Tmc Bjp friendly match: Md salim

নাগপুরের নিয়ন্ত্রণে তৃণমূল-বিজেপি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হচ্ছে রাজ্যে: সেলিম

কলকাতা

তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে কোনও যুদ্ধ হচ্ছে না, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের নজর ঘোরাতে নাগপুরের নিয়ন্ত্রণে ‘ফ্রেন্ডলি ম্যাচ’ হচ্ছে। সোমবার দক্ষিণ কলকাতার হাজরায় একটি জনসভায় একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, পাড়ায় ফ্রেন্ডলি ম্যাচে টিম ভাগ করে নিজেদের মধ্যে খেলা হয়। সেরকম নাগপুর থেকে দল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, মুকুল এদিকে, তো শুভেন্দু ওদিকে। ভোট এলেই মিডিয়াকে দিয়ে ‘তৃণমূল বনাম বিজেপি’ বলে প্রচার করা হয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আবার সেটা শুরু হয়েছে। আসলে তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে কোনও যুদ্ধ হচ্ছে না। এই দুই দলের আবর্জনা পরিষ্কার করে রাজ্যকে বাঁচাতে পারে কেবল লাল ঝান্ডাই। 
সেলিম বলেছেন, এরাজ্যে কোনও বিরোধী দল নেই, সাজানো বিরোধী বসানো আছে। নকল যুদ্ধ দেখিয়ে মানুষের নজর ঘোরাচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, অপুষ্টি নিয়ে কোনও কথা নেই তৃণমূল, বিজেপি’র। চিৎকার করে পরস্পরকে সাজানো গালিগালাজ করছে। ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে, পুলিশ অফিসার, ডাক্তার মারা গেছে। সরকারের হুঁশ আছে? এতদিনে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘একটু একটু ডেঙ্গু হচ্ছে।’ কলকাতার মেয়র যার মশা মারার কথা, সে গেছে বীরভূমে বাঘ মারতে। তৃণমূল আর বিজেপি একদল আরেকদলের নেতাদের নিয়ে রিসাইকল করে বাজারে ছেড়েছে। রিসাইকল করা জিনিস মানে আবর্জনা, ক্ষতিকর। রাজ্যটা এখন আবর্জনায় পূতিগন্ধময়। আমরা বামপন্থীরা এই অবস্থা দেখে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারি না। আমাদের মাঠে নেমে এই আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে, রাজ্যকে বাঁচাতে হবে। 
  এদিন হাজরায় সিপিআই (এম)'র কলকাতা জেলা কমিটির ডাকে সমাবেশ করা হয়। হাজরা মোড়ে মানুষের উপচে পড়া ভিড় হয়েছিল। সেলিম বলেন, হাজরায় সমাবেশ দেখলেই পুলিশ বাধা দেয়। ‘চোর ধরো’ স্লোগান শুনলেই পুলিশ আক্রমণ করে। আরে চোর ধরা তো পুলিশের কাজ! অপরাধীদের পাহারা দিয়ে প্রতিবাদীদের কামড়ানো ওদের কাজ? দিল্লিতে পার্লামেন্টে জুমলা, দাঙ্গাবাজ শুনলেই বিজেপি যেমন রেগে যায়, তেমনই এরাজ্যে চোর ধরো বললেই তৃণমূলের রাগ হয়। আসলে লুট করবেন বলেই মানুষের মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগাতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, কিন্তু বামপন্থীদের মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগাতে পারছেন না। অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। 
  এদিনের সমাবেশে এছাড়াও ভাষণ দেন সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, পার্টির কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, সিপিআই(এম) নেত্রী কনীনিকা ঘোষ, সুদীপ সেনগুপ্ত। বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, দেশের বহু মানুষের আত্মত্যাগ, রক্ত-ঘামের বিনিময়ে সংবিধানে মানুষের যে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তাকে রক্ষা করাই আজকের চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় ক্রমশ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ভোটের নামে প্রহসন করে সংসদীয় ব্যবস্থাকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে। এরাজ্যে শিক্ষা স্বাস্থ্য, কৃষি শিল্পের উন্নতির মধ্য দিয়ে বামফ্রন্ট সরকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য নিয়ে চলছিল তৃণমূল এসে সেই সব কিছু ধ্বংস করছে। সভার সভাপতি কল্লোল মজুমদার বলেন, একটা বুর্জোয়া ব্যবস্থার মধ্যে ও দেশে এবং এরাজ্যে মানুষের স্বার্থে যে অধিকারগুলো আদায় হয়েছিল, সেগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদলের আক্রমণে। মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারি রোধ করতে, মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্যের অধিকার সম্প্রসারণে সরকারের যে ভূমিকা পালন করার তা না করে সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিপতিদের দালালি করে চলছে তৃণমূল এবং বিজেপি। অর্থনৈতিক সঙ্কট গরিব, মধ্যবিত্ত মানুষের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। 
রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রীর কুৎসিত মন্তব্যে্র নিন্দা করে এদিন কনীনিকা ঘোষ বলেছেন, মমতা ব্যানার্জিকে অনুসরণ করেই তাঁর দলের নেতারা প্রতিদিন ভাষা-সন্ত্রাস চালাচ্ছেন। বিজেপি নেতারাও এই প্রতিযোগিতায় কম যাচ্ছেন না!  সুদীপ সেনগুপ্ত এরাজ্যের পুলিশের দলদাস ভুমিকার নিন্দা করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যকে বাঁচানোর জন্য বামপন্থীদের ভূমিকার উল্লেখ করে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, বামপন্থীরা বলছি, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক পুলিশি ব্যবস্থার রিফর্ম চাই। মোদী বলছে সারা দেশে পুলিশের এক ইউনিফর্ম চাই। মমতা ব্যানার্জি বলছেন, এরাজ্যের সব স্কুলে এক ইউনিফর্ম চাই। দক্ষিণপন্থীরা এরকম এক রূপ চাপানোর কথা বলে। দেশবাসীর বৈচিত্র অস্বীকার করে। ওরা দেশবাসীর ঐক্য ভেঙে মানুষকে আলাদা আলাদা করার চেষ্টা করছে। জম্মু ও কাশ্মীর ভাগ করেছে, এরাজ্যে উত্তরবঙ্গ ভাগ করতে চাইছে। রাজ্যের অঙ্গচ্ছেদ মানুষের উন্নয়ন ঘটাবে না। কিন্তু সরকারে বসে রাজ্যভাগ তৃণমূল আটকাতে পারবে ? পারবে না, কারণ ভাইপোকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। কয়লা পাচার, খাদানকাণ্ড থেকে ভাইপোকে বাঁচাতে রাজ্যটাকে বাজি রেখেছেন মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু আমরা বামপন্থীরা এত সহজে এই লড়াইতে হার মানবো না, রাজ্যকে বাঁচাতে আমাদের জিততেই হবে। বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যে শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিবহণের জন্য মানুষের স্বার্থে পরিকাঠামো গড়েছিল। এখন সেই সব ধ্বংস করা হচ্ছে। মানুষ যাতে প্রতিবাদ প্রতিরোধ না করতে পারে তার জন্য হিন্দু মুসলমানের নামে নজর ঘোরানো হচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরাতে স্কুল আর মাদ্রাসাকে আলাদা করে দেখাচ্ছে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই বিভাজনের রাজনীতিকে রুখেই রাজ্যকে বাঁচাতে হবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment