POOR STATE OF INDIAN WOMEN'S FOOTBALL

দেশের জার্সি পরা পৌলমীর আর্তি, একটা চাকরি চাই

জাতীয় রাজ্য খেলা

poulami adhikary Womens football india indian football

হোমলেস বিশ্বকাপে দেশের জার্সি পড়ে খেলেছিলেন ২০১৬ সালে। তার আগে ২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব ১৬ এএফসি এশিয়া কাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বেও দেশের জার্সি পরে খেলেছেন একাধিক ম্যাচ। এছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, আইএফএ সহ একাধিক সংস্থার বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টেও খেলেছেন নিয়মিত ভাবে। কিন্তু এত কিছুর পরেও মেলেনি  ন্যূনতম পরিচিতি কিংবা সম্মান। পেট চালাতে বাধ্য হয়ে জোটাতে হয়েছে অ্যাপ নির্ভর খাবার ডেলিভারি সংস্থার কাজ। চুম্বকে এই হল পৌলমী অধিকারীর কাহিনী।

খাবার ডেলিভারি করার সূত্রেই এক ব্যক্তি পৌলমীর একটি ভিডিও করেন। সেই ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। সেই ভাইরাল ভিডিওর সূত্র ধরেই মঙ্গলবার পৌলমীর বাড়িতে হাজির হয় গণশক্তি। গণশক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে উঠে আসে এদেশের মহিলা ফুটবলের হতশ্রী পরিকাঠামোর কাহিনী। সম্প্রতি এআইএফএফ'র সভাপতি কল্যাণ চৌবে ভারতীয় ফুটবলের রোডম্যাপ তুলে ধরেছেন মিডিয়ার সামনে। সেখানে জোর দেওয়া হয়েছে ভারতের ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার বিষয়। একইসঙ্গে গ্রাসরুট স্তরে ফুটবলের বিকাশ ঘটানোরও একগুচ্ছ প্ল্যান সামনে এনেছে ফেডারেশন। প্রায় একই সময়ে ভাইরাল হওয়া পৌলমীর কাহিনী চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে ভারতীয় ফুটবলের দৈনদশাকে। যেখানে আইএসএল নামক বৃহৎ প্রদীপের তলায় রয়েছে নিখাদ কালো অন্ধকার। যেখানে মহিলা ফুটবলারদের ন্যূনতম মানুষের সম্মানটুকু দেওয়া হয় না।

পৌলমীর কথায়, আমি আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। এত বছরে যখন কিছু হয়নি, আমি ধরেই নিয়েছিলাম ফুটবল খেলা আর হবে না। অনলাইন খাবার ডেলিভার করেই আমাকে সংসার চালাতে হবে।  ভিডিওটা ভাইরাল হওয়ার পরে মিডিয়ার লোকজন এসে আমার সঙ্গে কথা বলছেন। কিন্তু ওনারা তো আমার অবস্থাটা তুলে ধরা ছাড়া অন্য কিছু করতে পারবেন না। ইন্ডিয়া রিপ্রেজেন্ট করেও আমায় খাবার ডেলিভারি করে পেটে চালাতে হচ্ছে। এটাই কি আমার প্রাপ্য ছিল? পুরুষ ফুটবলে বেঙ্গল টিমে সুযোগ পেলেই রয়েছে অগাধ পয়সা। অথচ মহিলা ফুটবলে কানা কড়ি নেই। ২০০ টাকা খরচ করতে গেলেও হাত কাঁপে।  পরিচিতি বা সম্মানের কথা ছেড়ে দিন। একজন মহিলা ফুটবলারের বুট রয়েছে কিনা বা সে ভরপেট দুবেলা খেতে পারছে কিনা সেদিকে নজর দেওয়ার কেউ নেই।

ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে কিছুটা আলোর ঝলকানি পড়তে শুরু করেছে পৌলমীর মুখে। কিন্তু পৌলমীর সাফ কথা, একটা ভিডিওর মাধ্যমে ভাইরাল তো আমি হতে চাইনি। আমি  এখনো ফুটবলটাই খেলতে চাই। তার জন্য দরকার একটা কাজের। খালি পেটে তো আর খেলা চালাতে পারবো না। সরকার,ফেডারেশন,আইএফএ'র কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আমায় একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিন, যাতে আমি খেলা চালিয়ে যেতে পারি।


সত্যিই পেটের টান বড় টান। অ্যাপ নির্ভর খাবার ডেলিভারি সংস্থার হয়ে কাজ করে পৌলমীর দৈনিক আয় কখনো ১৫০, কখনো ২০০ টাকা। উৎসবের মরশুমে সেটা বেড়ে হয় ৪০০ টাকা। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে ছোটবেলা থেকেই উঠে এসেছেন সংগ্রাম করে। বাবা গাড়ি চালান। দুমাস বয়সে মাতৃহারা পৌলোমীকে  মানুষ করেছেন তাঁর মাসি। সেই থেকে মামা বাড়িই পৌলামীর ঠিকানা। বেহালা শিবরামপুরের সেই বাড়িতেই কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। ২০২০ সালে জাতীয় দলের ট্রায়ালে যোগ দেন তিনি। এই ট্রায়াল থেকে ১২ জনকে শর্ট লিস্ট করে ফেডারেশন, এবং প্রথম ৬ জন ডাক পান জাতীয় দলে। পৌলমীর নাম ছিল এই তালিকার ৭ নম্বরে।



পৌলমীর কথায়, তারপরেই কোভিড চলে এলো। জাতীয় দলের ওয়েটিং লিস্টে এক নম্বরে নাম থাকলেও এখনো ডাক এসে পৌঁছয়নি। অগত্যা খাবার ডেলিভারি সংস্থা কাজ করার পাশাপাশি, নিয়ম করে রোজ ঘন্টাখানেক ফুটবল প্র্যাকটিস করেন পৌলমী। কিন্তু পেশাগত স্তরে ফুটবল খেলার জন্য এক ঘন্টা প্র্যাকটিস যথেষ্ট না এটা পৌলোমিও জানেন। তবুও কিছু করার নেই। কারণ পেটের টান যে বড় টান। জীবন সংগ্রামের পাশাপাশি চারুচন্দ্র কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার লড়াইও চালাচ্ছেন পৌলমী।

পৌলমীর সঙ্গে কথা বলার মাঝেই বারে বারে বেজে উঠছিল তাঁর ফোন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা ফোন করে বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলেও আইএফের তরফ থেকেও এই সময় এসেছে একাধিক ফোন। ২৪ বছরের পৌলমীর ফেডারেশনের ডি এবং সি কোচিং লাইসেন্স থাকলেও এখনই তিনি  ফুটবল কোচের জার্সি পরতে নারাজ। ফোনের ওপারে থাকা ফেডারেশন কর্তাদের কাছে তাঁর একটি মাত্র কাতর আর্জি, আমি খেলা চালিয়ে যেতে চাই। তার জন্য আমার একটা চাকরির খুব প্রয়োজন। আমার যোগ্যতা অনুযায়ী আমাকে একটি চাকরির শুধু ব্যবস্থা করে দিন।

এ প্রসঙ্গে  ফিফা এবং এএফসি'র এলিট প্যানেলভুক্ত মহিলা রেফারি কনিকা বর্মন জানিয়েছেন, মেয়েরা যতদিন খেলার মধ্যে থাকে সংস্থাগুলির তরফে ততদিন তাও তাদের খোঁজখবর নেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা খেলা বন্ধ করে দিলে কেউ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে না তুই খেলা কেন বন্ধ করলি। কোনও মেয়ে ফুটবল থেকে হারিয়ে গেলে তাঁকে হাত ধরে টেনে আনার কেউ নেই। খেলা ছাড়ার পরে আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল।  ভারতীয় ফুটবলে যতটুকু যা আলো, তা কেবল মাত্রই পুরুষ ফুটবলকে কেন্দ্র করে। বহু ক্ষেত্রে মেয়েরা বাড়ির লোকেরই সমর্থন পায় না।

Comments :0

Login to leave a comment