Corporate Hindutva

মোদী মজে অরণ্যে মানুষ জর্জরিত সঙ্কটে

সম্পাদকীয় বিভাগ

নিজের রাজ্য গুজরাটে গিয়ে অনেকটা জিম করমেটিয় সাজে গির অরণ্যে সিংহের ছবি তোলার পোজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেশ-দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হলেও এটা ভাবার কারণ নেই মোদী খোশ মেজাজে আছেন বলে দেশের অর্থনীতিও চনমনে আছে। এটাও ভাবার কারণ নেই তিনি ফুরফুরে মেজাজে আছেন বলে আমজনতাও দিব্যি আছেন। বরং বাস্তবটা সম্পূর্ণ উলটো। কথার মারপ্যাচে, বক্তৃতার আবেগ উচ্ছ্বাস, মনগড়া তথ্য ও ব্যাখ্যার আধিক্যে যতই সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা হোক না কেন অর্থনীতির ক্ষত থেকে দুর্গন্ধ বেরোবেই। হাজারো খবরের ভিড়ে প্রতিদিনই নজর কাড়ছে কিছু কিছু উদ্বেগের খবর, দুঃশ্চিন্তার খবর। যেমন ধরা যাক, গত পাঁচ মাস ধরে লাগাতার শেয়ার বাজারে ধস। গত অক্টোবরে শেয়ার সুচক ৭৫ হাজার স্পর্শ করলেও তারপর থেকে চলছে পতনের অপ্রতিরোধ্য ধারা। এখন নামতে নামতে ৭৩ হাজারে ঠে‍‌কেছে। গত ২৯ বছরের ইতিহাসে টানা পাঁচ মাস এত বিপুল পতন কোনোদিন দেখা যায়নি।
শেয়ার বাজারের পতনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকা মূল্য কমছে হুহু করে। কয়েক মাসের মধ্যে মার্কিন ডলারের মূল্য ৮০ টাকা থেকে ৮৭ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অতি সম্প্রতি মূল্যবৃদ্ধির হার খানিকটা কমলেও গত কয়েক বছর ধরে মূল্য বৃদ্ধির হার ছিল অতি উচ্চ। আর টাকার মূল্য পতন ঠেকাতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে যথেচ্ছ ডলার জোগান দিয়ে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার ছোট করে ফেলছে।
এটা ঠিক বিকাশ অর্থনীতিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা থাকে। তেমনি অর্থনীতি বিকাশমান হলে সাধারণ মানুষের রুজি রোজগার বাড়ে। কিন্তু মোদীর ভারতে ব্যাপারটাই উলটো, মোদীরা অনর্গল অর্থনীতির দ্রুত বিকাশের গল্প শোনান। বিশ্বের সর্বোচ্চ হারে বৃদ্ধির অর্থনীতির বাহবা কুড়ান। কিন্তু সেই বিকাশমান অর্থনীতি এবং সর্বোচ্চ বৃদ্ধির অর্থনীতির মন্দা বাজারের ক্ষয় রোগে ভুগছে। কোভিডকাল থেকে বাজারে কেনাকাটায় যে মন্দা শুরু হয়েছে তার কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। সরকারি, বেসরকারি নানা সমীক্ষায় ধরা পড়ছে মানুষের আয় বাড়ছে না। সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। ঘরে ঘরে বেকারি। কোনও না কোনওভাবে কিছু আয়ের চেষ্টা হলেও সেটা নিতান্তই কম। বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির পক্ষে অপ্রতুল। পণ্য পরিষেবার চাহিদা না থাকায় উৎপাদন বাড়ছে না। বিরাট পরিমাণ উৎপাদন ক্ষমতা অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। তেমনি চাহিদা না বাড়ায় নতুন উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর দরকার হচ্ছে না। তাই নতুন বিনিয়োগে উৎসাহ নেই।
এই যেখানে মোদীর ভারতের প্রকৃত বাস্তবতা সেখানে সাধারণ মানুষরে অবস্থা ঠিক কেমন সেটা সহজেই অনুমেয়। এই ভারতেই কিছুদিন পর পর প্রধানমন্ত্রী উন্নত ভারতের স্বপ্ন ফেরি করেন। ২০৪৭ সালে দেশ যখন স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্ণ করবে তখন ভারত হয়ে যাবে উন্নত ভারত। অর্থাৎ আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপানের সঙ্গে একাসনে বসবে। দারিদ্র, অশিক্ষা ইতিহাস হয়ে যাবে। নিম্নবিত্ত এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তও থাকবে না। ভারতবাসীর মাথাপিছু আয় হবে ১৪ হাজার ডলার অর্থাৎ প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা। বর্তমানে, এমনকি ১১ বছরে মোদী জমানায় বার্ষিক যে হারে অর্থনীতির বৃদ্ধি হচ্ছে তাতে স্বাধীনতার ১০০ বছর দূরের কথা ১২৫ বছরেও উন্নত হওয়া যাবে না। মানুষকে বোকা বানানোর জন্যই অলীক স্বপ্ন দেখিয়ে হিন্দুত্বে বুঁদ করে রাখার ছলনা চলছে। মোদীরা অর্থনীতির যে পথের পথিক তাতে আদানি, আম্বানিদের মতো বৃহৎ কর্পোরেটেরই ঝটিকা বিকাশ চলছে। নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সম্পদ যেটুকু সৃষ্টি হচ্ছে তা চলে যাচ্ছে ধনীদের পকেটে। ফলে আয় ও সম্পদের বৈষম্য বিশ্বের যে কোনও দেশের থেকে দ্রুত বেড়েছে ভারতে।

Comments :0

Login to leave a comment