এবং স্ট্র্যাটেজিক অবস্থানে গুরুতর পরিবর্তন আনতে চলেছে। আর এই গোটা প্রক্রিয়াটাই চলছে অত্যন্ত গোপনে। শেষ পর্যন্ত মোদী সরকারের এই ষড়যন্ত্র সফল হলে দেশকে এবং দেশের জনগণকে নানাভাবে বড়সড় মূল্য চোকাতে হবে।
ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকায় অতি দক্ষিণ পন্থী সরকার তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসাবে ঘোষণা করেছে ‘আমেরিকার ফার্স্ট’ এবং মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’। অর্থাৎ ট্রাম্প সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে আমেরিকার স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। কোনওঅবস্থাতেই এমন কোনও আইন, পদক্ষেপ বা নীতি গ্রহণ করা হবে না যাতে মার্কিন স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়। পাশাপাশি আগের যেসব নীতির কারণে মার্কিন স্বার্থহানি হয়েছে বা হচ্ছে সেগুলি সব পরিবর্তন করা হবে। ট্রাম্পের লক্ষ্য সমরশক্তি এবং অর্থনৈতিক শক্তিতে আমেরিকাকে ফের তার মহান গৌরব ফিরিয়ে দিতে হবে। বিশ্বজুড়ে একচেটিয়া নিরঙ্কুশ প্রভাব নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বের অন্য কোনও দেশ বা অঞ্চলের ভালো মন্দের দায় আমেরিকার নয়। আমেরিকা নিজের ছাড়া অন্য কারো স্বার্থ নিয়ে ভাববে না। মার্কিন স্বার্থ পূরণের জন্য অন্য দেশের যদি সঙ্কট বাড়ে তাতেও আমেরিকার আপত্তি নেই।
এমন অবস্থান থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন সমস্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরে যেতে চাইছে। ইতিমধ্যে বিশ্ব পরিবেশ সংক্রান্ত বিশ্ব উষ্ণায়ন চুক্তি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরে গেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘ থেকেও সরে যাবার কথা বলছে। সরার ভাবনা আছে বিশ্বব্যাঙ্ক, আই এম এফ থেকেও। ট্রাম্প বলে দিয়েছেন অন্যের ভালোর জন্য আমেরিকা কোনও দানধ্যান করবে না। আমেরিকা অন্য কোনও দেশকে আর্থিক অনুদান দেবে না।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভিন দেশের পণ্য আমেরিকায় বিনা শুল্কে বা কম শুল্কে ঢুকতে দেওয়া হবে না। মার্কিন পণ্যের ওপর যে দেশ যে হারে শুল্ক চাপায় আমেরিকাও সেই দেশের সেই পণ্যে সেই হারে শুল্ক চাপাবে। এই প্রশ্নে দীর্ঘকালের মার্কিন সঙ্গী দেশগুলিকেও ট্রাম্প ছাড় দিতে রাজি নন। তাই তিন বছর ধরে ইউক্রেনকে অর্থ-অস্ত্র সহ সবরকম সাহায্য দেওয়া হলেও এখন সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে নতুন করে পৃথিবীকে বিন্যাস করতে এবং সম্পদের দখল নেবার ছক কষা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কানাডা, গ্রিনল্যান্ড, পানামা ক্যানেল, গাজা ভূখণ্ড মার্কিন দখলে আনার কথা বলা হয়েছে। ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজ সম্পদ মার্কিন কবজায় আনার চেষ্টা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশকে নানাভাবে চাপ দিয়ে, বেকায়দায় ফেলে আমেরিকার কাছে মাথানত করানোর এবং সেই সুবাদে আমেরিকার জন্য বাড়তি সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চলছে।
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনায় অন্যতম টার্গেট ভারতও। শুল্ক যুদ্ধের চাপ ও হুমকি দিয়ে বাণিজ্য, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা ইত্যাদিতে আমেরিকার উপর নির্ভরশীল করার ছক কষা হয়েছে। ভারতকে বাধ্য করছে রাশিয়া ও আরবের সস্তার তেলের বদলে দামি মার্কিন তেল কেনাতে। রাশিয়া থেকে অস্ত্র না কিনে বেশির ভাগ সমরাস্ত্র আমেরিকা থেকে কিনতে প্রবল চাপ দেওয়া হচ্ছে। ভারতের কৃষি ও কৃষককে বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিয়ে মার্কিন কৃষিপণ্যের জন্য ভারতের বাজার খুলে দিতে বলা হচ্ছে। সন্দেহজনক ও উদ্বেগজনক বিষয় হলো এত কিছুর পরও নরেন্দ্র মোদী মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। টু শব্দটিও করছেন না।
doom
কোন সর্বনাশের ইঙ্গিত

×
Comments :0