Ram mandir

বাম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই ধর্মীয় উসকানি দিতে তৎপর বিজেপি

জাতীয়

রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাবেন না বলায় ধারাবাহিকভাবে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে কংগ্রেস সহ বামপন্থী নেতৃবৃন্দকে। বিজেপি নেতারাই এই বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। বিজেপি’র সরকারি এক্স হ্যান্ডেলে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করা নেতাদের ছবি সংবলিত পোস্টার পোস্ট করা হয়েছে, তাতে হিন্দিতে লেখা আছে, ‘সনাতন ধর্ম বিরোধী এই নেতাদের চিনে রাখুন যাঁরা রামমন্দির প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন’। এঁদের গায়ে কালি ছিটোতে বলা হচ্ছে, ‘কংগ্রেস, বামপন্থীরা যে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং হিন্দু ধর্ম বিরোধী তা আবার প্রমাণ হয়ে গেল’।
২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সিপিআই(এম)’র সীতারাম ইয়েচুরির পাশাপাশি কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং অধীর চৌধুরি, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব সহ বেশ কয়েকজন বিরোধী নেতাকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও মন্দির কর্তৃপক্ষ। প্রথমে সিপিআই(এম) স্পষ্টই জানিয়ে দেয় যে, রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাদের কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন না। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, ‘ধর্মীয় বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা জানানো এবং প্রতিটি ব্যক্তির ধর্মাচরণের অধিকারকে সুরক্ষা দেওয়া। পার্টি মনে করে, ধর্ম হলো ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। একে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার হাতিয়ারে পরিণত করা উচিত নয়। বিজেপি এবং আরএসএস একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাষ্ট্র পোষিত উদ্‌যাপনে পরিণত করতে চলেছে যাতে প্রধানমন্ত্রী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য সরকারি কর্তাব্যক্তিদের সরাসরি যুক্ত করা হচ্ছে।’ 
বুধবার কংগ্রেসও বিবৃতি দিয়ে তিন নেতার অনুপস্থিত থাকার কথা জানিয়ে দিয়ে বলেছে, ‘ভগবান রামকে আমার দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ পুজো করেন। ধর্ম সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আরএসএস-বিজেপি রামমন্দিরকে একটি রাজনৈতিক প্রকল্প হিসাবে ব্যবহার করছে। অসম্পূর্ণ ওই মন্দিরকে আরএসএস এবং বিজেপি নেতাদের দিয়ে উদ্বোধন করানোর পিছনে অবশ্যই নির্বাচনী স্বার্থ জড়িত।’ এটা পুরোপুরি বিজেপি’র নির্বাচনী কর্মসূচি বলেও অভিযোগ করে কংগ্রেস। জানা গিয়েছে, সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ সিং যাদবও ‘বিজেপি’র রাজনৈতিক কর্মসূচি’ অভিযোগ তুলে রামমন্দির উদ্বোধনে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, ‘ধর্ম কখনোই রাজনীতির অঙ্গ হওয়া উচিত নয়।’ তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি আমন্ত্রণ পেয়েছেন কী না স্পষ্টভাবে জানা না গেলেও তিনি ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ‘রাজনৈতিক চটকদারি’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। বৃহস্পতিবার দলের সংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন রামমন্দির উদ্বোধন প্রসঙ্গে দলের সুপ্রিমোর পুরানো একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘ধর্ম ব্যক্তিগত, উৎসব সবার জন্য’।
বামপন্থী, কংগ্রেস সহ কয়েকজন বিরোধী নেতা আপত্তি জানানোয় তাঁদের ‘দেশবিরোধী’ তকমা সেঁটে প্রচার চালানো শুরু করে দিয়েছে বিজেপি বা সঙ্ঘ পরিবার। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এটাও ওদের রাজনৈতিক প্রকল্পের অঙ্গ। এমনিতেই রামমন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে জিগির তোলা হচ্ছে গোটা দেশে। উদ্বোধনের পর সেই রেশ জাগিয়ে রাখা হবে। গোটা দেশ থেকে মানুষজনকে সংগঠিতভাবে নিয়ে যাওয়া হবে অর্ধসমাপ্ত রামমন্দির দর্শনে। আর এই উন্মাদনা বজায় রেখেই লোকসভা ভোটে যেতে চাইবে বিজেপি। যেমন ২০১৯ সালের ক্ষেত্রে পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনাকে হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। তখনও জাতীয়তাবাদের জিগির তোলা হয়েছিল। এবার জাতীয়তাবাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে সনাতন ধর্মকে। ফলে যাঁরা রামমন্দির উদ্বোধনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করছেন তাঁদের গায়ে ‘দেশবিরোধী’র পাশাপাশি ‘সনাতন ধর্ম’ বিরোধী বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। লোকসভা ভোটে সেই সমস্ত দলের বিরুদ্ধে ওই দুই অভিযোগ সেঁটে দিয়ে জোর প্রচারও চালানো যাবে। সেই কৌশলই নিয়েছে বিজেপি। উদ্বোধনে যাওয়া বা না-যাওয়া—দুইয়েরই ফায়দা লুটতে চাইছে সঙ্ঘ পরিবার।
বিরোধীদের শূলে চড়িয়ে একারণেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে বিজেপি। দলের অন্যতম মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী আবার একে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে কংগ্রেস সহ বিরোধী নেতারা ‘ঈর্ষাপরায়ণ’ বা ‘হীনমন্যতায় ভোগেন’ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অযোধ্যার রামমন্দির হলো ভারতীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির চূড়ান্ত এক প্রতীক।’ বিরোধীরা সেই মন্দির উদ্বোধনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ত্রিবেদী দাবি করেছেন, ‘রামমন্দির উদ্বোধনে মানুষের মধ্যে কোনও বিভাজন রাখা হয়নি। এর সঙ্গে কোনও সংগঠন কিংবা মতাদর্শকে জড়িয়ে ফেলা উচিত হবে না।’ বিজেপি মনে করে, ‘৫০০ বছরের লড়াইয়ের ফসল রামমন্দির যা জাতীয় গর্বকেই আলোড়িত করেছে।’
এখানেই থেমে না থেকে কংগ্রেস সহ বিরোধী নেতাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানকে ঘিরে মেরুকরণের রাজনীতিও উসকে দিতে চাইছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর যেমন বলেছেন, ‘যাঁরা রামকে কাল্পনিক চরিত্র বলে তাঁরা যে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করবেন তার মধ্যে নতুনত্ব নেই। এই কংগ্রেস নেতৃত্বই তো অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ফের গড়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এবার যাঁরা রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠান বয়কট করলেন ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে জনগণ তাঁদেরই বয়কট করবে।’

Comments :0

Login to leave a comment