Cha sundari

শ্রমিক প্রত্যাখানে বাতিল করতে হলো ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্প

রাজ্য

চা শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রবলভাবে প্রত্যাখাত হয়ে শেষ পর্যন্ত ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্প বন্ধ করছে রাজ্য সরকার। 
বুধবার রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠক থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ১২ বছরে এরাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা ও তাঁর দেওয়া নামে প্রকল্পের ছড়াছড়ি। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, এবারই প্রথম রাজ্যের কোনও প্রকল্প সরকার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল। এখন থেকে জমির পাট্টার সঙ্গে রাজ্য সরকার ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বাড়ি তৈরির জন্য অনুদান দেবে। 
জমির অধিকার নিয়ে চা বাগান শ্রমিকদের আন্দোলনের সামনেই রাজ্যের এই পিছু হটা। চা সুন্দরী প্রকল্পের নামে জমি থেকে বাগান শ্রমিকদের উৎখাত করে রাজ্য বাড়তি জমি দখল করার মতলবও পরাস্ত করল বাগান শ্রমিকরা। 
চা সুন্দরী প্রকল্প ঘোষণা হয়েছিল গত বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য বাজেটে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়িত সময় থেকেই চা বাগানের ট্রেড ইউনিয়ন চা সুন্দরীর ঘর কে বয়কটের ডাক দেয়। আসলে শতাধিক বছর ধরে চা বাগান শ্রমিকদের বসবাসের জমি থেকে উৎখাত করে নদীর ধারে, জঙ্গের কিনারায় ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাগান শ্রমিকরা। গত দু’বছরে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করেও রাজ্য সরকার বুঝে যায়, চা বাগান শ্রমিকদের চা সুন্দরী প্রকল্পের অংশীদার করার কোনো সুযোগ নেই। একইসঙ্গে গত দু বছরে চা বাগানে জোরদার হয়েছে জমির অধিকার আন্দোলন। ফলে চা শ্রমিকদের নাছোড়বান্দা মনোভাব টের পেয়ে পিছু হটতে বাধ্য হলো রাজ্য সরকার। বাগিচা শ্রমিক আন্দোলনের নেতা জিয়াউল আলম জানিয়েছেন, ‘‘নিজদের বন্ধনমুক্ত করার জন্য দীর্ঘ লড়াই করে জমির অধিকার ফিরে পেতে রাজ্য সরকারকে মাথা নত করাতে বাধ্য করালো চা শ্রমিকরা। রাজ্যের যে প্রান্তে যতটা জমি যে যেখানে  বসবাস করছে তার সেই জমিতে তারই অধিকার। এই দাবির লড়াই এবার সোচ্চার হবে।’’ 
মন্ত্রীসভার বৈঠকের পর এদিন সাংবাদিকদের কাছে এসেছিলেন রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস ভুঞ্যা। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এতদিন চা সুন্দরী প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে শ্রমিকদের তুলে দেওয়া হতো। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জমির পাট্টা দেওয়া হবে। তার সঙ্গে পাট্টা প্রাপক চা শ্রমিকদের পাট্টার সঙ্গে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে সাহায্য করা হবে।’’ তবে টাকা একসঙ্গে না দিয়ে বাড়ি তৈরির বিভিন্ন পর্যায়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য মন্ত্রীসভা। তাহলে সরকারের চা সুন্দরী প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী? রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এখন চা সুন্দরী যে প্রকল্পগুলিতে চা বাগানে বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। সেই কাজটুকু হবে। তারপর আর চা সুন্দরী প্রকল্পের আর নতুন কোনো বাড়ি করার পথ থেকে সরে আসছে রাজ্য সরকার।
চা সুন্দরী প্রকল্প থেকে সরকার যে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ১০ ডিসেম্বর আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ড ময়দানের সরকারি সভাতেই মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘‘আমরা ১ হাজার চা সুন্দরী করে দিয়েছি। আমি ভাবছি, চা সুন্দরী না দিয়ে জমির পাট্টা যখন দিচ্ছি, তখন সেই পাট্টার সঙ্গে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে দেব।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সেদিনের ভাবনা থেকেই বোঝা যাচ্ছিল রাজ্য সরকার চা সুন্দরী প্রকল্প থেকে সরে আসছে।
আসলে মুখ্যমন্ত্রীকে এমন ভাবতে বাধ্য করেছেন চা শ্রমিক সমাজ। গত ২০২১ বিধাসনসভা ভোটের আগে রাজ্য বাজেটে প্রথমবার চা বাগান শ্রমিকদের জন্য বাড়ি তৈরির প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কাজের কাজ কিছু হয়নি। বরং চা বাগান শ্রমিকদের মধ্যে চা সুন্দরী প্রকল্পের বাড়ি নিয়ে কোনও উৎসাহ ছিল না। চা বাগান আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্য, ‘‘আসলে যে সব বাগান মালিকরা দুর্বল, সরকারের কাছে জমির খাজনার টাকা দিতে পারেনি, অন্যান্য কর দেওয়ার ঘাটতি আছে। সরকার সেইসব দুর্বল মালিকদের বেছে চেষ্টা করেছিল চা সুন্দরীর ঘর তৈরি করতে। আসলে যে জমিতে শতাধিক বছর ধরে বসবাস সেখান থেকে উচ্ছেদ করে চা বাগানের জমিকে উদ্বৃত্ত করতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তা সফল হয়নি।’’ 
চা সুন্দরী প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের পাশপাশি রাজ্যে ভূমি সংস্কার দপ্তরের জন্য ৪২৭ জন চুক্তিভিত্তিতে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 
এতিন জেলা পরিষদে কর্মরত বিভিন্ন স্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের রাজ্যের অন্যত্র বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীসভার বৈঠকে এদিন রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্তদের রাজ্য সরকারি হেলথ স্কিমের আওতায় আনার সিদ্ধান্তে অনুমোদিত হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment