LF RALLY 31 AUGUST

প্রতারিত বাংলার মানুষ এবার হিসাব নেবেন , বললেন নেতৃবৃন্দ

রাজ্য

 

প্রতারিত লুণ্ঠিত বাংলার মানুষ হিসাব বুঝে নিতে রাস্তায় নেমেছেনআর তাঁদের ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। বৃহস্পতিবার জনপ্লাবিত ধর্মতলার সমাবেশে বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ দৃঢ় প্রত্যয়ে এই ঘোষণা করেছেন। সিপিআই(এম)র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেনমুখ্যমন্ত্রী মিডিয়া ম্যানেজ আর নাটক করেরাখি পরিয়েকোনও রাহুলকোনও মোদীকে ধরে চোরের সরকারকে বাঁচাতে পারবেন না। বাংলার প্রতারিত মানুষ সব হিসাব বুঝে নিতে প্রস্তুত। লুটের হিসাবখুনের হিসাব সব বুঝে নিয়ে অন্যায়ের শাস্তি আদায় করার জন্যই আমরা শপথ নিচ্ছি।

ধর্মতলায় গ্র্যান্ড হোটেলের সামনে জওহরলাল নেহরু রোডের দুটি লেনেই তখন তিল ধারণের জায়গা নেই। এদিন তাঁর ভাষণের মধ্যেই প্রবল বৃষ্টি নামলে সেলিম বলেছেন, সভা চলবে তোসমস্বরে জনতার চিৎকার উঠেছেহ্যাঁ। সেলিম বলেছেনপঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ শাসকদলের আক্রমণে রক্তে ভিজেছেন, আজ বৃষ্টি ভেজায় কে পরোয়া করে! খাদ্য আন্দোলন থেকে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শহীদগণআন্দোলনের সব শহীদদের নামে আমরা শপথ নিচ্ছিসব হিসাব আদায় করতে হবে। নতুন করে বাংলাকে গড়তে হবে। যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাসযেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ। 

এরপরেই তিনি বলেনচাকরি চুরির টাকা থেকে কয়লা বালি গোরু পাচারের টাকা, গ্রামকে শুষে নেওয়া টাকা সব এঘাট ওঘাট ঘুরে জড়ো হয়েছে কালীঘাটে। দালাল মিডিয়া কিছু প্রকাশ করেনিএখন হাইকোর্ট ইডিকে তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন করে বলছে, কেন জেরা করছে নাআমরা অনেক আগেই বুঝে গেছিদিল্লির সঙ্গে সেটিং করে যারা বিদেশে মহিলাদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে টাকা পাচার করেছেইডি সিবিআই তাদের কিচ্ছু করবে না। বাংলার প্রতারিত মানুষকে একজোট হয়ে বিচার আদায় করতে হবে। এক মাসের মধ্যে ভাইপোকে গ্রেপ্তার করে জেরায় না বসালে ইডি সিবিআইর বিরুদ্ধে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান হবে আজকের চেয়েও বড় সমাবেশ করে। হবে তোবৃষ্টিস্নাত জনতার সোচ্চারে জবাব এসেছে, ‘হবে। 

সেলিম বলেছেনপঞ্চায়েতে ওরা ভোট লুট করেছেমানুষকে লুট করতে পারেনি। মানুষের ক্ষোভ আগের চেয়েও তীব্র হয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে। এখন সেই মানুষকে জাতি ধর্ম ভাষা নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে ন্যায়বিচার আদায়ে। নইলে খাদ্যের অধিকারপুষ্টির অধিকারকাজের অধিকার কিছুই রক্ষা করা যাবে না। বাংলার শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হবে। 

এদিন গণআন্দোলনের শহীদ দিবস উপলক্ষে ধর্মতলার সমাবেশে সভাপতিত্ব করে বামফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেছেন১৯৫৯ সালের ৩১ আগস্টসেদিনও ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছিল। খাদ্যের দাবিতে মিছিলকে আটকে পুলিশ লাঠিপেটা করে ৮০জনকে হত্যা করে। তারপর ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিবাদ চলেপুলিশের আক্রমণে সব মিলিয়ে মোট ১১২ জন প্রাণ হারান। সেই সব শহীদ এবং তার পরবর্তীতে গণআন্দোলনের শহীদ, সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে শহীদ সবার স্মরণে আমরা শোকজ্ঞাপন করছি। এরপর বিশাল সমাবেশ এক মিনিট নীরবতা পালন করে। 

বিমান বসু বলেনকেন্দ্রে বিজেপি এবং রাজ্যে তৃণমূল বিপদ ডেকে এনেছে। তৃণমূলের সবচেয়ে বড় অপরাধ তারা এরাজ্যে বিজেপিকে ডেকে এনেছে। মিডিয়া ওদের মধ্যে বিরোধ দেখায়বোঝাপড়া প্রকাশ করে না। যতো বাধাই আসুকএই আঁধার কাটিয়ে গণআন্দোলনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। তৃণমূল এবং বিজেপিকে জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন করে উৎখাত করতে হবে।

বৃষ্টির মধ্যে সমাবেশে যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি বলেনএকমুঠো খাবারের জন্য কেন আমাদের গ্রামের ভাইদের অন্য রাজ্যে যেতে হচ্ছেআর ইনি (মুখ্যমন্ত্রী) মায়েদের বলছেননিশ্চিন্তে থাকুনসরকার কফিনবন্দি করে ডেডবডি আনার ব্যবস্থা করে দেবে। এতটাই নির্লজ্জ! একমাসের মধ্যে যদি এই চোরেদের জেলে না পোরা হয় তাহলে বাংলার মানুষ চুপ করে বসে থাকবে না। ইঁদুরের পায়ে পায়ে যেমন মাটির তলা ঝুরঝুরে হয়ে যায়পিসি ভাইপো বুঝতেও পারছেন না যে তাদের পায়ের তলার মাটি ঝুরঝুরে হয়ে গেছে। 

আজকের পটভূমিতে খাদ্য সঙ্কটজীবিকার দুর্দশাকে তুলে ধরে সভায় সেলিম বলেছেন, খাদ্য আন্দোলনজমির আন্দোলনলালঝান্ডার আন্দোলনে বাংলার মানুষ পায়ের তলায় মাটি পেয়েছিলমাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছিল। দক্ষিণপন্থীরা সেটা চায় নাতাই লাল হটাতে একজোট হয়ে নেমেছিল। ফল কী হয়েছেসুজলা সুফলা দেশের মানুষ অভুক্তভারত আজ ক্ষুধা সূচকে ১৬০ নম্বর দেশ হয়ে গেছে। অতীতের মজুতদারকালোবাজারীর দিন ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেট হাতে কৃষি ব্যবস্থাকে তুলে দিতে চাইছে। বর্ধমানের চালকলও আদানিদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। মোদী এমন ব্যবসায়ী হয়েছেন যে চারশো টাকার রান্নার গ্যাস বারোশো টাকা দাম করে দিয়ে দুশো টাকা ছাড় দেওয়ার লোভ দেখাচ্ছেন। আইসিডিএসর পুষ্টির টাকামিড ডে মিলের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। আর ওরা ধর্মের নামে মানুষকে ভাগ করে রাখতে নেমেছে। সংসদে গিয়ে বসেছে লুটেরা, পাচারকারীরাবামপন্থীরা সংসদে শক্তি হারিয়েছেকিন্তু রাস্তায় মানুষের কথা বলতে বামপন্থীরাই আছে। 

সমাবেশে সিপিআইর রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি বলেছেনভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায় ফ্যাসিবাদীরা বসেছে। যাদের দেশপ্রেমের কোনও ইতিহাস নেইব্রিটিশদের দালালি করেছে তারা জাতীয়তাবাদের কথা বলছে। এরা আবার ক্ষমতায় ফিরে এলে মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেবে। ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি বলেছেনখাদ্য উৎপাদন ও বিপণনের সব ব্যবস্থা কর্পোরেটের হাতে তুলে দিয়ে বিজেপি কৃষকেরও সর্বনাশ করছেমূল্যবৃদ্ধি ও খাদ্যসঙ্কটও ডেকে আনছে। আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির সংস্কৃতি কায়েম করেছেন। আরএসপির রাজ্য সম্পাদক তপন হোড় বলেছেনএকদিকে বিজেপি হিংসা ও দাঙ্গা ছড়াচ্ছে সারা দেশেআর এরাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী লুম্পেন সমাজ গড়ে তুলে গ্রাম শহর ছারখার করে দিচ্ছেন। এই দুই বিপদের বিরুদ্ধেই লড়াই করতে হবে। 

এদিনের সমাবেশে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম)র পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্ররামচন্দ্র ডোমমার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা আশিস চক্রবর্তীআরসিপিআই নেতা সুভাষ রায় ও মিহির বাইনওয়ার্কার্স পার্টির নেতা শিবনাথ সিনহাবলশেভিক পার্টির নেতা প্রবীর ঘোষ সহ বামফ্রন্টের রাজ্য নেতৃবৃন্দ।

Comments :0

Login to leave a comment