Safdar Hashmi

৩৫বছর না-থাকা সফদর জেগে আছেন ঝান্ডাপুরে

জাতীয়

অরূপ সেন: ঝান্ডাপুর
 

সফদর হাসমি ৩৫ বছর বেঁচে ছিলেন। সফদর হাসমি ৩৫ বছর আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু প্রবলভাবেই আছেন। সোমবার আরও একবার দেখালো ঝান্ডাপুর। উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ জেলার সাহিবাবাদের ঝান্ডাপুরে এমন এক নববর্ষের দিনেই ঘাতক বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সফদর সহ শ্রমিকদের উপরে। শুধু সফদর নন, নিহত হয়েছিলেন শ্রমিক রাম বাহাদুর। প্রতি বছর দিন পয়লায় তাই ঝান্ডাপুরে আসেন শিল্পী-কলাকুশলীরা, শ্রমিকরাও নামেন পথে। সফদর হাসমি-রাম বাহাদুরের রক্তে ভেজা মাটি জেগে ওঠে প্রতিবাদের প্রতিরোধের প্রত্যয়ী ঘোষণায়। 
দিল্লির তীব্র শীত উপেক্ষা করে এদিনও সকালে আম্বেদকর পার্কে জড়ো হয়েছিলেন মহল্লার শ্রমিকরা। প্রতিবারের মতো জননাট্য মঞ্চ এবং সিআইটিইউ’র উদ্যোগে সভা হয়। এবারের এই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন সারা ভারত কিষানসভার সভাপতি অশোক ধাওয়ালে। তিনি জননাট্য মঞ্চ এবং সিআইটিইউ’র ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। ধাওয়ালে বলেন, ৫১ বছর ধরে জননাট্য মঞ্চ শ্রমিকশ্রেণির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সফদর হাসমির ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি শুধু একজন অসামান্য ও অগ্রণী নাট্যকর্মী ছিলেন না। পরিচালক ছিলেন। শিশুদের বইয়ের লেখক ছিলেন। সারা জীবন তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। দমনপীড়ন, শোষণ এবং অসাম্যের বিরুদ্ধে তিনি ক্লান্তিহীন লড়াই করেছেন। শ্রমিক, কৃষক, মহিলা, যুব এবং শিশুদের অধিকারের দাবিতে লড়াই করে গেছেন। তিনি একজন কমিউনিস্ট ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিআইটিইউ গাজিয়াবাদ জেলার সভাপতি রাজবীর। ধাওয়ালে বারাণসীতে ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বিজেপি কর্মীদের জড়িত থাকার ঘটনার বিষয়ও উল্লেখ করে বলেন, শাসক দলের সঙ্গে থাকার কারণেই তিন মাস ধরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি গণতন্ত্রের উপরে আক্রমণ, বাকস্বাধীনতার উপরে আক্রমণ এবং সংসদে থেকে সাংসদদের বহিষ্কার সহ বিবিধ বিষয় উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ঘৃণা ভাষণ এবং বিভাজনের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ভেঙে দেওয়ার জন্য। এইধরনের ভয়ঙ্কর শক্তিকে পরাস্ত করার জন্য মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 
১লা জানুয়ারি, ১৯৮৯। এখানেই আক্রান্ত হয়েছিলেন সফদর হাসমি। গাজিয়াবাদ জেলার সাহিবাবাদের ঝান্ডাপুরে ধর্মঘটী শ্রমিকদের সমর্থনে তখন পথনাটক ‘হাল্লা বোল’ করছিলেন তিনি। পরের দিন মারা যান সফদর। তাঁর সঙ্গেই প্রাণ হারিয়েছিলেন শ্রমিক রাম বাহাদুরও। ৩ জানুয়ারি সফদর হাসমির শেষকৃত্য হয় দিল্লির নিগাহবোধ ঘাটের বৈদ্যুতিন চুল্লিতে। সফদরকে সমাহিত করা হয়নি। ৪ জানুয়ারি তাঁর স্ত্রী এবং লড়াইয়ের সহযোদ্ধা মালা হাসমির সঙ্গেই অসমাপ্ত সেই নাটক ঝান্ডাপুরে গিয়েই শেষ করেছিল জননাট্য মঞ্চ। তারপর থেকে প্রতিবছর ১লা জানুয়ারি সফদর দিবস পালিত হয় ঝান্ডাপুরে। জননাট্য মঞ্চ এবং সিআইটিইউ যৌথভাবে সেই অনুষ্ঠান করে। প্রতি বছরের মতো এবারেও ঝান্ডাপুরের আম্বেদকর পার্কে বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ, মহিলা ও শিশুরা উপস্থিত হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানস্থল সাজানো হয়েছিল স্লোগান এবং বাণী দেওয়া পোস্টার,ব্যানারে। জননাট্য মঞ্চের গান দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। জননাট্য মঞ্চের পক্ষ থেকে দুটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। জনসংস্কৃতির পক্ষ থেকেও একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। ড. ব্রিজেশ শর্মা আবৃত্তি করেন, ‘ফিলিস্তিনি বাচ্চা ক্যায়সা হোতা’ কবিতা। ঝান্ডাপুরের অনুষ্ঠানে ছিলেন বৃন্দা কারাত, পুষ্পেন্দ্র গ্রেওয়াল, মারিয়ম ধাওয়ালে, কে এম তিওয়ারি, অনুরাগ সাক্সেনা, মলয়শ্রী হাসমি, সুধন্ব্য দেশপান্ডে প্রমুখ। 
প্রতি বছরের মতই এবারও ‘সহমত’ দিনভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে। এবারে বেলা সাড়ে বারোটা থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান সন্ধ্যা পর্যন্ত হয়েছে হরকিষান সিং সুরজিৎ ভবনে। পথনাটক, সঙ্গীত, প্রদর্শনী, কবিতা পাঠ, ক্যালেন্ডার প্রকাশ এবং ‘ফির-ফির হত্যা গান্ধী কী’ নামের একটি বই প্রকাশ করা হয়। সীতারাম ইয়েচুরি, প্রভাত পট্টনায়েক, সি পি চন্দ্রশেখর, জয়তী ঘোষ, এম কে রায়না, সৈয়দা হামিদ, পরানজয় গুহ ঠাকুরতা, রাজেন্দ্র শর্মা, মানিনী চ্যাটার্জি, গীতা কাপুর, অচিন বিনায়ক, অশোক বাজপেয়ী, অপূর্বানন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন সহমতের অনুষ্ঠানে।

Comments :0

Login to leave a comment