গত বছরের জুনে মুখার্জি নগরে কোচিং সেন্টারে আগুন লেগেছিল। দেখা গিয়েছিল সুরক্ষা বিধি ভেঙে চলছে একের পর এক কোচিং ক্লাস। এক বছরেও বদলায়নি অবস্থা। ওল্ড রাজেন্র্লনগরে তিনটি তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর ব্যবস্থা নিতে শুরু করল দিল্লি কর্পোরেশন।
কর্পোরেশনের আধিকারকরা জানিয়েছেন, বিধি এড়িয়ে চলছে এমন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের বক্তব্য তলব করা হয়েছে। সিঁড়ির নিচে বা বেসমেন্টে ক্লাস হওয়ার কথাই নয়। ওল্ড রাজেন্দ্র নগরে তবু কেন ক্লাস চলছিল তা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।
শনিবার খুব কম সময়ের মধ্যেই ভারী বৃষ্টিপাত হয় দিল্লিতে। বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। রাজেন্দ্র নগরের রাস্তাতেও দাঁড়িয়ে যায় জল। হু-হু করে জল ঢুকে পড়ে কোচিং সনেন্টারের ক্লাসঘরে। জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তিন ছাত্রের।
রবিবার রাতে দিল্লি কর্পোরেশনের এক আধিকারিক বলেছেন, গত বছর সমীক্ষা করা হয়েছিল বিধি ভেঙে চালানো কোচিং সেন্টার নিয়েই। তথকন একটি কোচিং সেন্টারে আগুন লাগে। পড়ুয়াদের বাইরে লাফিয়ে পড়তে হয়েছিল। এই সমীক্ষা ধরেই দেখা হবে যে কোচিং সেন্টারগুলিকে সতর্ক করা হয়েছিল তারা আদৌ বিধি মানছে কিনা।
মর্মান্তিক এই ঘটনায় দিল্লিতে ক্ষোভ রয়েছে। অভিযোগ নিকাশি সমস্যার জেরে নদর্মার জল ঢুকেছিল কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে। তারই জেরে এই মৃত্যুর ঘটনা।
রবিবার সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টারের মালিক অভিষেক গুপ্ত এবং তাঁর এক সহকারী দেশপাল সিংকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এম হর্ষবর্ধন বলেন, ‘‘ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় রাজেন্দ্র নগর পুলিশ স্টেশনে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। জলমগ্ন বেসমেন্ট থেকে তিনজনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দেহ চিহ্নিত করেছেন পরিবারের সদস্যরা। মৃতেরা হলেন তানিয়া সোনি (২৫) তেলঙ্গানার বাসিন্দা, শ্রেয়া যাদব(২৫) উত্তরপ্রদেশের আম্বেদকর নগরের বাসিন্দা। নবীন ডালবিন (২৮) কেরালার এর্নাকুলামের বাসিন্দা। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। কীভাবে এত দ্রুত বেসমেন্টে জল ভরে গেল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
জানা গিয়েছে দিল্লি সরকার এবং দিল্লি কর্পোরেশন যৌথভাবে কমিটি গড়তে পারে। কোচিং সেন্টার ঘিরে বেনিয়মের তদন্তে নামতে পারে ওই কমিটি।
‘রাওস আইএএস স্টাডি সার্কেল’-এ ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ভর্তি হয়েছিল ছাত্রছাত্রীরা। এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরাও জানিয়েছেন ক্ষোভ। দিল্লির বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের ছাত্রছাত্রীরাই সরব হয়েছেন বিধি ভাঙার প্রতিবাদে। সুরক্ষা বিধি একেবারে উপেক্ষা করে কেন চালানো হয় ক্লাস, সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে বিধি ভেঙে ক্লাস চলতেই বা দেওয়া হয় কেন। সরকার এবং পৌর প্রশাসন তা’হলে কী করে। প্রশ্ন উঠেছে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও।
তিন ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ সতীর্থরা রবিবার ওল্ড রাজেন্দ্র নগরের কোচিং সেন্টারেরসামনেই বিক্ষোভ দেখান। অনেকেই বলেছেন, সবচেয়ে দোষী এই স্টাডি সার্কেলের নামে কোচিং প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ। এর আগে মুখার্জি নগরেও কোচিং ক্লাসে আগুন লেগেছিল। তারপর অনেক প্রতিশ্রুতি দেোবা হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি।
ছাত্রছাত্রীদের একাংশ বলছে জলমগ্ন হয়ে পড়ছে দিল্লি। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ছে। গত সপ্তাহেই প্যাটেল নগরে বিদ্যুতের তার পড়ে জলে। পা দিয়েি মারা যায় এক ছাত্র।
দিল্লির বিভিন্ন অংশই জানাচ্ছে, আইএএস বা সমতুল চাকরির পরীক্ষার প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন জায়গা তেকে আসে ছাত্রছাত্রীরা। কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে হোক ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করে। আগুন লাগলে বা বিপদ হলে বেরনোর রাস্তা থাকা অত্যন্ত জরুরি। পৌর বিধিতেও তা রয়েছে। সেসব উপেক্ষা করেই চলছে ক্লাস।
মৃত ছাত্রী শ্রেয়া যাদবের কাকা ধর্মেন্দ্র যাদব বলেছেন, ‘‘কাল রাতে খবরে দেখতে পেয়েই ফোন করি। কিন্তু শ্রেয়া ফোন তুলচিল না। দুশ্চিন্তা শুরু হয় তখন থেকেই। গাজিয়াবাদ থেকে কোচিং সেন্টারে পৌঁছালে বলা হয় আরএমএল হাসপাতালে যেতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি শ্রেয়া আর নেই।’’
Delhi Coaching Class
বিধি মানে না কোচিং ক্লাস, ক্ষোভ ৩ ছাত্রের মৃত্যুতে
×
Comments :0