PB opposition unity

ভারতকে রক্ষায় পলিট ব্যুরোর আহ্বান বিরোধী-সহযোগিতার

জাতীয়

PB opposition unity

দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করতে বিরোধী দলগুলির মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলার উপরে জোর দিল সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। সোমবার নয়াদিল্লিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পার্টির এই দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করে পলিট ব্যুরো বলেছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আমন্ত্রণে গত ২৩ জুন পাটনায় ১৫টি বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের যে বৈঠক হয়েছে, সেখানেও সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে এই সহযোগিতা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরা হয়েছে। সেই বৈঠকে সিপিআই(এম) আরও বলেছে, বিরোধী দলগুলিকে যৌথভাবে জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সর্বভারতীয় প্রচার এবং জনগণের জীবনযাত্রার মানের দ্রুত অবনতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করতে হবে। সিপিআই(এম) মনে করে, দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক অধিকার এবং মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তাকে সুরক্ষিত রাখার জন্যও বিরোধী দলগুলির মধ্যে এই সহযোগিতা গড়ে তোলা জরুরি। আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনে ‍বিজেপি যাতে বিরোধী ভোট ভাগাভাগির সুবিধা পেতে না পারে, তার জন্য রাজ্য স্তরে আলোচনাও শুরু করতে হবে বিরোধী দলগুলিকে।

মণিপুরের পরিস্থিতি
গত ২৪ ও ২৫ জুন নয়াদিল্লিতে সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর একেজি ভবনে পলিট ব্যুরোর এ‍‌ই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই বৈঠকের আলোচনার ভিত্তিতেই এদিন এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোদী সরকারের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। পলিট ব্যুরো এই প্রসঙ্গে বলেছে, মণিপুরের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত ৭ মে থেকে সাত সপ্তাহ ধরে ওই রাজ্যে জাতি সংঘর্ষ চলছে। বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিন সরকার সেই সংঘর্ষ থামাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনও মন্তব্যও করেননি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ওই রাজ্যে গিয়েছেন ২৯ মে, হিংসাত্মক সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পুরো ২৬ দিন পরে। তারও কোনও প্রভাব পড়েনি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকও নিষ্ফল হয়েছে। কারণ, রা‍‌জ্যে বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার পরিস্থিতি সামলাতে অযোগ্য বলে নিজেকে প্রমাণ করলেও মোদী সরকার ওই সরকারকে বরখাস্ত করার দাবি মানতে রাজি হয়নি।

মোদীর আমেরিকা সফর
বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক আমেরিকা সফর সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই সফরে আমেরিকা ভারতকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ‘জুনিয়র পার্টনার’ হিসাবে আরও জোরালো বন্ধনে যুক্ত করেছে। আগের সামরিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলি অনুসরণে এবার জিই-এফ ৪১৪ জেট ইঞ্জিনের যৌথ উৎপাদনের চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে, যা ভারতকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমেরিকার বৃহৎ সহযোগী দেশে পরিণত করবে। আসলে বিশ্বে নিজের আধিপত্যকে শক্তিশালী করতে ভারতকে কৌশলগত অবস্থান ও সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসাবে পেতে চায় আমেরিকা, যার আসল উদ্দেশ্য চীনকে বিচ্ছিন্ন করা। তার জন্য মোদীর এই সফরে ভারতে বিজেপি সরকারের আমলে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র লঙ্ঘনের ঘটনাগুলি নিয়ে কোনও কথা তোলেনি বিদেন প্রশাসন, যা প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে। এমনকী প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা পর্যন্ত এগুলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মার্কিন কংগ্রেসের (সংসদ) ৭৫ জন সদস্যও মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের প্রশ্নে মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।

অভিন্ন দেওয়ানি বিধি 
বিবৃতিতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে তৎপরতার বিরোধিতা করে পলিট ব্যুরো বলেছে, এই বিষয়ে ফের আলোচনা শুরু করেছে বর্তমান (২২তম) আইন কমিশন। অথচ এর আগের আইন কমিশন (২১তম) বিষয়টি নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচনা করে ২০১৮ সালেই বলেছিল, ‘‘এখন অভিন্ন দেওয়ানি বিধির না প্রয়োজন আছে, না এই বিধি কাম্য।’’ সিপিআই(এম) এই অবস্থানকে সমর্থন করে। অভিন্নতা আর সমতা এক নয়। পার্টি সমস্ত সম্প্রদায়ের মহিলাদের সমানাধিকারের পক্ষে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত ও প্রথাগত আইনগুলিকে সংস্কারের মাধ্যমেই সেই লক্ষ্যে সব থেকে ভালভাবে এগিয়ে যাওয়া যেতে পারে, যে প্রক্রিয়ায় সক্রিয় গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ থাকবে ওই সম্প্রদায়গুলির সমস্ত মহিলা ও পুরুষের।

অর্থ লুটকে বৈধতা
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বৃহৎ ঋণখেলাপীদের বিশেষ ছাড় দেওয়ার যে নীতি ঘোষণা করেছে, পলিট ব্যুরো তারও জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিবৃতিতে এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক এক সার্কুলারে ব্যাঙ্কে জমানো জনগণের কষ্টার্জিত সঞ্চয়ের লুটকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে বিরাট অঙ্কের ঋণ নিয়ে শোধ দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তা পরিশোধ করেননি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সার্কুলারে এই সব ঋণখেলাপীকে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে এককালীন অর্থের বিনিময়ে আপস মীমাংসায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে এই সার্কুলার প্রত্যাহার করতে হবে, সমস্ত ঋণখেলাপীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং ব্যাঙ্কের পাওনা অর্থ সম্পূর্ণ পরিমাণে আদায় করতে হবে।

চালের জোগান, স্মার্ট মিটার
বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছে, আগের মতোই রাজ্যগুলিকে চাল সরবরাহ শুরু করতে হবে এবং বাতিল করতে হবে বিদ্যুতে প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার প্রকল্প। পলিট ব্যুরো বলেছে,  রাজ্যগুলিকে চাল বিক্রি না করার জন্য এফসিআই-কে নির্দেশ দিয়েছে মোদী সরকার। এ‍‌ই নির্দেশে মোদী সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা ও অগণতান্ত্রিক আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অ-বিজেপি রাজ্য সরকারগুলি সাধারণ মানুষকে কিছুটা রেহাই দেওয়ার জন্য যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলি পালনে বাধা দেওয়াই এই নির্দেশের লক্ষ্য। পলিট ব্যুরো আরও বলেছে, মোদী সরকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য প্রি-পেইড ব্যবস্থার যে স্মার্ট মিটার প্রকল্প রূপায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, এখনই তা বাতিল করতে হবে। বহু রাজ্যকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। এভাবে সরকার বিদ্যুৎ বণ্টনের দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে তা বেসরকারি বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীগুলির হাতে তুলে দিতে চাইছে, যাতে তাদের সর্বোচ্চ মাত্রায় মুনাফা হয়। গরিব মানুষ ও কৃষকদের উপর অসহনীয় বোঝা চাপিয়ে দেবে এই প্রকল্প।

কুস্তিগীরদের প্রতিবাদ
মহিলা কুস্তিগীরদের যৌন হেনস্তার ঘটনায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যেভাবে অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে, পলিট ব্যুরো তার কড়া নিন্দা করেছে। বিবৃতিতে এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, দেশের মহিলা কুস্তিগীররা বিজেপি’র এক সাংসদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার যে অভিযোগ তুলেছেন, তার প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ থাকলেও নির্লজ্জভাবে ওই অভিযুক্তকে আড়াল করতে ব্যস্ত মোদী সরকার এবং বিজেপি। পকসো সহ একাধিক আইনের ধারায় অভিযোগ দায়ের হলেও বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তদন্তকে শ্লথ করেছে, যাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক নির্যাতিতাকে চাপ দিয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করাতে পারে অভিযুক্ত। অপ্রাপ্তবয়স্করা যেখানে যৌন নির্যাতনের শিকার, তেমন সব ঘটনায় এর গুরুতর প্রভাব পড়বে। অবিলম্বে অভিযুক্ত সাংসদকে গ্রেপ্তার করতে হবে।

আসামে আসন পুনর্বিন্যাস, স্বাস্থ্য সমীক্ষা
বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো ২০০১ সালের জনগণনার রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০২৩ সালে আসামে বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাসের বিরোধিতা করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন এই পুনর্বিন্যাসের জন্য কোনও পৃথক কমিশন গঠন করেনি। রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি’র রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করতেই কমিশন এই উদ্যোগ নিয়েছে। একইসঙ্গে পলিট ব্যুরো ষষ্ঠ জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা থেকে প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত প্রশ্ন বাদ দেওয়ার পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এর আগের অর্থাৎ পঞ্চম দফার সমীক্ষায় এই সংক্রান্ত প্রশ্ন ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এবার তা পুরোপুরি বাদ দেওয়া হলো, যা একটি পশ্চাদমুখী পদক্ষেপ। ষষ্ঠ জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় ওই প্রশ্নকে যুক্ত করতেই হবে। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী বৈঠক হবে নয়াদিল্লিতে, আগস্টের ৪ তারিখ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত।


 

Comments :0

Login to leave a comment