Md Salim on Education

শিক্ষা ব্যবস্থা তছনছ করছে সরকার, রাজ্যপাল:সেলিম

রাজ্য

মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাল দুজনের বিরুদ্ধেই রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধংস করার অভিযোগ তুললেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, রাজ্যের শাসকদলের নেতা মন্ত্রীরা চুরি দুর্নীতি করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে লাটে তুলছে, আর রাজ্যপাল সেই সুযোগ নিয়ে বেআইনিভাবে উপাচার্য নিয়োগের নামে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছেন। উভয়ে মিলেমিশে রাজ্যের সরকারি শিক্ষা পরিকাঠামোকে তছনছ করে দিয়ে দেশি বিদেশি বেসরকারি ব্যবসায়ীদের শিক্ষার দোকান খোলার পথ করে দিচ্ছেন। তাহলে আমাদের গরিব ঘরের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার কী হবে? 

মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসে এই প্রশ্ন তুলে সেলিম রাজ্যের ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী সব মানুষকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ধংসাত্মক চক্রান্ত থেকে সরকারী শিক্ষা পরিকাঠামো বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসার আবেদন করেছেন। এদিনই মুখ্যমন্ত্রী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এর জবাবে সেলিম বলেছেন, শিক্ষক দিবসে মুখ্যমন্ত্রী ওঁর মনের কথাই বলেছেন। ওঁর যে শিক্ষামন্ত্রী এখন জেলে বসে আছে সেও এরকম হুমকি দিয়ে বলেছিল, ‘মাইনেটা তো আমিই দিই’। আসলে ওঁরা শিক্ষকদের গোলাম মনে করে। 

রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ বেআইনী হিসাবে চিহ্নিত করেও মুখ্যমন্ত্রীই তাঁকে একাজের সুযোগ করে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, দলের নেতা মন্ত্রীদের চুরি দুর্নীতির মধ্য দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে নাভিশ্বাস তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রীই। আইন অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পরিচালনায়, উপাচার্যে নিয়োগে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এবার রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর যুদ্ধের নাটক চলছে। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হবে আর উলুখাগড়ার প্রাণ যাবে? কোভিড চলাকালীনও আগের রাজ্যপালের সঙ্গে একরম ট্যুইট যুদ্ধ করতেন মুখ্যমন্ত্রী। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য আইন করা হয়েছিল, নির্বাচিত সেনেট সিন্ডিকেট ছিল। এখন মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাল মিলে সমবায় থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথায় পছন্দমতো চোরেদের বসাচ্ছেন। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী নিজেদের ক্ষমতা দেখানোর বদলে আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিজেদের দায় দায়িত্ব দেখাক। এক শিক্ষামন্ত্রী জেলে, আরেক শিক্ষামন্ত্রী জেলে যাবে কিনা সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তার মানে কিন্তু এই নয় যে রাজ্যপাল সবকিছু চালানোর এক্তিয়ার পেয়ে গেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী রাজভবনে যে ধর্ণার হুমকি দিয়েছেন সেই সম্পর্কে সেলিম বলেন, আগে তো বলেছিলেন দিল্লিতে ধর্ণা দেবেন। এখন দিল্লিতে ধর্ণার কথা বলছেন না কেন? 

এদিন হাইকোর্ট ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে যে নির্দেশ দিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়ে সেলিম বলেছেন, হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে তবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হবে? এতেই প্রমাণিত রাজ্য সরকার কত অপদার্থ। সব যদি আদালতকেই করে দিতে হয় তাহলে শিক্ষামন্ত্রী মাইনে পায় কেন? ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাগীদার, তাদের মতামত ছাড়া আমলাতান্ত্রিকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নামে তৃণমূলের দখলদারি চালানো হয়েছে। ছাত্র রাজনীতি না থাকলে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এভাবেই গুণ্ডা মস্তানদের আখড়ায় পরিণত হয়। 

একের পর এক দুর্নীতির তদন্তে আদালত যেভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দায়িত্ব দিচ্ছে সেই সম্পর্কেও সেলিম বলেছেন, রাজ্য পুলিশ এবং সিআইডি’র পেশাদারি দক্ষতাকে শেষ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, মানুষের তাদের ওপরে আর কোনো ভরসা নেই। শাসকদলের নেতারা চাকরি বেচে দিয়েছে, বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা চাকরির দাবি নিয়ে বিক্ষোভ দেখালে পুলিশের কাজ হচ্ছে তাদের আটকানো। পিসি ভাইপো’র বাড়ি পাহারা দিতেই কলকাতা পুলিশ ব্যস্ত হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকার এরাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থের দুর্নীতি ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। এমনই দুই শাসকদলের বোঝাপড়া। 

মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে কুনাল ঘোষের বিদেশ যাত্রার অনুমতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, দুর্নীতির মুখ চলে গেলো, আর এতো মুখপাত্র। মুখ্যমন্ত্রীর বিদেশ যাত্রায় তারাই সঙ্গী হচ্ছেন, যাদের বেশিরভাগই হয় জেল ফেরৎ, নয় জেলে যাবে।

Comments :0

Login to leave a comment