সোভিয়েত রাশিয়ার — ওয়াক্সম্যানের কৈশোরের শপথ
তপন কুমার বৈরাগ্য
ছেলেটা তখনকার সোভিয়েত রাশিয়ার ইউক্রেনে ১৮৮৮খ্রিস্টাব্দের ২২শে জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।মায়ের নাম ছিল ফ্রাডিয়া।বাবার নাম ছিল ওয়াক্সম্যান।আর ছেলেটার নাম ছিলো সেলমন অ্যাব্রাহাম ওয়াক্সম্যান।সেলমনের জন্মের দুই বছর পর তার বড় আদরের বোন আনা জন্মগ্রহণ করে।আনা যখন একটু বড় হয়েছে তখন দুই ভাইবোন একসাথে বিদ্যালয়ে যায়,একসঙ্গে খেলা করে,একসঙ্গে ঘুমোয়। দেখতে দেখতে আনার বয়েস ১২বছরএবং সেলমন ১৪ বছর বয়েসে পদার্পণ করে।এই সময় ছোট বোনের জ্বর এবং কাশী হয়।কাশির সাথে রক্ত বের হতে থাকে।পরীক্ষায় ধরা পড়ে যক্ষা।কিন্তু তখন যক্ষ্মার কোনো ঔষধ ছিলো না।সেলমনের বাবা মা একমাত্র মেয়েকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই মেয়েকে বাঁচাতে পারলো না।আনার মৃত্যুতে সকলেই গভীরভাবে ভেঙে পড়ল।বোনের মৃতদেহের উপর হাত রেখে সেদিন কিশোর সেলমন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তার বোনের মতন অকালে আর কাউকে ঝরে যেতে দেবেন না। শপথ রাখার জন্য ১৯১০খ্রিস্টাব্দে ২২বছরের যুবক ইউক্রেন ছেড়ে আমেরিকার নিউজার্সির রুজার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা রসায়নে ডিগ্রি লাভ করেন।১৯১৬খ্রিস্টাব্দে তিনি আমেরিকার নাগরীকত্ব নেন। এই সময় তিনি মাটি থেকে স্ট্রেপটোমাইসেস গ্রিসিয়াস নামক এক আণুবীক্ষণিক জীবাণুর সন্ধান পান।শুরু করলেন তার গবেষণা। ইতিমধ্যে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং আবিষ্কার করলেন পেনিসিলিন নামক প্রথম অ্যান্টোবায়োটিক।বোনের মৃত্যু তিনি কখনো ভুলেন নি।
ফ্লেমিং-এর আবিষ্কার তাকে আরো জেদি করে তুললো। অক্লান্ত
পরিশ্রম করে শেষপর্যন্ত ১৯৪২খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কার করলেন
স্ট্রেপটাইসিন।যেটা পেনিসিলিনের চেয়ে দশগুণ শক্তিশালী
অ্যান্টিবায়োটিক।এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৫২খ্রিস্টাব্দে পেলেন
নোবেল পুরস্কার। যক্ষ্মারোগ থেকে রক্ষা পেলেন সারা পৃথিবীর
মানুষ।যেদিন তিনি এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পেলেন
সেদিন বোন আনার জন্য তার দুচোখ জলে ভরে উঠেছিল।
Comments :0