Deadly Attack

বার্মায় সেনা হামলায় হত শতাধিক

আন্তর্জাতিক

Deadly Attack


পাজিগাই গ্রামের আকাশে বাতাসে অসহায়ের আর্তনাদ। বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে দেহাংশ, বিধ্বস্ত বাড়ি, পোড়া বাইক। টিএনটি’র ধামাকায় খাক মাঠের পাকা ফসল।
‘‘কান ঝালাপালা করছে, চারপাশে পোড়া মাংসের গন্ধ,’’ বলেন সান কাই (৫৬)। বিমান হামলায় শারীরিক দিক থেকে অক্ষত হলেও, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত।
মঙ্গলবার ভুলবে না সাগাইংয়ের জনগণ। এদিন সেনার এমআই-৩৫ অ্যাসল্ট হেলিকপ্টার থেকে সাগাইংয়ের কান্তবুল টাউশিপের পাজিগাই গ্রামে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করা হয়। বর্বরোচিত আগ্রাসনে নিহত শতাধিক। মৃতদের তালিকায় ২০-৩০টি শিশুই। 
গ্রামের প্রান্তরে ডাই করা আধ-পোড়া লাশ। শবের ভিড়ে গর্ভবতী থেকে বৃদ্ধ, বৃদ্ধা। খানিক তফাতেই হাড়হিমকরা ছবি। প্লাস্টিকের চাদরে জমা করা কুড়িয়ে আনা দেহাংশ।

‘‘আমরা এপর্যন্ত ৮০টি দেহ উদ্ধার করেছি,’’ জানান ফ্যানি বুক (১৯)। গ্রামের যুবতী বলেন, বহু মানুষ আতঙ্কে পালিয়ে গেছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে বার্মার উত্তর-পশ্চিমের সাগাইংয়ে সেনার বিমান হামলার নিন্দা করা হয়েছে।
২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানে দেশের টালমাটাল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন হয়। অবশ্য জুন্টা সরকারের দেশজুড়ে দাপটে ইতস্তত বাধা হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিদ্রোহীরা। সাগাইং মাটিতে শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে সেনাকে। মঙ্গলবার সফল প্রতিরোধের বার্ষিকীতে পাজিগাই গ্রামে বিদ্রোহীদের অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানেই সেনা বিমান হামলা চালায়।

‘‘কিছু দেহ জঙলা পোশাকের ছেড়া-পোড়া অংশ দেখেছি, তবে অধিকাংশই সাধারণ লোকজন,’’ জানান জুন্টা বিরোধী জাতীয় ঐক্যের সরকারের মুখপাত্র। 
বার্মায় অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখলের কিছু দিন পর থেকেই বিদ্রোহীদের ওপরে সেনার বিমান আক্রমণ বেড়েছে। ‘‘হ্যাঁ, আমরা বিমান হামলা চালিয়েছি,’’ কোনও রকমের রাখঢাক না করেই টেলিভিশনে জানান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল জঁ মিন তুন। সেনার ওই আধিকারিক আরও বলেন, পাজিগাই গ্রামে বিদ্রোহীদের নতুন দপ্তর সূচনার অনুষ্ঠানেই বোমাবর্ষণ করা হয়।

বিগত কয়েক মাসে সাগাইংয়ে সেনাকে শক্ত বাধার মুখে ফেলেছে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফএস)। বার্মার বিভিন্ন অংশেই পিডিএফএস’র চোরাগোপ্তা হামলায় ব্যা তিব্যস্ত সেনা। ইতিমধ্যে বিদ্রোহীরা সেনার বেশ কিছু কনভয়ে বড়সড় আক্রমণ করেছে। তাই জুন্টা সরকার বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা করছে। বিমান হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, হাসপাতাল কোনও কিছুই। কোথাও আস্ত একটা গ্রামই বোমা ফেলে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জুন্টা সরকারের লক্ষ্য, এভাবেই বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের তাগিদ ভোঁতা করে দেওয়া।

সোশাল মিডিয়াতে পাজিগাই গণহত্যার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। বার্মার সেনার পাশবিকতায় হতবাক তামাম বিশ্ব। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, বর্মায় জুন্টা সরকারের জুলুমে হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়া ১৪ লক্ষের বেশি। বর্তমানে জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন মানবিক ত্রাণ সাহায্যের।   

Comments :0

Login to leave a comment