Anti Modi poster

‘মোদী হটাও’ পোস্টার পড়তেই দিল্লি পুলিশ ‘পোস্টার হটাও’ অভিযানে

জাতীয়

 ‘দেওয়া হবে না, কথা বলতে’। মোদী শাসনে ভূ-ভারতে এখন এটাই প্রশাসনিক স্লোগান। সেখানে তো আর ‘মোদী হটাও’ স্লোগান চলতে পারে না। তাই রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উৎখাত চেয়ে পোস্টার পড়তেই দিল্লি পুলিশ ৬জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এফআইআর দায়ের করেছে ১০০টা। শহরের দেওয়াল আর বিদ্যুতের পোল থেকে ‘মোদী হটাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগানধারী ২হাজারের বেশি পোস্টারও খুলে ফেলার দায়িত্ব পালন করেছে দিল্লি পুলিশ। রাজধানীতে যদিও এমন ঘটনা নতুন নয়। দু’বছর আগে কোভিড টিকাকরণের সময় মোদী ব্যর্থতা তুলে ধরা পোস্টার মারায় দিল্লি পুলিশ ৩০জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। এফআইআর হয়েছিল ২৫টি। 
লকডাউনে শ্রমিকের দুর্দশা দেখিয়ে কোপের মুখে পড়তে হচ্ছে চিত্র পরিচালককে, ‘হিন্দুত্ব’ নিয়ে টুইট করায় গ্রেপ্তার হতে হচ্ছে কিংবা কাশ্মীরের প্রকৃত ছবি তুলে ধরায় ইউএপিএ দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সাংবাদিককে— এসব তো আখছারই ঘটে চলেছে ‘অম্রুতকালে’। সেই বিরোধী স্বর দমিয়ে দিতে ‘কণ্ঠরোধ অভিযানের’ অংশ হিসাবে দিল্লি জুড়ে পোস্টার ছিঁড়তে আর সরাতে নেমে পড়ে পুলিশ। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার (নর্দান জোনের আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বপ্রাপ্ত) দীপেন্দ্র পাঠক জানিয়েছেন, অন্তত ২হাজার পোস্টার সরানো হয়েছে। আরআইপি এস্টেটে একটা ভ্যান আটকে আরও দু’হাজার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেসময় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুরুতে একশো এফআইআর’র আস্ফালন করা হলেও বিকালে যদিও এফআইআর’র সংখ্যা শুধরে নিয়ে ৪৯টি বলা হয়েছে। সেই এফআইআরগুলি হয়েছে মূলত দিল্লি সম্পত্তি বিকৃতকরণ আইন এবং প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অব বুক অ্যাক্টের অধীনে। পুলিশ জানিয়েছে, শহরের মন্দির মার্গ, দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গ, অরুণা আসিফ আলি মার্গ, সীমাপুরী, নিউ উসমানপুর, খাজুরি খাস, অশোক বিহার, মডেল টাউন ও ভারত নগরে লাগানো পোস্টার খুলে ফেলা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, এমন পোস্টার ছাপতে দু’টো প্রিন্টিং প্রেসকে বরাত দেওয়া হয়েছিল। সেই কোম্পানি দু’টির শ্রমিকরাই সোমবার মাঝরাত থেকে সোমবার সকালের মধ্যে শহরজুড়ে পোস্টারগুলি লাগিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, পোস্টারে প্রিন্টিং প্রেসের নাম না থাকায় মালিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 
স্পেশাল কমিশনার পাঠকের দাবি, আইপি এস্টেটে ধৃত ব্যক্তিকে জেরা করে জানা যায় তাঁর মালিক তাঁকে ওই পোস্টারগুলো আম আদমি পার্টির সদর দপ্তরে পৌঁছে দিতে বলেছিল। এবং তিনি একদিন আগেই ওই পোস্টার ডেলিভারি করছিলেন। পুলিশের দাবি, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে আপের কোনও কর্মী এর সঙ্গে যুক্ত কিনা।
আপের তরফে যদিও এই পোস্টার কাদের, তা নিয়ে কোনো জবাব মেলেনি। তবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে এদিন এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘ওরা একটা পোস্টার নিয়ে এফআইআর করেছে। মোদী এত আতঙ্কিত কেন? এটা তো একটা সাধারণ পোস্টার। গণতন্ত্রে যে কেউ এটা লাগাতে পারে। তাবলে এমন একটা ভীত প্রধানমন্ত্রী, এমন একটা ভীত প্রধানমন্ত্রী, এমন সন্ত্রস্ত প্রধানমন্ত্রী!’ কটাক্ষ করে কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘আমার মনে হয় উনি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠেন একথা ভাবতে ভাবতে, আজ কাকে জেলে পোরা যায়।’ 
প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করতে নেমে পড়েছে আপ’ও। জোর সমালোচনা শুরু হয়েছে সোসাল মিডিয়াতেও। জনৈক ওয়াই সতীশ রেড্ডি পোস্টারের ছবি দিয়ে টুইট করেছেন, ‘আমিও গ্রেপ্তার হতে তৈরি আছি।’ আপ তাদের টুইটার হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, ‘নিজেকে ৫৬ইঞ্চির ছাতিওয়ালা বলে দাবি করা ৫৬ইঞ্চির একটা পোস্টারেই ভয় পেয়ে গেল।’ ‘#মোদী হটাও, দেশ বাঁচাও’ হ্যাশট্যাগে করা টুইটে পরে আবার লেখা হয়েছে, ‘মোদী সরকারের তানাশাহী চরম সীমায় পৌঁছে গেছে।’ দিল্লি এক মন্ত্রী গোপাল রাই সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী ১ হাজারটা এফআইআর দায়ের করাতে পারেন। কিন্তু কাল থেকে গোটা দেশে একটাই স্লোগান চলবে— মোদী হটাও, দেশ বাঁচাও।’ তির্যক কার্টুন সম্বলিত এক টুইটে আবার লেখা হয়েছে, ‘পোস্টার হটাও, মোদী বাঁচাও।’

Comments :0

Login to leave a comment