চিন্ময় কর - মেদিনীপুর
দাতব্য চিকিৎসা ব্যাবস্থা এখন অতীত। স্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে যুক্ত যত ধরনের উপকরণ ও পরিকাঠামো ব্যাবহৃত হয় তার উপর নানান কায়দায় বা অছিলায় মুফানা করা হয় সে সরকারী বা বেসরকারী সবই নিয়ন্ত্রিত হয় কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার দালালি নীতিতে। তাতে নীতি নির্ধারণ কারীতে বৃহত কর্পোরেট বা পুঁজিবাদীদের আগ্রাসী ভূমিকা এবং কার্যক্ষেত্রে নীতি আয়োগকারীও পরস্পর মুনাফা স্বার্থে সেই নীতি নিয়েই চলছে। সাধারণ মানুষের দাবী বা চাহিদা সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা। সকল দেশের সরকারকে বিনামূল্যে জনগণকে সকল ধরনের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করবে। সে স্থানে সম্পূর্ণ ভাবে অবৈজ্ঞানিক ও নৃশংস ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের কাঠামো কে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এখন এক জন ব্যাক্তি তার অর্থ প্রদানের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবেন সেই নীতিই কার্যকর করা হয়েছে। এমন স্বাস্থ্য নীতির ভিতরে নানান কদর্য রূপ তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা এবং সবার সমান স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার অধিকারকে যে নীতিতে এবং যাদের দ্বারা বঞ্চিত করা হচ্ছে তার পরিবর্তনের দাবীতে জনসাধারণ কে ঐক্যবদ্ধ করা জরুরি বলে উল্লেখ করেন ডা. ফুয়াদ হালিম।
মেদিনীপুর শহরে গুহরায় ভবনে পিপলস রিলিফ কমিটির পরিচালনায় জেলা স্বাস্থ্য কর্মশালা কর্মসূচীতে জেলার ২২টি ব্লক থেকে দুই শতাধিক মানুষ অংশ গ্রহন করেন। এই কর্মসূচীর আয়োজক সংগঠন এ এইচ এস ডি, প্রগতিশীল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সমিতি, ডব্লিউ বি এম এস আর ইউ, বিজ্ঞান মঞ্চ এবং স্টুডেন্টস হেলথ হোম। সংগঠনগুলির আহ্বায়ক ডা. বিবেক বিকাশ মন্ডল প্রারম্ভিক বক্তব্য সহ আলোচক চিকিৎসক সহ পিপলস রিলিফ কমিটি কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
স্বাস্থ্য আন্দোলন বিষয়ে আলোচনা করেন ডা.রাজেন্দ্র প্রসাদ এবং স্বাস্থ্য অর্থায়ন ও স্বাস্থ্যের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ে আলোচনা করেন ডা. নির্মাল্য দাস।
আলোচনায় উঠে আসে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সার্বিক ভাবে মানুষের কাজে পৌঁছে দিতে হলে দেশের জিডিপির ৫% এবং রাজ্যের জিডিপির ৮% ব্যায় করা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে গত তিন বছরের পরিসংখ্যা থেকে উঠে এসেছে সেই বরাদ্দ করা হয়না। আবার বাজেটে যে পরিমান বরাদ্দ হয় বাস্তবে তার এক তৃতীয়াংশরও কম খরচ করা হয়।
উঠে আসে মোড়ক বা কোভিডে মৃত্যুর প্রকৃত পরিসংখ্যা গোপন রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু এমন কারনে মৃত্যুর পরিসংখ্যা গত এক বছর আগের বছর গুলিতে তথ্য নেই।
জীবন দায়ী ঔষধে উপর কর, অতিরিক্ত জিএসটি আবার বেসরকারি পরিষেবা কেন্দ্র গুলিতে লাইসেন্স ফিজ সহ টেক্স আদায় তার সাথে রোগীর পরিজনদের কাজ থেকে জিএসটি আদায় পুরোটাই দায়ভার রোগীর ঘাড়ে চাপছে। এমন নানান পদক্ষেপের প্রসঙ্গের সাথে বর্তমান সময়ে রাজ্যে তৃণমূল সরকারের হাত ধরে ন্যাহ্য মূল্যের ওষুধ দোকান গড়ে ওঠার পিছনে কর্পোরেট কে পুষ্ট করে এর মধ্যেও দূর্ণীতির ঘটনা রয়েছে বলে তথ্য দিয়ে আলোচনায় উঠে আসে। আলোচকরা বলেন, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় মানুষকে বোকা বানিয়ে জনদরদী দেখানোর পদক্ষেপ বলে অভিযোগ ওঠে। প্রয়োজনীয় যে ১৪২ রকমের ওষুধ তার সিংহ ভাগ এই দোকান গুলোতে পাওয়া যায় না। রাজ্যে এমন ১১৮ টি দোকান চলছে চমক দেখানোর জন্য। এমন দোকানে এম আর পি এর ওপর বিপুল ছাড় দিয়ে মন জয় করার প্রয়াস। আসলে এই ছাড় দিলেও বাজারে দামী দামী সংস্থার ঔষধের দামের কাছাকাছি আবার বশীর ভাগ ক্ষেত্রে বাজারে দাম তুলনা মূলক ভাবে অনেকটাই কমে পাওয়া যায়। কয়েক টি ওষুধের উদাহরন তুলে বলা হয় যেমন অ্যামোক্সিলিন ৫০০ ও পটাসিয়াম ক্ল্যাভিওনেট বহুল ব্যবহৃত জেনেরিক ওষুধ। এখানে এটি বিক্রি হয় মোক্সাটস (সিভি) ৬২৫ ব্র্যান্ড নামে। ৬টি ট্যাবলেটের একটি পাতার ছাপানো দাম ২৬০ টাকা। ৬৬.২৫% ছাড় দিয়ে দাম পড়ছে ৮৭.৭৫ টাকা। হাসপাতালের বাইরে ঐ ফরমূলার ওষুধ টি বিক্রি হয় ৭০.৮০ টাকা। তাহলে ন্যাহ্য মূল্যের হাসপাতালের দোকানে প্রতি পাতায় বেশী দাম নেওয়া হচ্ছে ১৬.৯৫ টাকা প্রায় ১৭ টাকা। এই অতিরিক্ত মুনাফা পাইয়ে দিচ্ছে সরকার এক কর্পোরেট সংস্থায়। এখনে পরস্পরের স্বার্থ রক্ষা করেই স্বাস্থ্য পরিষেবার আড়ালে জনগনকে শোষন করা হচ্ছে।
গত শনিবার ঝাড়গ্রাম শহরেও এই ধরনের স্বাস্থ্য কর্মশালা সংগঠিত হয় পিপলস রিলিফ কমিটির পরিচালনায়।
Comments :0