প্রতীম দে
এ দুর্নীতিতে ক্ষোভ নেমেছে রাস্তায়। সারা বাংলা শুনেছে শ্লোগান ‘চোর তাড়াও গ্রাম জাগাও’। পঞ্চায়েতে, ব্লকের দপ্তরে ভিড় বেড়েছে না-পাওয়া মানুষের। তবু তৃণমূল কংগ্রেস ভ্রূক্ষেপহীন। লোক ঠকিয়ে নিজেদের নামে পাকা বাড়ির টাকা করিয়ে নিয়েছে যারা, তাদেরই প্রার্থী করেছে পঞ্চায়েত ভোটে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ ব্লকে রয়েছে এমন একাধিক উদাহরণ।
যেমন চম্পা বৈরাগী। নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। তৃণমূলের প্রার্থী। বড় পাকা দোতলা বাড়ি রয়েছে তাঁর। তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি করার টাকা পেয়েছেন। আবার আমফানে বাড়ি মেরামতির জন্য যে ২০ হাজার টাকা রাজ্য সরকার দিয়েছিল সেই টাকাও তিনি পেয়েছেন।
এমনই অভিযোগ রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই তৃণমুল প্রার্থী নীলিমা দাস এবং দেবকুমার দাসের নাম রয়েছে আবাসের দুর্নীতি তালিকায়। দেবকুমার দাসের তিন তলা মোজায়েক করা বাড়ি। তিনি আমফানে ক্ষতিপুরণ বাবদ পেয়েছে ২০ হাজার টাকা। আবার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকাও।
সিপিআই(এম) নেতা মিত্যেন্দু ভুঁঞা বলেন, ‘‘ভুয়ো জব কার্ড দেখিয়ে তৃণমূল আবাস যোজনার টাকা চুরি করেছে। আবাস যোজনায় বাড়ি করার জন্য তো ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ছাড়াও বাথরুম এবং রান্নাঘর করার জন্য আরও ২২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এটা অনেকে জানেন না। তৃণমূল যেমন ঘর করার টাকা চুরি করেছে তেমন ভাবে এই টাকাও লোপাট করে দিয়েছে। হিসাব করে দেখতে গেলে কয়েক লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে।’’
সরকারি প্রকল্প অনুযায়ী মতি দাসের পাকা বাড়ি হওয়ার কথা, বাথরুম সহ। কিন্তু মতি দাস সেই বাড়ি পাননি। তবু তাঁর বাড়ির গায়ে এখনও লেখা রয়েছে বরাদ্দের অঙ্ক। বরাদ্দ হয়েছে ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৩৪ টাকা।
মতি দাস বলেন, ‘‘একদিন পঞ্চায়েতের লোকেরা এসে আমার থেকে টিপ ছাপ নিয়ে গেলো বললো বাড়ি করে দেবে। কিন্তু কই কিছুই তো হলো না।’’ ঝড় তো দুরের কথা এখন বর্ষার জল থেকে কী ভাবে বাঁচবেন তাই ভাবছেন সত্তর বছরের এই বৃদ্ধ।
ওই একই স্বামী বিবেকানন্দ পঞ্চায়েত পোস্টার সেঁটেছে শিখা দাসের বাড়িতেও। সেখানেও কোন কাজ হয়নি।
এমন মারাত্মক গরমিলেরই হিসাব চাইছে মানুষ।
গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি ছিল যে তারা গ্রামে গ্রামে পাকা রাস্তা করবে। রাস্তা হয়েছে। কিন্তু তা এক বছরও টেকেনি। কয়েক মাসের মধ্যে উঠে গিয়েছে পিচের আস্তরণ। বর্ষায় আরও খারাপ হয়েছে রাস্তার অবস্থা। যেখানে এক কিলোমিটার রাস্তা হওয়ার কথা ছিল সেখানে হয়েছে ৭০০ মিটার। আট মিটার পিচের আস্তরণের জায়গায় ৪ মিটার দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ গ্রামবাসীদের, বিডিও বা পঞ্চায়েতে গেলে তখন তাদের কোন উত্তর দেওয়া হয়নি। হিসাব দেখতে চাইলে তা দেখানো হয়নি।
যেমন ধরুন বুধাখালি। নামখানার উকিলের মোড় থেকে বুধাখালি প্রায় তিন থেকে চার কিলোমিটার রাস্তা। কোথাও পিচ রয়েছে তো কোথাও নেই। নিশিকান্ত কয়ালের কথায়, ‘‘রাস্তা যখন খারাপ হচ্ছে তখন আমরা পঞ্চায়েতে যাই। গিয়ে বলি কি কাজ হয়েছে তার হিসাব দিতে আমাদের থখন তৃণমূলের লোকেরা বলে কি করবি হিসাব নিয়ে। ওরা কিছু দেখায়নি। বিডিও কিছু করেননি।’’ গ্রাম সংসদের সভাতেও কোন তালিকা তৃণমূল আজ পর্যন্ত দেখায়নি বলেই জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
উস্থি বাজারে মুদি দোকান পিন্টু মণ্ডলের (নাম পরিবর্তিত)। দোকানের তাকে টেট পরীক্ষার বই। কথা হতেই জানালেন, ‘‘আমি টেট পাশ করি ২০১৪ সালে। তখন তৃণমূলের লোকেরা আমার কাছে ১১ লক্ষ টাকা ঘুষ চায়। আমি তা দিতে রাজি হইনি। তাই আমার চাকরিও হয়নি। এবার যদি পরীক্ষা হয় আবার বসবো। কারণ এটা আমার শেষ সুযোগ।’’
একটু থেমে তিনি বলেন, ‘‘কী ভাবছেন, গ্রামের মানুষরা এই বিষয় কিছু জানে না। ভুল ভাবছেন। আমরা সবাই সব কিছু জানি। যদি ভোট দিতে পারি, যদি ভোট হয়, দেখবেন ফলাফল কী হয়।’’
Comments :0