Gram jatha CPI-M

বৃত্ত ভেঙে বড় হচ্ছে, দৈর্ঘ্য বাড়ছে পদযাত্রার

রাজ্য

পদযাত্রা বামপন্থীদের ডাকে। কিন্তু উপস্থিত শরিফুল মণ্ডল।
আইশমালীর পশ্চিমপাড়ায় তাঁর বাড়ি। নির্বাচনে তৃণমূলের বুথ এজেন্ট হন শরিফুল। তৃণমূলের নেতাদের নির্দেশে মিছিল করেছেন। বিরোধীদের ‘চমকে’ রাখার কাজও করেছেন। সেই তিনি, বৃহস্পতিবার পদযাত্রায় উপস্থিত। 
তিনি একা নন। তৃণমূলের কর্মী, সমর্থক বলে পরিচিত আরও অনেকে এদিন আইশমালীর পদযাত্রায় হেঁটেছেন। কেউ সিআইটিইউ’র, কেউ কৃষকসভার, কেউ মহিলা সমিতির, কেউ যুব ফেডারেশনের পতাকা কাঁধেও তুলে নিয়েছেন। 
কেন? শরিফুলদের মতো বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘আমাদের অঞ্চলে কোনও গ্রাম নেই, যেখান থেকে অনেক ছেলে বাইরে নেই। কোনও গ্রামের ৫০ জন ছেলে বাইরে। কোথাও আবার ১০০ জন। কেউ কেরালা, কেউ দিল্লি। কেউ বা চেন্নাই গেছে রুটি রুজির জন্য। এই সরকারের আমলে আমাদের অবস্থা ভয়ঙ্কর।’’
তাই পদযাত্রায় যোগ দেওয়ার ডাক পেয়েই চলে এসেছিলেন শরিফুলরা। এদিন পদযাত্রায় শামিল হয়েছেন পাঁচশোরও বেশি মানুষ। আইশমালী রানাঘাট ২ নং ব্লকের অন্তর্গত। 
তবে শুধু জীবন যন্ত্রণায় মানুষ মিছিলে হাঁটেননি। যুব আন্দোলনের নেতা স্বরূপ মুখার্জির কথায়, ‘‘সবাই সোচ্চার তৃণমূলের লুটের বিরুদ্ধে। চোখ রাঙানোর ভয়ে তৃণমূল চুপ করিয়ে রেখেছিল যে গ্রামকে, সেই গ্রামে এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে চোর ধরো জেল ভরো স্লোগান দিচ্ছে।’’ এদিনের মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন গরিব, মধ্যবিত্ত। সংখ্যালঘু, আদিবাসীরা ছিলেন। ছিলেন অনেক মহিলা। শরিফুলের কথায়, ‘‘একদিন না হয় কাজ কামাই হলো। তাতে যদি ৩৬৪ দিন চুরি বন্ধ করা যায় তাহলে এমন কামাই বন্ধ করতে রাজি।’’ দিনু মণ্ডল বললেন, ‘‘আমরা জ্বলছি পুড়ছি। এই চোখরাঙানি আর সহ্য করতে পারছি না।’’
এদিনের পদযাত্রায় এমন অনেকে ছিলেন, যাঁরা গত কয়েকটি নির্বাচনে বিজেপি-কে ভোট দিয়েছেন। ভেবেছিলেন তৃণমূলের দৌরাত্ম্য থামাতে পারবে বিজেপি। কিন্তু জিনিসের দাম, মোদী সরকারের একের পর এক নীতিতে তাঁদের অনেকেরই ‘আশাভঙ্গ’ হয়েছে। তৃণমূল-বিজেপি সেটিং করে চলে — নিজেদের অভিজ্ঞতায় তাঁরা তা বুঝেছেন। ‘‘গ্রামের কোনও দুর্নীতির বিরোধিতা করতে তো বিজেপি-কে দেখিনি,’’ বলছেন কয়েকজন গ্রামবাসী।
রানাঘাট ২ নম্বর ব্লক আইশমালী গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০টি বুথ ছিল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৩টি তৃণমূল, ৪টি বিজেপি এবং ৩টিতে সিপিআই(এম)’র প্রতিনিধি ছিলেন। এবারে সেই আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫টি। এদিনের পদযাত্রা ২৫টি বুথ পরিক্রমা করেছে। স্লোগানে মুখরিত ছিল পদযাত্রা। 
পুরুলিয়ার ডিমডিহা দেখেছে কীভাবে পথের দৈর্ঘ্যর সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় পদযাত্রীর সংখ্যা। পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের মধ্যে ডিমডিহা অঞ্চল। বৃহস্পতিবার পদযাত্রা যখন শুরু হয় তখন পদযাত্রীদের সংখ্যা ছিল ৫০ থেকে ৬০-র মধ্যে। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে যখন সেই পথযাত্রা শেষ হয় সংখ্যাটা পৌঁছেছে ৩০০-র বেশি। যে বলরামপুর অঞ্চলে এক সময় সিপিআই(এম) কর্মী-সমর্থকদের রক্তগঙ্গা বয়ে ছিল সেই বলরামপুরের তেঁতলো, দঁড়দার শহীদের রক্তমাখা বুথে বুথে যে পদযাত্রা বের হয় তাতে শামিল মানুষজনের মধ্যে ছিল লড়াকু মেজাজ। 
বান্দোয়ানের কুইলাপাল, মানবাজার ২ ব্লকের দিঘি, বারীতেও একই চিত্র। কোটশিলা দক্ষিণ এরিয়া কমিটির উদ্যোগে লক্ষ্মীপুর ও কুদোর গ্রাম পঞ্চায়েতের বুথে বুথে, রঘুনাথপুর দুই ব্লকের জোড়াডি অঞ্চল ও বড়রা অঞ্চল, পাড়া ব্লকের দুবড়া অঞ্চল, নিতুরিয়ার জনার্দনডি ও শালতোড়, পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের ঘোঙ্গা ও রাঘবপুর, সাঁতুড়ি, পুঞ্চার ছিরুডি, ঝালদার ইচাগ এলাকার বুথে বুথে পদযাত্রা হয়।
বলরামপুরে পদযাত্রীদের দুজন বললেন, ‘‘প্রথমে অনুন্নয়নের গল্প বলে মাওবাদীদের ডেকে এনে গ্রামাঞ্চলে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করেছিল আজকের শাসক দল। সেদিন যাঁরা বিরোধী ছিল তাঁরা পরবর্তীকালে উন্নয়নের গল্প বলে আমাদের আরেকবার বোকা বানানো হয়েছিল।’’
যে পঞ্চায়েত ছিল একসময় গ্রামীণ অর্থনীতির, গ্রামীণ উন্নয়নের মূল ভিত্তি সেই পঞ্চায়েত হয়ে গিয়েছে এখন কাটমানি খাওয়ার জায়গা। সাধারণ মানুষকে পরিষেবা পেতে গেলে শাসক দলের নেতাকর্মীদের কাটমানি দিতে হচ্ছে। সরকারি অর্থ লাগামছাড়াভাবে নয়ছয় করা হয়েছে। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ বহুদিন। বছরের পর বছর কেটে যায় ১০০ দিনের বকেয়া মজুরি পান না শ্রমিক। গরিব আরও গরিব হয়েছে। কিন্তু শাসক দলের সঙ্গে থাকা লোকেদের সম্পত্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। উন্নয়নের পঞ্চায়েত, দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার দাবি জানিয়ে বুথে বুথে চলছে পদযাত্রা। তাপমাত্রার পারদ নামছে হুহু করে। বিকেল তিনটের পর থেকেই বইছে কনকনে হাওয়া। সেসব উপেক্ষা করে শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই পদযাত্রায় মানুষের ভিড়। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসছে। তবুও পদযাত্রা শেষ হচ্ছে না। মানুষ বলছেন আরেকটু এগিয়ে যাত্রা শেষ হোক। সিপিআই(এম) পুরুলিয়া শহর দক্ষিণ এরিয়া কমিটির উদ্যোগে পদযাত্রা শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়।
.............................
ছবি: রানাঘাটের আইশমালিতে পদযাত্রা।

Comments :0

Login to leave a comment