Covid-19

করোনার নতুন প্রকরণ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে

রাজ্য

দেশজুড়ে আবার বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ। ওমিক্রণের দোসর এবারে হানা দিয়েছে ‘জে এন ওয়ান’। তবে এখনই একে বিপজ্জনক বলতে চাইছেন না চিকিৎসকরা। তবু যাঁরা বয়স্ক ও কোভিড টিকার বুস্টার ডোজ নেননি, তাঁদের ‘জে এন ওয়ান’ নিয়ে একটু বাড়তি সুরক্ষা নিতেই হবে। কলকাতায় বৃহস্পতিবার কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে ৩ জন। শুক্রবারে সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন আরও ১ জন। সব মিলিয়ে রাজ্যে নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ জন। তবে ওই সব রোগীদের এখনও জিন সিকোয়েন্স না হওয়া তাঁরা আদৌ কী ‘জে এন ওয়ান’-এ আক্রান্ত কিনা সন্দেহ। 
করোনার নতুন উপপ্রজাতি ‘জে এন ওয়ান’ নিয়ে সতর্ক করে দিলেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাবে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা তাঁরা। সেই সঙ্গে আগাম সতর্কতা হিসেবে কোভিড বিধি মেনে চলার জন্য দিয়েছেন পরামর্শ। ভাইরাস বিশেজ্ঞ তমাল ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, নতুন সাবভ্যারিয়ান্ট ‘জে এন ওয়ান’ তা কতটা শক্তিশালী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এর লক্ষণগুলি সম্বন্ধে দেওয়া হয়েছে স্পষ্ট ধারণা। সাধারণ সর্দি-কাশির সঙ্গে থাকবে ক্লান্তি আর সারা শরীর ও গলা ব্যথার মতো উপসর্গ। তবে, করোনার নতুন এই সাব-ভ্যারিয়েন্ট অল্প বয়সিদের কাবু করতে পারবে না বলে আশার বাণী শুনিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসক অপূর্ব ব্যানার্জি জানাচ্ছেন, যাঁদের জীবন শৈলীগত বা অন্য ক্রনিক রোগ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে জে এন ওয়ান ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই জন্য বিশেষ বয়স্কদের আপাতত একটু ভিড় এড়িয়ে চলাটাই ভালো। বদ্ধ জায়গার অনুষ্ঠানে রাতের দিকে না যাওয়াটা উচিত। একান্ত কোন জনসমাগমে গেলে মাক্স পরে যাওয়াটাই ভালো। ভারতেও নতুন সাবভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তের খোঁজ মেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন স্ট্রেন সম্বন্ধে সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি সতর্ক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংক্রমণ রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে নির্দেশ।
বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী অবশ্য এখনই ‘জে এন ওয়ান’কে ‘ভয়ানক’ বলতে চান না। তিনি জানান, ‘জে এন ওয়ান’ নিয়ে এখন তেমন কোনও গবেষণা হয়নি। লুক্সেমবার্গে করোনার নতুন সাবভ্যারিয়ান্ট ‘জে এন ওয়ান’ ধরা পরার পর থেকে বিশ্বের ৩৮টি বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গত এক মাসে বিশ্বে নতুন করে ৮.৫ লক্ষ মানুষ এই উপপ্রজাতিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতে গত ১ মাসে ১৬ হাজার করোনা রোগীর মধ্যে মাত্র ৪১৬জনের মধ্যে এই  প্রকরণ পাওয়া গেছে। 
যেটুকু পরিসংখ্যান এখনও পর্যন্ত মিলেছে তাতে দেখা গেছে করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৩০ শতাংশই এখন ‘জে এন ওয়ান’। এর আগে অবশ্য ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর প্রাক্তন সভাপতি রাজীব জয়দেবন বলেছিলেন, কোভিড যাওয়ার রোগ নয়। এটা একটি চক্রাকার রোগ। এটা কমবে, আবার বাড়বে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে নতুন করে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। ধনী দেশে সংক্রমণ বেশি। করোনা সময় থেকেই তা দেখা যাচ্ছে। 
আইএমএ-র প্রাক্তন সভাপতি চিকিৎসক জয়দেবনের মতে, গত অক্টোবর মাসে আমেরিকায় নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার মানুষ। এর মধ্যে মাত্র ১ জনের শরীরে সেই সময় নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট জে এন ওয়ান পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, জে এন ওয়ান প্রজাতিটি ‘বি এ ২.৮৬’-এর উপপ্রজাতি। ভিন্নরূপী এই ‘বি এ ২.৮৬’-কে এর আগে দেখা যায়নি। যখন জে এন ওয়ান হানাদারি করছে তখনই উৎসবের মরশুম।
বড়দিন, নতুন বছরের উৎসব সামনে। এই সময় দীর্ঘ ছুটির জেরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলি দিয়ে যাত্রীদের যাতায়াত পেয়েছে বৃদ্ধি। সংক্রমণ রুখতে বিমানবন্দরগুলিতে স্ক্রিনিং ব্যবস্থার উপর জোর দিয়েছেন জয়দেবন। সেই সঙ্গে কোভিড টেস্ট বৃদ্ধির উপরও দিয়েছেন জোর দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে ধরা পড়া সব কোভিড রোগীর জিন সিকোয়েন্স করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ মোতাবেক কোভিডের ‘আরটি-পিসিআর’ পজিটিভ হলেই সেই রোগীর জিন সিকোয়েন্স করতে হবে। কলকাতার নাইসেড, ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জেনোমিক্সে নমুনা পাঠানো শুরু হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment