এবারও বাধা দিতে নেমেছিল ধনী বিশ্ব। তবু বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয় হয়েছে ‘পরিবেশ তহবিল’। রাষ্ট্রসঙ্ঘের পক্ষে জানানো হয়েছে এবারই প্রথম পরিবেশ সম্মেলনে আনুষ্ঠানক আলোচনায় স্বীকৃত হয়েছে এই দাবি। বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে ধনী দেশগুলি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবে, এই মর্মে সম্মতি থাকলেও কোনও সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় তা জায়গা পায়নি।
বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাস ঐতিহাসিকভাবে বেশি বাতাসে মিশিয়েছে ধনী দেশগুলিই। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত বিশ্ব। সেই বাস্তবতা সামনে রেখে শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলিকে পরিবেশ তহবিলে অর্থ দেওয়ার দাবিতে সরব বাকি দেশগুলি।
মিশরের শরম অল শেখে রবিবারই শুরু হওয়ার কথা ছিল বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন ‘সিওপি ২৭’। রাষ্ট্রসঙ্ঘ আয়োজিত এই সম্মেলন করা হয় ‘কনফারেন্স অব পার্টিজ’ হিসাবে স্বীকৃত দেশগুলিকে নিয়ে। ধনী বিশ্বের উদাসীনতায় ক্ষোভ গোপন রাখেননি রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও।
মিশরে উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলির প্রতিনিধিরা এবার গোড়াতেই চেপে ধরেন পরিবেশ তহবিলের বিষয়টিতে। ধনী দেশগুলি বরাবরের মতো আনুষ্ঠানিক আলোচনার তালিকায় আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আটকে দিতে নেমেছিল। ভারত, চীন বা ব্রাজিলের পাশাপাশি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা পালটা অবস্থান নেন। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলির তরফে সরবে দাবি তোলা হয়। বলা হয় যে স্বল্পোন্নত দেশগুলিতেই কেবল ১০০ কোটি মানুষ থাকেন।
বিতর্কের কারণে এবার মিশরে পিছিয়ে যায় সম্মেলনের সূচি। অনেক দেরিতে রবিবার শুরু হয় সম্মেলন। তবে। ‘সিওপি ২৭’ সভাপতি সামেহ শৌরকে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন যে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবার আনা গিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সর্বসম্মতিতেই ঠিক হয়েছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।’’ ভারতের পরিবেশ মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব বলেছেন, ‘‘পরিবেশজনিত ক্ষতিপূরণের আলোচনা এবার আনুষ্ঠানিক স্তরে হবে। এই সিদ্ধান্ত স্বাগত। ভারত পরিবেশ সম্মেলন গঠনমূলক ভূমিকা নেবে।’’
আগের বছর গ্লাসগোতে ‘সিওপি ২৬’ অনুষ্ঠানে ধনী দেশগুলির বাধায় আটকে গিয়েছিল আনুষ্ঠানিক আলোচনা। প্যারিসে জলবায়ু চুক্তিতে যদিও ‘পরিবেশ তহবিল‘ সম্পর্কে বলা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক স্তরে বছরে একশো বিলিয়ন ডলার আয়তনের এই তহবিল থেকে স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল বিশ্বকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণে দায়ী ধনী দেশগুলি দেবে এই অর্থ। কিন্তু ধনী দেশগুলি প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখেনি। ইউরোপ বা আমেরিকায় যদিও পরিবেশ আন্দোলন একই দাবি তুলেছে। বিভিন্ন আন্দোলনের বক্তব্য, আসলে কর্পোরেটের মুনাফার দিকে তাকিয়ে সরকারের এমন অবস্থান। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল ভুগতে হচ্ছে এই দেশগুলির সাধারণ মানুষকেও।
ছবি: টুইটার থেকে
Comments :0