MD Selim

লুটেরাদের সাম্রাজ্য টলিয়ে দেবার মতো ঝড় তুলতে হবে: সেলিম

রাজ্য

MD Selim


৩ নভেম্বর— গ্রামে গ্রামে লুটেরাদের বিরুদ্ধে যে হাওয়া বইতে শুরু করেছে তাকে ঝড়ে পরিণত করার আহ্বান জানালেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর থানা ময়দানে প্রয়াত সিপিআই(এম) নেতা কমরেড মনোরঞ্জন নাথের স্মরণসভায় তিনি বলেছেন, গ্রাম জাগানোর মিছিল শুরু হয়েছে নভেম্বর মাসে। তিন দিনেই দেখতে পাচ্ছি, হাজারে হাজারে মানুষ মিছিল করছেন। গ্রামে গ্রামে যে লড়াই চলছে তাতে নতুন হাওয়া বইছে। নভেম্বর মাসের শেষে এই হাওয়াকে একটা ঝড়ে পরিণত করতে হবে যাতে লুটেরাদের সাম্রাজ্য টলে যায়। গ্রাম থেকে নবান্ন পর্যন্ত লুটেরাদের টেনে হিঁচড়ে নামাতে হবে।
সেলিম বলেছেন, যারা লুটের পক্ষে তারা মানুষকে ভাগ করতে চায়। লুট যদি বন্ধ করতে হয় গরিব মানুষকে এককাট্টা করতে হবে লাল ঝান্ডার নিচে। এভাবেই প্রয়াত নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারব। শুধু ফুল মালা চোখের জলে নয়, লড়াইয়ের শপথেই আমরা বামপন্থীরা শ্রদ্ধা জানাই প্রয়াত নেতাদের প্রতি। 
লাল লাতিন আমেরিকাকে দেখিয়ে সেলিম বলেছেন, রাজনৈতিক আদর্শ থাকলে কী হয় ব্রাজিলে দেখুন। আমেরিকার মুখের ওপরে ওরা জবাব দিচ্ছে। লাতিন আমেরিকা লাল হয়ে গেছে, কিন্তু আরব দেশগুলি রাজনৈতিক আদর্শ আর ঐক্যের অভাবে পারছে না। ভারতেও মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে কেবল লাল ঝান্ডাই পারে ফ্যাসিবাদকে রুখতে, লাল ঝান্ডাকে শক্তিশালী করুন। লাল ঝান্ডা চিট ফান্ডের টাকায় কেনা কাপড়ের টুকরো নয়, শ্রমিক কৃষক বেকারদের জন্য লাল ঝান্ডা লড়াই করে শক্তিশালী হয়েছে। শহীদের রক্তে রাঙা এই পতাকাকে শেষ করা যাবে না।
এদিন পূর্বস্থলীর থানা ময়দানে সিপিআই(এম)’র প্রবীণ নেতা ও ৪ বারের নির্বাচিত বিধায়ক প্রয়াত কমরেড মনোরঞ্জন নাথকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন পূর্বস্থলীর মানুষ। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সুব্রত ভাওয়াল। এছাড়াও সভায় স্মৃতিচারণা করেছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যা অঞ্জু কর, পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক, জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন। প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরি, প্রয়াত মনোরঞ্জন নাথের পুত্র মনোজ নাথ ও কন্যা মহুয়া নাথ সহ পার্টি নেতৃবৃন্দ। ছিলেন প্রয়াত নেতার সহযোদ্ধা ১০০ বছরের প্রবীণ কিশোরী মোহন সেনও। 
স্মরণসভায় সেলিম বলেছেন, লুট, চুরির রাজত্ব চালাবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী ২০১১ সালে ক্ষমতায় বসেই সবার মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু ভয় দেখিয়ে লাল ঝান্ডাকে চুপ করিয়ে রাখা যায় না। কোথা থেকে এল টাকার পাহাড় ? মানুষকে লুটের টাকা। তৃণমূল সারা রাজ্য থেকে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো সব সম্পদ শুষে নিচ্ছে। যারা মোদী মোদী বলে হইচই করেছিল, বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে আনা হবে বলেছিল, সবাইকে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবে বলেছিল, নোটবন্দি করেছিল, তারা এখন চুপ। মমতা ব্যানার্জিও চিট ফান্ডের লুটের টাকা ফেরাবেন বলে চুপ করে আছেন। বিজেপি বলেছিল ভ্রষ্টাচার খতম করবে। তারা কী করেছে? লুটের টাকার খোঁজ না করে তারা কুতুবমিনারের নিচে, তাজমহলের নিচে কী আছে তার খোঁজ করছে! রিমোট কন্ট্রোল হাতে নিয়ে মোদী শাহ এরাজ্যের দুর্নীতির তদন্তে ইডি সিবিআই’কে স্লো করে রেখেছে। ভাইপোর নাম বাদ রেখেছে। আর মমতা ব্যানার্জি উপঢৌকন পাঠাচ্ছেন তাঁদের, পায়ে পড়ি ভঙ্গিতে। গুজরাটে ব্রিজ ভেঙে গেল, মানুষ মারা গেল। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি বলছেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু বলব না। উনি নিজেই নিজের মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রেখেছেন। বামপন্থীদের মুখ কিন্তু বন্ধ করা যায়নি। আসলে তৃণমূল আর বিজেপি কেউ কারো বিরোধী নয়। বামপন্থীরাই এই দক্ষিণপন্থীদের বিরোধী।
সেলিম এদিন বলেছেন, দেশভাগে ছিন্নমূল মানুষের অধিকার রক্ষায়, কৃষক শ্রমিকদের হক আদায়ে, হিন্দু মুসলিম সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন করেছে বামপন্থীরাই। কেন্দ্র এবং রাজ্যে ক্ষমতায় বসে যারা লুট চালাচ্ছে তারা মানুষকে মন্দির মসজিদের নামে ভাগ করতে চায়। এরাজ্যে কাজ না পাওয়া মানুষ ভিন রাজ্যে গেলে বাংলাভাষী বলে তাঁদের ওপরে বিজেপি বুলডোজার চালাচ্ছে। মোদী সরকারের আমলে বাংলা একটাও নতুন প্রকল্প পেয়েছে? বিনিয়োগ পেয়েছে? রেল লাইন পেয়েছে? কিছুই পায়নি। বরং কাশ্মীরকে যেভাবে ভেঙেছে সেইভাবে উত্তরবাংলাকে ভেঙে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে চাইছে। এরজন্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী, জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে মমতা ব্যানার্জি বৈঠক করেছেন নিজেকে আর ভাইপোকে বাঁচাতে। আমরা বামপন্থীরা বলছি, রাজ্যকে ভাগ করতে দেবো না। 

Comments :0

Login to leave a comment