দীপশুভ্র সান্যাল
কৃষ্ণ কল্যাণী বা অনুব্রত মন্ডল বা জীবনকৃষ্ণ সাহার কী হবে সেটা বড় প্রশ্ন নয়। বড় প্রশ্ন হলো রাজ্যটার কী হবে। রাজ্যকে বাঁচাতে হবে। তার জন্যই লড়াই করছে বামপন্থীরা।
বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়িতে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে এই মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘চোর দুর্নীতিবাজদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে এখন বাংলা।’’ এদিন জলপাইগুড়িতে সিপিআই(এম) জেলা কমিটির ডাকে চলছে কর্মীসভা।
এদিন কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের একাধিক জায়গায় কেন্দ্রীয় সংস্থা তল্লাশি চালিয়েছে। বেহালায় তৃণমূলের একাধিক নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। উত্তরবঙ্গে রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর ‘কর্পোরেট অফিসে’ তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর দপ্তর। বিজেপি এবং তৃণমূল সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে নজর কাড়ার প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে। কৃষ্ণ কল্যাণী বিজেপি’র হয়ে বিধানসভা ভোটে জয়ী হওয়ার কয়েকমাস পর তৃণমূলে যোগ দিলেও, মুকুল রায়ের মতো, বিধায়ক পদ ছাড়েননি। উলটে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদে আসীন হয়েছেন।
সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি’তে গেলে রাজ্যের পুলিশ নাটক করবে আর কেন্দ্রের ইডি, সিআইডি চুপ করে যাবে। আবার তৃণমূলে গেলে রাজ্যের পুলিশ চোরদের রক্ষা করে যাবে আর ইডি, সিআইডি তৎপর হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য এখন চোর-দুর্নীতিবাজদের স্বর্গরাজ্য।’’
রাজ্যে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্তে নেমেছে আদালতের নির্দেশে। যোগ্য হয়েও বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট সেই নির্দেশ দেয়। কারও শাস্তি যদিও এখনও হয়নি। অতীতে সারদা-নারদ কেলেঙ্কারিতেও শাস্তি হয়নি কারও। নিয়োগ দুর্নীতিতে ঢিলেমির জন্য আদালতেও বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি।
রাজ্যের সঙ্কট প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘সাধারণ মা-বোন-শিশবয়স্কদের নিরাপত্তা নেই। সামাজিক সুরক্ষা নেই, বেকার ছেলেমেয়েদের কাজ নেই, কৃষকের জন্য ফসলের দাম নেই। তার সঙ্গে প্রতিদিন মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের খরচ করার সুযোগ কমে চলেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা বামপন্থীরাই লড়ে যাচ্ছি।’’
তখনই সেলিম বলেন, ‘‘কেষ্টর কী হলো, জীবনকৃষ্ণের কী হলো, কৃষ্ণ কল্যাণীর কী হলো তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে রাজ্যের কী হবে। রাজ্যটাকে বাঁচাতে হবে।’’
পঞ্চায়েত ভোট প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘এর মধ্যে এই নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। সংবাদমাধ্যমে বলা চলছিল যে ডিসেম্বর বা জানুয়ারি, বা পরীক্ষার আগে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এখন বিজেপি ও তৃণমূল মানুষের সামনে পরীক্ষা দিতে ভয় পাচ্ছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী আদালতে গিয়ে ভোট পিছানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে আদালত রাজি হয়নি। আরেকদিকে রাজ্য সরকারও টালবাহানা চালিয়ে যাচ্ছে।’’
তিনি পূর্বতন বামফ্রন্ট সরারের ভূমিকা মনে করিয়ে দেন। সেলিম বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করেছিল বামফ্রন্ট। মানুষের হাতে ক্ষমতা দিয়েছিল। ১৮ বছরে ভোটাধিকার, মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ চালু করেছিল। এখন মোদী আর দিদি মানুষের সব ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করছে।’’
বামপন্থীদের লড়াইয়ের অভিমুখ জানিয়ে সেলিম বলেছেন, ‘‘নতুন করে মানুষের রাজ ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য ভাঙতে হবে দুর্নীতি-দুষ্কৃতী রাজ। তার জন্য হিন্দু-মুসলিম, তফসিলি, রাজবংশী, উত্তর-ধক্ষি নির্বিশেষে মানুষকে এককাট্টা হতে হবে।’’
উত্তরবঙ্গে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির ‘নবজোয়ার যাত্রা’ সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়। সেলিমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আগে রাজা মৃগয়ায় বের হতেন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে। এখন সাংবাদিকদের নিয়ে মৃগয়া হচ্ছে। তবে শিকার বিশেষ মেলেনি। উত্তরবঙ্গের মানুষ গার্জিয়ান কল করেছেন। মমতা ব্যানার্জিকে মালদহে হাজির হতে হয়েছে।’’
Comments :0