Editorial Mamata

কেমন স্বচ্ছ

রাজ্য সম্পাদকীয় বিভাগ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কয়লা চুরি করেছেন বা গোরু পাচার করেছেন এমন কোনও কথা সিবিআই বা ইডি-র পক্ষ থেকে এখনও বলা হয়নি। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতিসহ তাঁর রাজত্বে অন্যান্য যে দুর্নীতির তদন্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা করছে সেখানেও তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত এমন তথ্য হা‍‌জির করা হয়নি। তবে কয়লা থেকে শুরু করে নিয়োগ দুর্নীতি পর্যন্ত যাবতীয় দুর্নীতির টাকা নানা পথ ঘুরে মুখ্যমন্ত্রীর যে পারিবারিক সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এ ঢুকেছে সেটি ফুলে ফেঁপে উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ঠিকানাতেই। আজও সেই সংস্থার সিইও মুখ্যমন্ত্রীর অতি প্রিয় ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি এবং অন্যতম ডিরেক্টর মুখ্যমন্ত্রীর ভাই ও ভ্রাতৃবধূ। ভাইপো আবার মুখ্যমন্ত্রীর হাতে গড়া দল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। দলে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবেই তিনি বহুদিন ধরে ভাইপোকে গড়ে পিটে মানুষ করেছেন। আজও দলে মমতার পরই যে অভিষেকের স্থান সেটা তৃণমূলে প্রকাশ্যেই বলে থাকে। আদার ব্যাপারির জাহাজ কেনার সখের মত গত বিধানসভা নির্বাচনেও জোর প্রচার চালানো হয়েছে আগামী লোকসভা নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রী হবেন। আর রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী অভিষেক। এমতাবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ঠিকানায় মুখ্যমন্ত্রীরই পারিবারিক সংস্থার দুর্নীতির দায় কি মুখ্যমন্ত্রী ঝেড়ে ফেলতে পারেন? ‘আমি সরকারের কাছ থে‍‌কে টাকা নিইনা, সরকারি পয়সায় এক কাপ চাও খাই না’—এমন আবেগপ্রবণ স্বীকারোক্তি কখনোই একজন মুখ্যমন্ত্রীর সততা ও স্বচ্ছতার শংসাপত্র হতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী ‍‌নিজে কতটা স্বচ্ছ তার থেকেও বড় কথা দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি কতটা সজাগ ও সক্রিয়। তিনি এমন এক সরকারের এবং প্রশাসনের প্রধান যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি বাসা বেঁধে আছে। এরাজ্যে এখন এমন কোনও সরকারি বা আধা সরকারি সংস্থা, দপ্তর মিলবে না যেখানে কোনও দুর্নীতি হয়নি। তেমনি মুখ্যমন্ত্রীর দলের এমন কোনও নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, কর্মী খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন। গোটা দলটাই যেখানে চোর-জোচ্চোর, লুটেরায় ভরে আছে এবং গোটা সরকারটাই যেখানে দুর্নীতি আকণ্ঠ ডুবে আছে সেখানে সেই দলের সুপ্রিমো এবং সেই সরকারে মুখ্যমন্ত্রীকে সৎ ও স্বচ্ছ বলা যায় কোন্‌ যুক্তিতে। চূড়ান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত একটি দল ও সরকারের সর্বাধিনায়িকা বলছেন দুর্নীতির সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই। অথচ সেই দুর্নীতিগ্রস্ত দল ও সরকার তিনিই চালান।
মুখ্যমন্ত্রীর অতি প্রিয় ভাইপো যে বিপুল সম্পত্তির মালিক তার উৎস আজও রহস্যে ঢাকা। তাঁর উৎস কেউ জানে না। আবার যে সংস্থার তিনি সিইও সেই সংস্থা ঠিক কি ব্যবসা করে সেটাও কেউ জানে না। তবে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। কোথা থেকে টাকা আসে আর কোথায় যায় সেটাও মানুষ জানেন না। তবে আদালতের নির্দেশে তদন্তে নামতে বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা জানিয়েছে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির টাকা এবং কয়লা পাচারের টাকা নানা পথ ঘুরে ভাইপোর সংস্থায় ঢুকেছে। ভাইপোর এবং অবশ্যই ভাইপোর গোটা পরিবারের বিশ্বস্ত কালীঘাটের কাকুর সংস্থাকে সামনে রেখে আড়ালে ভাইপোর সংস্থা কাজ করত বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। নানা সূত্রে সন্ধান পেয়ে ইডি ভাইপোর সংস্থার সা‍‌ড়ে সাত কোটি টাকার ৮টি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিসহ অন্যান্য দুর্নীতির টাকা এই সম্পত্তিগুলিতে রয়েছে বলে ইডি জানতে পেরেছে। কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে দুর্নীতির সোনার খনির দ্বার খুলে যাবে বলে অনেকের অনুমান। তাই কণ্ঠস্বর সংগ্রহের কাজ বানচাল করতে মরিয়া রাজ্য প্রশাসন। এইভাবে কান টানতে টানতে মাথার কাছে পৌঁছানোর আগেই দলে নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্বের রঙ্গ তামাশা শুরু করা হয়েছে। মানুষের নজর ঘুরিয়ে চুরি ও চোরকে যতটা সম্ভব ঢেকে রাখার চেষ্টা।

Comments :0

Login to leave a comment