HEALTH INSURANCE COST HIKE

স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটি’র বোঝা, বাড়ছে কিস্তির অঙ্ক

জাতীয় রাজ্য

প্রতীম দে

‘মেডিক্লেম’, সোজা কথায় স্বাস্থ্যবিমা। চিকিৎসা খরচ হু-হু করে বাড়ছে বেসরকারি পরিষেবায়। সরকারি হাসপাতালে জায়গা পাওয়া দুরূহ। ভরসা রাখতে হচ্ছে স্বাস্থ্যবিমার ওপর। কিন্তু লাফিয়ে বাড়ছে বিমার কিস্তি। 
কিন্তু প্রতি বছর এই বিমার কিস্তি মেটানোর খরচ জোগার করতে নাভিশ্বাস উঠছে অনেকের। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার স্বাস্থ্যবীমার কিস্তিতে ১৮ শতাংশ পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি চাপিয়েছে। যার ফলে প্রতি বছর প্রিমিয়ামের সঙ্গে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে উপভোক্তাদের। স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটি ১৮ শতাংশ, আর হিরের গয়নায় জিএসটি এই দেশেই ৩ শতাংশ!
সরাসরি সরকারের টাকায় চালু স্বাস্থ্যবিমা বা নিজেদের পকেট থেকে কিস্তিতে মেটানো বিমা, সব মিলিয়েও ভারতে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় নেই প্রায় ৪০ কোটি মানুষ। যাঁরা রয়েছেন, মোটামুটি নিশ্চিন্ত থাকার মতো কভারেজ পেতেও দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের কিস্তি। বিমার এজেন্টরা জানাচ্ছেন, চল্লিশ বছর বয়সী পুরুষ, মহিলা এবং এক সন্তান মিলিয়ে পরিবারের ৩ লক্ষ টাকা বিমার জন্য দশ বছর আগে কিস্তি ৮-৯ হাজার টাকা ছিল। এখন বেড়ে বছরে ১৩-১৫ হাজার টাকা। তার একটি কারণ কিস্তিই বেড়েছে। তার ওপর পড়েছে জিএসটি।
২০১৪ সালে বিজেপি সরকারে আসার আগে কি ছিল এই কর? 
এলআইসি এজেন্টস অর্গানাইজেশন অব ইন্ডিয়ার সর্বভারতীয় সভাপতি সুরজিৎ বসুর কথায়, ‘‘২০১৪ সালের আগে কোন সার্ভিস চার্জও ছিল না। ট্যাক্স তো দুরের কথা। ধরুন আপনি পাঁচ লক্ষ টাকার পলিসি করেছেন। আপনার প্রিমিয়াম ২৮,১৯০ টাকা। জিএসটি চালু হওয়ার আগে আপনাকে এই টাকাই শুধু দিতে হতো।’’
তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘এখন সঙ্গে যোগ হচ্ছে আরও ৫,০৭৪ টাকা। কারণ বসেছে জিএসটি। মোট ৩৩,২৬৪ টাকা একজন ব্যাক্তিকে বছরে দিতে হচ্ছে স্বাস্থ্যবীমার জন্য। এই টাকা এক মধ্যবিত্ত ঘরে জোগাড় করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’
সৌমেন বসু। কলকাতার এক নামী তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন। অফিস থেকেই তাঁর স্বাস্থ্যবিমা করে দেওয়া হয়েছে। মাসিক বেতন থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘অফিস থেকেই মেডিক্লেম করে দিয়েছে। টাকা বেতন থেকেই কেটে নেয়। এতে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু হ্যাঁ, যে টাকাটা কাটা হয় তার পরিমান অনেকটাই।’’
আবার অতি কম বেতনে কর্মরত একই পাড়ার বাসিন্দা নিশীথ রায়ের অবস্থা শোচনীয়। তিনি বললেন, ‘‘যা বেতন পাই তার প্রায় সবটাই খরচ হয়ে যায়। কিন্তু এর মধ্যেও আমায় প্রতি মাসে টাকা আলাদা করে রেখে দিতে হয় বছর শেষে মেডিক্লেমের টাকা দেওয়ার জন্য। খাই না খাই, রোগ হলে এত টাকা কোথা থেকে পাবো?’’
আচ্ছা স্বাস্থ্য সাথী, আয়ুষ্মান ভারতের মতো সরকারি বিমা প্রকল্প তো রয়েছে। সেগুলির কি ভূমিকা তাহলে? পশ্চিমবঙ্গে আবার আয়ুষ্মান ভারত চালু করতে দেয়নি তৃণমূল সরকারি। কিন্তু দেশের অন্যত্র যেখানে রয়েছে, সেখানেও সুরাহা যথেষ্ট নয়। 
সুরজিৎ বসুর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যসাথীর কথা কিছু শোনা গেলেও কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারতের কথা শোনা যায় না। কোথা গিয়ে এই কার্ড করতে হয় বা কী ভাবে আবেদন করতে হয় কেউ তা জানে না। আমাদের রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী যেমন আছে। কিন্তু তা সুযোগ সুবিধা পেতে গেলে দালাল চক্র বা শাসক দলের নেতা কর্মীদের সাহায্য নিতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘জিএসটি নামে যে বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার কারার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক, এলআইসির কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। স্বাস্থ্যবিমা তো সামাজিক কাজ বা প্রকল্প, এর ওপর কোন ভাবেই জিএসটি চাপিয়ে দেওয়া যায় না।’’
সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির নেতা সুমহান চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘সরকার নাগরিকদের স্বাস্থ্য বা চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছে না। জিএসটি চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। আমাদের দাবি, সরকারি বিমা প্রকল্পের বাইরে, পকেটের টাকায় যাঁরা স্বাস্থ্যবীমা করেছে তাদের জিএসটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment