কৌশিক দাম: ধূপগুড়ি
"ধর্ম যার যার, উৎসব সবার"— এই স্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে ধূপগুড়ি ব্লকের গাদং ১ নং অঞ্চলের কাজীরহাট অগ্রদূত সংঘ ও পাঠাগারের দুর্গাপুজো। চার দশক আগেও যেখানে ঢাকের আওয়াজ ছিল না, আজ সেখানে পুজোর বাদ্য বাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরে। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলে আসা এই দুর্গাপুজো এ বছর ৩৬তম বর্ষে পদার্পণ করল। কাজীরহাটে দুর্গাপুজো হোক কিংবা ঈদ—দুই উৎসবই এখানে মিলনমেলার রূপ নেয়। ঈদের মাঠে যেমন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপস্থিতি চোখে পড়ে, ঠিক তেমনই দুর্গাপুজোর আয়োজনেও মুসলিম সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়।
রাহুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, তোজা ইসলাম-এর মতো অনেকেই এই পুজোয় সানন্দে চাঁদা দেন, পুজোর ভোগ-প্রসাদ গ্রহণ করেন এবং আরতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নেন। স্থানীয় বাসিন্দা কাজী মোজাফফর হোসেনের স্পষ্ট বক্তব্য: “উৎসবের ক্ষেত্রে ধর্ম কোনও বিষয় নয়। ঈদ যেমন সবার উৎসব, তেমনই দুর্গাপুজোও সর্বজনীন।”
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক গজেন রায় এই সম্প্রীতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, “এখানে উৎসবে ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই। ঈদের মাঠে আমরা যেমন শুভেচ্ছা বিনিময় করি, দুর্গাপুজোয় তেমনই মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের পাশে থেকে সমস্ত সহযোগিতা করেন।” পুজো কমিটির সম্পাদক দীপচাঁদ রায় নিশ্চিত করেছেন যে, “প্রতিবারের মতো এবারও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা নিয়েই পুজো আয়োজিত হচ্ছে। পুজোর প্রতিটি কাজে মুসলিমদের সহযোগিতা পাওয়া যায়।” ক্লাব কমিটির সভাপতি বুলবুল ইসলাম জানান, “দশমীর দিন সন্ধ্যায় দুঃস্থদের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেওয়ার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
জানা যায়, আব্দুল্লা রহমানের দেওয়া প্রথম একশো টাকা চাঁদার সূত্র ধরেই এই সর্বজনীন দুর্গাপুজোর যাত্রা শুরু হয়েছিল। আজও সেই ধারা অটুট রেখে কাজীরহাটের এই পুজো হয়ে উঠেছে ধূপগুড়ি ব্লকের ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রতীক।
Comments :0