Pahalgam Terror Attack

সীমান্ত বন্ধ, বাতিল ভিসা জলচুক্তি

জাতীয়

পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামালার জেরে ওয়াঘা-আট্টারি সীমান্ত বন্ধ করে দিল ভারত। এছাড়াও পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদের জলচুক্তিও বাতিল করার কথা ঘোষণা করা হল বুধবার দিল্লিতে প্রাধনমন্ত্রীর বাসবভনে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের শেষে। তবে, জলচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত কিভাবে কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এদিন বৈঠকের শেষ বিদেশমন্ত্রক থেকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের নাগরিকদের এদেশে আসা বন্ধ করতে ‘সার্ক’ ভিসাও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁদের এই ভিসা দেওয়া হয়েছিল তাও বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সভাপতিত্বে নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রীসভার কমিটির বৈঠকের শেষে বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে সার্ক ভিসা নিয়ে যে সমস্ত পাকিস্তানের নাগরিক এদেশে রয়েছেন তাঁদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভারতে ছড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দিল্লিতে থাকা পাকিস্তানের দূতাবাসে কর্তব্যরত সামরিক উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত বলে ঘোষণা করে এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার কথা এদিন রাতে জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। পাশাপাশি দিল্লিতে পাক হাইকমিশনে কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০-এ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতও ইসলামাবাদে হাইকমিশনের দপ্তরে কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে ৩০ করবে বলে এদিন জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই বৈঠক থেকে। প্রাধনমন্ত্রীর বাসভবনে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে এই বৈঠক। তা শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ এবং শেষ হয় রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরে পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৫ জনই পর্যটক। তাঁদের মধ্যে দু’জন বাঙালি। সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে আহত হয়েছেন ১৭ জন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন শবরি গুহ। তিনি কলকাতার বাসিন্দা।  এই হামলার দায় স্বীকার করেছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। এই হামলায় জড়িত তিন জন সন্ত্রাসবাদীর স্কেচ প্রকাশ করলো নিরাপত্তা বাহিনী। সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীদের নাম যথাক্রমে আসিফ ফুজি, সুলেমন শাহ এবং আবু তালহা। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র বিশেষ দল এদিন পৌঁছে যায় বৈসারানে হামলা স্থলে। গোটা জায়গাটি খুঁটিয়ে দেখে তারা। হামলাকারীদের সন্ধানে স্থানীয় পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে এই এনআইএ-র বিশেষ দল কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে। এদিনই বারামুলায় এবং কুলাগামে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর দু’টি সংঘর্ষ হয়েছে। কুলগামে গভীর রাত পর্যন্ত সংঘর্ষে চলছে বলে খবর। তবে, বারামুলায় সমীন্ত পেরিয়ে এপারে ঢুকবার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাবহিনীর সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসবাদীদের সংঘর্ষ হয়। নিরাপত্তাবহিনীর গুলিতে দু’জন সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে বলে সেনাবাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে।  

তবে, অনেক বড় নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েই পহেলগামে হামলা চালিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা। আরও অনেক বাশি মানুষকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ছিল তারা। সেনাবাহিনী সূত্রে এমনটাই জানা গেছে। হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য তুলে রাখতে তাদের শরীরে ছিল লাগানো ছিল গোপন ক্যামেরা। হামলার আগে পহেলগামে বৈসরন লাগোয়া গভীর জঙ্গে নিরাপদে লুকিয়ে থাকার জায়াগাও তারা তৈরি করেছিল সরকারি সূত্রে জানা গেছে। এই অঞ্চলে সেনাবহিনীর উপস্থিতি ছিলো না। সেই সুযোগে তারা অবাধে হামালা চালায়। এদিন পহেলগামে হামলায় আহত এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাও জানান শাহ। বৈসারনে গিয়ে সেনাবাহিনী এবং পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে কথাও বলেন। অনন্তনাগে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবরও নিয়েছেন তিনি। এক্সে পোস্ট করে শাহ জানিয়েছেন, পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার কড়া জবাব দেবে ভারত। এদিন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ফোন করে পহেলগামে হামলার বিষয়ে কথা বলেন। এছাড়াও জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর ওমর আব্দুল্লার সঙ্গে ফোন করে কথা বলেন তিনি। এই হামালার জেরে বৃহস্পতিবার সর্বদল বৈঠক ডেকেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অমিত শাহ এবং রাজনাথ সিং এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

এই হামলায় নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর সরকার। এছাড়া আহতদের ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে বলেও সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে। জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ‘এক্স’-এ পোস্ট করে এই হামলায় নিহতদের পরিবারগুলির প্রতি তাঁর সমবেদনার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের পাশে থাকার কথাও বলেন।

এদিকে, সন্ত্রাসবাদী ভয়বহ হামলার আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি পহেলগাম। ঘরবন্দী অবস্থায় বুধবার গোটা দিন কাটিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দোকানপাট সবই ছিল বন্ধ। রাস্তাঘাট ছিল শুনাসন। তার মধ্যেই চলছে সেনাবহিনীর টহল। চলছে জওয়ানদের চিরুনি তল্লাশি।  মঙ্গলবারও সকাল থেকেই ছিল পর্যটকদের আনাগোনা। হোটেল, বাজারে ছিল তাঁদের ভিড়। দুপুর আচমকা সন্ত্রাসবাদী হামলায় এক ঝটকায় বদলে গেলো গোটা ছবি। মঙ্গলবার হামলা থেকে যে পর্যটকরা কোনোক্রমে রক্ষা পেয়েছেন, তাঁদের সকলকে নিরপাদে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শ্রীনগরে। কিন্তু এদিন যাঁদের আসার কথা ছিল তাঁরা কেউই এপথে আসেননি। এখন পর্যটকশূন্য অবস্থায় খাঁখাঁ করছে হোটেল বাজার থেকে সর্বত্র।   

এই মুহূর্তে পর্যটকদের মধ্যে বড় অংশই বেড়ানোর পরিকল্পনা মঝাপথে  বাতিল করে দিয়ে দ্রুত ঘরে ফিরতে চাইছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে হোটেলের ঘর বা গাড়ি যাঁরা বুকিং করেছিলেন পর্যটকরা। অন্তত ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই তা বাতিল করে দিয়েছেন। পর্যটকরা বাড়ি ফেরার তাড়ায় ভিড় করে রয়েছেন শ্রীনগর বিমানবন্দরে। সুযোগ বুঝে বিমানের ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছিল উড়ান সংস্থাগুলি। শ্রীনগর থেকে দিল্লি যাওয়ার বিমানের টিকিটের দাম একলাফে বাড়িয়ে ৬৫ হাজার টাকা করেছিল। যাত্রীদের প্রবল ক্ষোভ এবং নানা মহলের প্রতিক্রিয়ায় বাধ্য হয়ে হস্তক্ষেপ করে অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক। তারা বিমান ভাড়া স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ জারি করে। এরপরই শ্রীনগর থেকে দিল্লি যাওয়ার ভাড়া ১৪ হাজার টাকা করার কথা ঘোষণা করে উড়ান সংস্থার। তবে, শ্রীনগর থেকে দিল্লিতে মাত্র দু’টি উড়ান চলাচল করবে বলে এদিন জানিয়েছে এয়ারর ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এবং ইন্ডিগো। শ্রীনগর থেকে মুম্বাইয়ে উড়ান চলাচল করবে। কয়েকদিন আগে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বেশ কিছু জায়গায় পাহাড় থেকে ধস নামায় বন্ধ হয়ে গেছে শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়ক। এই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় আরও ভগান্তি বাড়িয়েছে পর্যটকদের। এই অবস্থায় পর্যটকদের ফিরিয়ে আনতে স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে উত্তর রেলওয়ে। এদিন রাত ৯টা ২০ মিনিট কাটরা থেকে ছাড়বে ট্রেনটি। এছাড়াও চালু হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর। যাত্রীদের সুবিধার জন্য হেল্প ডেস্কও খোলা হয়েছে। 

Comments :0

Login to leave a comment