Cattle Smuggling Case

অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা ঠেকাতে মরিয়া তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব

রাজ্য

Cattle Smuggling Case


নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ২৩ নভেম্বর— বিপুল টাকা খরচ করে কপিল সিবালকে আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করেছেন অনুব্রত মণ্ডল। কয়লা পাচারকাণ্ডে সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি ও তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলা ব্যানার্জির হয়েও আদালতে লড়ছেন কংগ্রেসের সাংসদ কপিল সিবাল। তবে অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লি যাত্রা ঠেকাতে মরিয়া শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। 
কেন? কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্রের দাবি, কয়লা পাচারের মতো গোরু পাচারকাণ্ডে তদন্তে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালীর নাম সামনে আসছে, নিয়ম করে তাঁর ঠিকানায় টাকা পৌছেছে। সেই সূত্রেই সামনে এসেছে লটারি কেলেঙ্কারির তদন্তও। দিল্লিতে ইডি’র হেপাজতে অনুব্রত মণ্ডলের জেরা শাসক দলের উদ্বেগ বাড়াতে পারে। প্রায় তিন মাস জেল হেপাজতে থাকা অনুব্রত মণ্ডলের রক্ষণও ক্রমে দুর্বল হচ্ছে। ফলে দিল্লির রাউজ অ্যাভিনিউ কোর্টে ইডি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারির আবেদন জানানোর পরেই তড়িঘড়ি দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানান অনুব্রত মন্ডল। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি। অবশ্য ইডি’র বক্তব্য, দিল্লি হাইকোর্ট থেকে রায় পেয়েই এর আগে গোরু পাচারকাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডলের সহযোগী সায়গল হোসেনকে দিল্লিতে নিয়ে এসেই জেরা করা হয়েছিল। একই মামলায় অনুব্রত মণ্ডলকেও এবার দিল্লির সদর দপ্তরে হোপাজতে নিয়েই জেরা করতে চাইছে তদন্তকারী সংস্থা।
দিল্লিতে সদর দপ্তরে এনে অনুব্রত মণ্ডলকে জেরার রাস্তা প্রশস্ত করেছে খোদ তাঁর কন্যা সুকন্যা মণ্ডল ও হিসাবরক্ষক মনীশ কোঠারির জেরা। একইসঙ্গে দিল্লিতে সায়গল হোসেনের জেরাও অনুব্রত মণ্ডলের বিপদ বাড়িয়েছে। গোরু পাচারকাণ্ডে মানি লন্ডারিং বা অর্থ নয়ছয়ের তদন্ত করছে ইডি।
তদন্তকারী সংস্থার দাবি, গোরু পাচারকাণ্ডে বিপুল টাকা হাওলার মাধ্যমে বিদেশে বিশেষত বাংলাদেশে ও সিঙ্গাপুরে পাচার হয়েছে। কয়লা পাচারকাণ্ডেও একই ছবি দেখা গিয়েছে তদন্তের গতিপথে। দু’টি ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করছে ইডি। ইতিমধ্যে অনুব্রত মণ্ডলের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন বিপুল সম্পত্তির ব্যাখ্যা মেলেনি তদন্তে। সিবিআই জেরাতেও সম্পূর্ণ অসযযোগিতার অভিযোগ রয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে। ইডি’র দাবি, অনুব্রত মণ্ডলের বিপুল টাকা বিদেশে খেটেছে শুধু নয়, ঘুরপথে এদেশের একাধিক রাজ্যে বিনিয়োগ হয়েছে। সেই মানি রুটই জানতে চাইছে তদন্তকারী সংস্থা। 
আর সেই সূত্রেই সামনে এসেছে নির্দিষ্ট একটি লটারি সংস্থার প্রসঙ্গ। ইতিমধ্যে সেই লটারি সংস্থার তরফে তৃণমূলকে নির্বাচনী বণ্ডে ১৫০ কোটি অনুদান দেওয়ার খবর সামনে এসেছে। ২০২১’র বিধানসভা ভোটেই এই টাকা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে তৃণমূলকে দেওয়া হয়েছিল। তারপরেই ২০২২ সালে এই সংস্থারই ১ কোটি টাকার লটারির পুরস্কার পেয়ে যান অনুব্রত মণ্ডল। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর আয়কর দপ্তর প্রায় ৭০ কোটি টাকা নগদ বাজেয়াপ্ত করেছিল। হাওলার মাধ্যমে সৌদি আরবের ব্যাঙ্ক ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে টাকা পাচার করা হচ্ছিল। আয়কর দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছিল, চেন্নাইয়ের বাসিন্দা এম নাগারাজন এই সংস্থার অন্যতম কর্ণধার। দক্ষিণ কলকাতাতেই ছিলেন দীর্ঘ দিন। ‘কিং অব লটারি’ নামে পরিচিত স্যান্টিয়াগো মার্টিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেই পরিচিত তিনি। এই রাজ্যে ২০১৫ সালের পরে ওই লটারি সংস্থার কারবার থমকে গিয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে তৃণমূল ফের ক্ষমতায় আসার পরে রমরমা বাড়ে। দু’টি ঘটনার যোগসূত্রও এবার জানতে চাইছে তদন্তকারী সংস্থা।

Comments :0

Login to leave a comment