Basirhat

বসিরহাটে গুলিবিদ্ধ পুলিশ কর্মী

রাজ্য

তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে গুলিবিদ্ধ পুলিশ কনস্টেবল। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে এই ঘটনা ঘটেছে। 
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর বিবাদে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে এবং আসল অপরাধীদের আড়াল করতে আসরে নামে তৃণমূল নেতারা। তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য শাহানুর মণ্ডলের অনুগামীরা তৃণমূলের অপর গোষ্ঠীর শাস্তির দাবি তুলে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে টাকী রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। ঠিক তখনই ধৃত তৃণমূল কর্মীদের কেন গ্রেফতার করা হলো এবং কেন মূল ষড়যন্ত্রকারী ও তার ছেলেকে গ্রেফতার করা হবে না-এই প্রশ্নে আর একদল তৃণমূল কর্মী বসিরহাট থানায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এর পরেই বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। 
এরই মাঝে বিক্ষোভকারীদের হাতে আক্রান্ত হন প্রভাত সর্দার নামে এক পুলিশ কর্মী। বিক্ষোভকারীদের হটাতে পুলিশ বাধ্য হয় লাঠিচার্জ করতে। কয়েকজনকে আটক করা হয়। ইটিন্ডা রোডে ব্যহত হয় যান চলাচল। অবরুধদ্ধ হয়ে পড়ে গোটা বসিরহাট থানা সহ ইটিন্ডা রোড। বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেওয়ার পর স্বাভাবিক হয় যান চলাচল। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় বসিরহাট থানাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর গোটা ঘটনা সম্পর্কে বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার জোবি থমাস কে বলেন, একজন পুলিশ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেছে। এছাড়া একটি অভিযোগও জমা পড়েছে। সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রচুর কার্তুজ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তদন্ত চলছে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


বসিরহাট -১ ব্লকের নিমদাঁড়িয়া কোদালিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শাঁকচুড়া বাজারে সোমবার রাতে তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব মেটাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন পুলিশ কনস্টেবল। এই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা সিরাজুল বেশে ও তার ছেলের ওহাইদুল্লা বেশে এবং ভাই আরিজুল বেশে সহ মোট ৪১জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মঙ্গলবার বসিরহাট মহকুমা আদালতের এসিজেএম ইন্দ্রানী গুপ্তের এজলাসে তোলা হয়।  সওয়াল জবাব শোনার পর বিচারক ধৃতদের মধ্যে ৪ জনকে ৬ দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন এবং বাকি ৩৭জনকে ১৪দিনের জেল হেপাজতে পাঠান। সোমবার রাত থেকে তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ গোলযোগে আতঙ্কিত গোটা এলাকা। পঞ্চায়েত নির্বাচন আর কয়েক মাস বাকি। এর মধ্যে ঘটে গেল পরপর দু’টি ঘটনা। এক, মিনাখাঁয় কিশোরীর মৃত্যু এবং দুই, বসিরহাটে গুলিবিদ্ধ পুলিশ। দু’টি ঘটনায় অভিযোগের আঙ্গুল সেই তৃণমূলের দিকেই। 
এই প্রসঙ্গে,  সিপিআই(এম) উত্তর ২৪পরগনা জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, শুধু বসিরহাট নয়, গোটা রাজ্য বারুদের স্তুপের উপরে। এর দায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে অপসারণ না করলে রাজ্যে শান্তি ফিরবে না। এই অরাজক পরিস্থিতি থেকে মানুষকে রক্ষা করতে মানুষকে সাথে মুখ্যমন্ত্রীকে অপসারণ করতে এবং সাধারণ মানুষের জীবনজীবিকা ও তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাস্তায় নেমে আন্দোলন লড়াই সংগ্রাম জারি রেখেছি, আগামীদিনেও তা থাকবে।


উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য ও এক সময়ের কুখ্যাত গোরু পাচারকারী তৃণমূলের শাহানুর মণ্ডল ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা সিরাজুল বেশের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। গত রবিবার মাটিয়া থানার খোলাপোতায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে দলের সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে বাদানুবাদ হয় বসিরহাট-১নং ব্লকের তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর। কে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি হবে তা নিয়েই নাকি গন্ডেগোল। পাল্লা ভারী ছিল সিরাজুল বেশের দিকে। এতে ঘোর আপত্তি জানায় শাহানুর মণ্ডল। সাময়িক দ্বন্দ্ব মিটে গেলেও তার রেশ চড়তে থাকে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সোমবার রাতে। জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল জামান বুলবুল বলেন, সিরাজুল বেশে এবং তার ছেলে ওহাইদুল্লা ও ভাই আরিজুল আমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। সেই সময় পুলিশ কনস্টেবল প্রভাত সর্দার আমাকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর পিঠে গুলি লাগে। 
যদিও এদিন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে এই অভিযোগ নস্যাৎ করে বসিরহাট -১নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আইনজীবী নজরুল হক জানান, সোমবার রাতে সিরাজুল আমাকে ফোন করে এবং বলে শাঁকচুড়া বাজারে তার অফিসে হামলা চালাচ্ছে তৃণমূলের অপর এক পক্ষ। পুলিশকে বলা হলে পুলিশ সেখানে যায় এবং এক পুলিশ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। কে গুলি চালিয়েছে তা পুলিশই বলতে পারবে। কারণ তখন পুলিশ ওখানে ছিল। যা কিছু ঘটেছে তা পুলিশের সামনেই ঘটেছে। 


কিন্তু স্থানীয় সূত্র জানা যাচ্ছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একপক্ষ অন্য এক পক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তৃণমূলের এই অভ্যন্তরীণ গোলযোগ মেটাতে গিয়ে তৃণমূল নেতার ছোঁড়া গুলিতে বসিরহাট থানার পুলিশ কনস্টেবল প্রভাত সর্দার গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে প্রথমে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। স্থানীয়দের দাবি, পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তারা নির্দোষ। অভিযোগ, গুলি চালিয়েছে শাহানুর মণ্ডলের ছেলে।
 

Comments :0

Login to leave a comment