২২ নভেম্বর - মালদা, বল ভেবে খেলতে গিয়ে বোমা বিস্ফোরণে আহত দুই শিশু। আশিকুল ইসলাম ( ৯) ও আব্দুল মমিন ( ৫) খুড়তুতো দুই ভাই বাড়ির পাশে ইট ভাটার কাছে খেলা করছিল। সেখানে তারা বলের মত কিছু দেখতে পায়। হাতে তুলে নিয়ে খেলতে খেলতে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়িতে তখন কেউ ছিল না। তারা তাদের ঠাকুরমাকে সেটি দেয়। কিছু বুঝতে না পেরে তাদের শিশুদের ঠাকুরমা সেটিকে বাইরে ফেলে দিতে বলে। আশিকুল বাড়ির বাইরে ছুঁড়ে ফেলতেই প্রচন্ড শব্দে বাড়ির বারান্দায় বোমাটি ফেটে যায়। বিস্ফোরণ দুই শিশুই আহত হয়েছে।
তাজা বোমা মিলছে যেখান সেখানে। মজুত বোমায় বিস্ফোরণও হচ্ছে। পরপর ঘটনায় শিশুদের মৃত্যুরও খবর মিলছে নিয়মিত। কতটা উদ্বিগ্ন প্রশাসন বা সরকার? পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে ব্যান্ডেল। একেবারে স্কুলের মাঠে মিলল বালতিতে রাখা একাধিক তাজা বোমা। স্কুল ছুটি ছিল আজ, না হলে? ফের প্রায় অবধারিত ছিল শিশুমৃত্যু।
এমনই এ রাজ্য এখন, বোমার গুদাম যেন। পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসছে, গণতন্ত্রের বদলে চলছে জবরদখলের প্রস্তুতি। মিনাখাঁর মতো আর পাঁচ জায়গায় বোমা ফেটেছে তৃণমূলের কর্মী অথবা নেতার বাড়িতে। প্রশ্ন উঠছে বোমা উদ্ধারে কতটা সতর্ক পুলিশ, কতটাই বা কড়াকড়ি? দুষ্কৃতীরা কতটা বেপরোয়া হলে স্কুলের খেলার মাঠে রেখে আসতে পারে বোমা।
গত মাস থেকে কোথায় মিলেছে বোমা, কোথায় ফেটেছে আর কোথায় শিশুরা ঢলে পড়েছে মৃত্যুর কোলে, রইল সংক্ষিপ্ত তালিকা।
১৬ নভেম্বর — মিনাখাঁ, কেশপুর। মিনাখাঁয় মৃত ১ শিশু। আহত ২ শিশু।
১ নভেম্বর — মঙ্গলবার দুপুরে আচমকা ফেটে যায় বীরভূমের পাইকর থানার পঞ্চহর গ্রামে শেখ ইসরাইল খানের বাড়িতে।
গ্রামের মানুষের কথায়, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের মনোনয়ন আটকে ‘জেতা’ এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের ডানহাত হিসাবে পরিচিত শেখ ইসরাইল খান। তাঁর ঘরেই মজুত ছিল বোমা। সেই বোমা ফেটেই বিপত্তি। বোমার আঘাতে জখম হয়েছেন তাঁরই মেয়ে। তিনিও তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। শুধু বোমা ফাটাই নয়, বাড়ির পাশ থেকে মজুত বোমাও উদ্ধার হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মজুত করে রাখা আরও বোমার হদিশ পেয়েছে পুলিশ।
২৮ অক্টোবর— দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে নরেন্দ্রপুরের আটঘরায় জখম হয়েছে ৫ জন নাবালক। সকলের হাতে, পায়ে বোমার স্প্লিন্টারের ক্ষত। তাদেরকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দুপুরে। নরেন্দ্রপুর থানার খেয়াদহ ২অঞ্চলের শান্তি পার্ক আটঘরা এলাকায়। তবে ঘটনাস্থল দাসপাড়া নামেই সমধিক পরিচিত। পুলিশ এই ঘটনায় তল্লাশি চালিয়ে অভিযুক্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১টি মোটরবাইক ও ১টি ড্রাম উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে।
২৫অক্টোবর— জগদ্দলে রেললাইনে পড়ে থাকা বোমা ফেটে এক চটকল শ্রমিকের শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম নিখিল পাশোয়ান (৭)। এই ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছে শিশুটির খেলার সঙ্গী মহেশ সাউ (১১)। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকালে।
১৫ অক্টোবর— তৃণমূলের পার্টি অফিস থেকে শনিবার তাজা বোমা উদ্ধার করল পুলিশ। তৃণমূলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছে অপর গোষ্ঠীর নেতারা। তৃণমূল নেতার নির্মীয়মান বাড়িতে খোলা হয়েছিল দলীয় কার্যালয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেখান থেকেই ব্যাগে ভরা ৯টি তাজা বোমা উদ্ধার করে। ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার অমরপুর গ্রামে।
৩০ অক্টোবর— বোমা বন্দুকে উত্তপ্ত হয় নৈহাটি বিধানসভা এলাকার শিবদাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কন্দপুকুর গ্রাম। তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলে তৃণমূলের হাতেই খুন হলেন তৃণমূলের নেতা। নৈহাটি বিধানসভা এলাকার শিবদাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কন্দপুকুর গ্রামে শনিবার রাত সাড়ে আটটার সময় চলে গোলাগুলি। খুন হয় তৃণমূলের নেতা জাকির হোসেন। অভিযুক্ত হাসিবুল রহমান তৃণমূলেরই কর্মী। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে গায়ের জোরেই এই শিবদাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল দখল করেছিল।
১৭ আগস্ট— বালি খাদান ও এলাকা দখলের লড়াইয়ে তৃণমূলের এক অঞ্চল সভাপতি গুরুতর জখম হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অভিযোগ রায়না থানার হিজলনা অঞ্চলের শাসক দলের বিধায়ক ও তার বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বালির খাদ ও এলাকা দখল নিয়ে চরম গোষ্ঠীসংঘর্ষ হয়। অভিযোগ বিধায়ক গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীরা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি লালো মল্লিকের দুটো পা ক্ষতবিক্ষত করে দেয় বোল্ডার দিয়ে মেরে। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত লালোকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তোলাবাজ তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে এলাকা অশান্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ।
৮ জুলাই— ফের সেই বারাকপুর শিল্পাঞ্চল। পরপর দুবার গোলাগুলি চলা, খুনের ঘটনার পরে এবার তৃণমূল কর্মীর গুদামঘরে রাখা বোমা থেকে বিস্ফোরণ। এ যেন বারুদের স্তুপে রয়েছে এই শিল্পাঞ্চল। কাঁকিনাড়ায় তৃণমূলের কর্মী কালিমুদ্দিনের গুদামঘরে মজুত রাখা বোমা বিস্ফোরণে দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। দুজনকেই ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়াও বিস্ফোরণে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
Comments :0