Bilkis Bano Case

মিলল না ছাড়, বিলকিস বানোর ধর্ষকদের ফিরতে হলো জেলেই

জাতীয়

সুপ্রিম কোর্টের চাপে আত্মসমর্পণ বিলকিস বানোর ধর্ষকদের। ধর্ষক যশবন্তভাই নাই, গোবিন্দভাই নাই, শৈলেশ ভাট, রাধেশ্যাম শাহ, বিপিন চন্দ্র যোশী, কেশরভাই ভোহানিয়া, প্রদীপ মোরধিয়া, বাকাভাঔই ভোহানিয়া, রাজুভাই সোনি, মিতেশ ভাট, রমেশ ছান্দানারা গুজরাট পঞ্চমহল জেলার গোধরা উপ-সংশোধাগারে রবিবার রাতেই আত্মসমর্পণ করেছে। অপরাধ দমন শাখার ইন্সপেক্টর এনএল দেশাই জানিয়েছেন, রবিবার মধ্যরাতে ১১জন দোষী জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
অপরাধীদের সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে জেল থেকে ছাড়া হয়েছিল। গুজরাট এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের যৌথ তৎপরতায় ছাড়ের আবেদন দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ছাড়ের সুযোগ দিয়েছিল আগের রায়ে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সেই  নির্দেশ খারিজ করে শীর্ষ আদালতেরই দুই বিচারপতির বেঞ্চ। গত ৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, বিলকিস বানোর ধর্ষকদের ফের জেলেই ফেরাতে হবে। দু’সপ্তাহের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরই হঠাৎ ‘গায়েব’ হয়ে যায় বিলকিস বানোর ধর্ষকরা। বস্তুত গুজরাট সরকারের পুলিশই তাদের ‘নিখোঁজ’ ঘোষণা করে। কিন্তু আদালতের ঠিক করে দেওয়ার সময়সীমার মধ্যেই ফের গারদে ঢুকতে হলো বিলকিস বানোর ধর্ষকদের। 
বিলকিস বানোর ধর্ষকদের ছাড়া হয়েছিল গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে। বিজেপি নেতা এবং বিধায়করা ধর্ষণ এবং খুনে দোষী সাব্যস্তদের ফুল মালা দিয়ে বরণ করে। সিপিআই(এম) এবং বিরোধী বিভিন্ন দল তীব্র ক্ষোভে জানিয়েছিল যে বিজেপি বারবারই নারী নির্যাতনে অপরাধীদের পাশে থাকছে। উত্তর প্রদেশে হাথরস বা উন্নাও থেকে মহিলা কুস্তিগিরদের নিপীড়নে অভিযুক্ত দলের সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংদের মদত দিচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর দল। বিলকিস বানোর ধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যসদের খুনে অপরাধীদের ছাড় তারই আরেকটি নমুনা।
২০০২ সালে গুজরাট গণহত্যার সময় উন্মত্ত উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের চরম নৃশংসতার শিকার হন। ছোট্ট মেয়ে সহ পরিবারের সাতজনের নিথর দেহ পড়েছিল তাঁর চোখের সামনে। আর এই অপরাধীরা ধর্ষণ করেছিল তাঁকে। তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে নরেন্দ্র মোদী। বিলকিস বানো এবং বিভিন্ন অংশের টানা লড়াইয়ের জেরে অপরাধীদের সাজা হয়। কিন্তু শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের। সে সময়ই, ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘মহিলাদের প্রতি সম্মান দেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীশক্তির পাশে থাকা জরুরি।’’ 
প্রাক্তন মন্ত্রী, গোধরার সাত বারের বিধায়ক সিকে রাউলজি নির্লজ্জের মতো বলেছিলেন, ‘‘ওরা (ধর্ষকরা) ব্রাহ্মণ, সংস্কারী। ওদের স্বভাব ভালো।’’ তিনি আবার মিষ্টি খাইয়েছিলেন ধর্ষকরা ছাড়া পাওয়ায়, দিয়েছিলেন ফুল-ও। সুপ্রিম কোর্টের সওয়ালে গুজরাট সরকারই জানায় যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমোদন পেয়েই দোষীদের সাজার মেয়াদ শেষের আগে ছাড়ের আবেদন জানানো হয়েছে। সেই মতো প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। ৮ জানুয়ারির রায়ে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে জানায় যে অপরাধীরা এবং গুজরাট সরকার একাধিক তথ্য গোপন করে গিয়েছিলেন। হাইকোর্টে যে তাদের আবেদন খারিজ হয়েছিল হলফনামায় তার উল্লেখ ছিল না।
সুপ্রিম কোর্ট ফের জেলে ফেরার নির্দেশ দিতেই সেই ১১ জন ধর্ষকের দশ জনের আবার শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নানাবিধ অজুহাত দেখিয়ে আত্মসমর্পণের জন্য আরও সময় চেয়ে এবং জরুরি ভিত্তিতে শুনানির দাবিও জানায়। শীর্ষ আদালত সেই আবেদন গ্রাহ্যই করেনি। সুপ্রিম কোর্টের চাপে ডেট লাইন মেনে ফের গারদের ওপারে ঢুকে হল বিলকিস বানোর ধর্ষকদের।
বিলকিস নিজে জানিয়েছেন যে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী সুভাষিণী আলির মতো বিভিন্ন জন টানা তাঁর লড়াইয়ের পাশে থেকেছেন।

Comments :0

Login to leave a comment