High Court

‘একটা প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা করছে এসএসসি’

রাজ্য

এসএসসি’র নিয়োগ দুর্নীতির কারণে একটা প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে চলেছে। শুক্রবার এই মন্তব্য করেছেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। এদিন আদালত স্কুল সার্ভিস কমিশনকে চরম ভর্ৎসনা করে চেয়ারম্যানকে আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দিয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি মন্তব্য করেছেন আদালতের নির্দেশের ওপর কোনো খবরদারি করবেন না। আপনারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করার খেলা খেলছেন। আপনাদের আচরণের জন্য জনমানসে কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিচারপতি মান্থা মন্তব্য করেন,‘‘ আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই এসএসসি একটা প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছে।’’ উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নে ভুল থাকার কারণে আদালত মামলাকারীদের নম্বর দেবার নির্দেশ দিয়েছিল। কমিশন সেই নির্দেশ না মানায় শুক্রবার আদালত ক্ষুব্ধ হয়। আদালত কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারকে ডেকে পাঠিয়েছে। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য ১২তম রিজিওন্যাল লেভেল সিলেকশন টেস্টের প্রশ্নে ভুল নিয়ে দীর্ঘদিন এই মামলা চলছে। 
এদিন আদালত বলেছে, আদালতের নির্দেশের মান্যতা না দিয়ে কমিশন যে রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কমিশনের প্রতিটি পদক্ষেপ সন্দেহজনক। প্রয়োজনে সমস্ত নিয়োগ বাতিল করতে হবে। বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘আমি সব নিয়োগেই সন্দেহ প্রকাশ করছি। আমাকে বাধ্য করবেন না আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে।’’ নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে এটা পরিষ্কার হবার পরও একই পথে হাঁটছে কমিশন। আদালতের নির্দেশের ওপর খবরদারি বন্ধ করতে হবে। 
প্রসঙ্গত প্রায় ১২ বছর আগে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে ভুল প্রশ্ন ছিল। প্রশ্নপত্রে সিলেবাসের বাইরেও প্রশ্ন ছিল। এনিয়ে বহু চাকরি প্রার্থী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এই মামলায় আদালত নির্দেশ দিয়েছিল ভুল প্রশ্নের জন্য পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত নম্বর দিতে হবে। মামলার আবেদনকারীরা এই অতিরিক্ত নম্বর পাবেন। আদালতের এই নির্দেশের পর কমিশনের তরফে বলা হয় সিলেবাসের বাইরে যে প্রশ্ন ছিল সেখানে কমিশন কোনো অতিরিক্ত নম্বর দিতে পারবে না। এনিয়ে কমিশন আদালতে একটি রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্ট গ্রহণ করেননি বিচারপতি মান্থা। এই রিপোর্ট হাতে পাবার পরই কমিশনকে ভর্ৎসনা করে বিচারপতি মন্তব্য করেন আদালতের নির্দেশ নিয়ে কোনো খেলা হতে পারে না। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে তা বন্ধ করার জন্য প্রচেষ্টা না করে একই কাজ চালিয়ে গেলে সামাজিক ক্ষতি হবে। এসএসসি নিয়োগ করবে আবার তারাই ভুল প্রশ্ন করবে এটা কী করে সম্ভব? নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা রাখতে হবে। আগামী শুক্রবার কমিশনের চেয়ারম্যানকে আদালতে উপস্থিত হবার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওই দিনই মামলার পুনরায় শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। মামলায় আবেদনকারীর পক্ষে রয়েছেন আইনজীবী সামিম আহমেদ।
এদিকে এদিন কলকাতা হাইকোর্টে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত বিধির ১৭ধারা বাতিলের আবেদন জানিয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এই মামলায় এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সহ সমস্তপক্ষকে হলফনামা জমা দেবার নির্দেশ দিয়েছে। আবেদনকারীরা তাঁদের আবেদনে বলেছেন, এসএসসি তার নিয়োগ প্রক্রিয়ার ১৭নম্বর ধারা প্রয়োগ করে চাকরি সুপারিশ পত্র বাতিল করছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদও নিয়োগ পত্র খারিজ করে দিচ্ছে। আবেদনকারীরা বলেছেন, এই ১৭নম্বর ধারায় বলা আছে সুপারিশ পত্রে কোন ভুল থাকলে এসএসসি তা বাতিল করতে পারবে। এসএসসি চাকরি বাতিলের ক্ষেত্রেও এই ধারা প্রয়োগ করছে। চাকরি বাতিলের ক্ষেত্রে এসএসসি এই ধারা প্রয়োগ করতে পারে কিনা তা খতিয়ে দেখতেই এই নতুন মামলা দায়ের হয়েছে। 
উল্লেখ্য গ্রুপ-সি পদে শিক্ষাকর্মীদের ভুয়ো ৩৪৭৮ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে এসএসসি। এই ভুয়ো তালিকায় সমস্ত প্রার্থীই ফেল করেছিলেন। এদের সিংহভাগ প্রার্থী ১০ নম্বরের কম পেয়েছেন। শূন্য পেয়েছেন এমন প্রার্থীদের তালিকাও দীর্ঘ। তবে এই শূন্য অথবা ১ পাওয়া প্রার্থীদের নম্বর বেড়ে ৫৬ এবং ৫৭ হয়েছে। এই তালিকা প্রকাশ হবার পরই হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল বাতিল হওয়া শূন্যপদে ১০দিনের মধ্যে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় কাজ শুরু করতে হবে। এসএসসি জানিয়েছে এই শূন্যপদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের কাজ শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৬সালের এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এসএসসি’র তরফে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং শান্তিপ্রসাদ সিনহা। মধ্যশিক্ষা পর্ষদে নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। এই তিনজনই এখন জেলে রয়েছেন। এসএসসি’র সুপারিশ ছাড়াই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি নিজেই নিয়োগপত্র দিয়েছেন সেকথা কবুল করেছে এসএসসি। এসএসসি’র এই ভুয়ো তালিকা প্রকাশের আগেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রুপ-ডি ১৯১১জন এবং গ্রুপ-সি পদে ৮৪২জনের নিয়োগ বাতিল করেছেন। এই দুর্নীতির আবহেই শুক্রবার বিচারপতি রাজশেখর মান্থা এসএসসি’কে কড়া সতর্কবার্তা দিলেন।

Comments :0

Login to leave a comment