মণিরুল হক: হাওড়া
শনিবার, ৩৭ দিনের মাথায় ইনসাফ যাত্রা পৌঁছালো হাওড়ায়। আর সেই ইনসাফ যাত্রায় হাঁটলো শহীদ আনিস খানের গোটা পরিবার।
রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে অন্যান্য সরকারি ক্ষেত্রগুলির মতো রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আওতাধীন থাকা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতেও ঠিকা শ্রমিকের পরিমাণ বাড়াতে শুরু করে। আর চলেছে তৃণমূল নেতাদের ঠিকাদারি। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই বেআইনিভাবে বিক্রি, তৃণমূলী গাজোয়ারিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি, তৃণমূলের নেতাদের দ্বারা কোটায় ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ চলছে। এদিন সকালে মেচেদা থেকে ইনসাফ যাত্রা কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশ দিয়েই কোলাঘাট খারিশা, বিবেকানন্দ মোড়, কোলাঘাট বাজার হয়ে রূপনারায়ণ নদের উপর শরৎ সেতু হয়ে হাওড়া জেলায় প্রবেশ করে। এই পুরো যাত্রাপথে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বাঁচানোর যেমন দাবি ছিল পাশাপাশি পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, আরও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের ইউনিট গঠন, স্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট শিল্প তালুক ও হলদিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকা পুনরুজ্জীবনের ডাক দিলেন যুবরা।
এদিন দুপুর একটা নাগাদ কোলাঘাট ব্রিজ থেকে ডিওয়াইএফআই’র ইনসাফ যাত্রা পূর্ব মেদিনীপুর ছেড়ে হাওড়ার নাওপলায় প্রবেশ করে। উপস্থিত ছিলেন ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, সংগঠনের নেতা শেখ ইব্রাহিম, হাওড়া জেলা সভাপতি সুভাষ দে, সম্পাদক সরোজ দাস, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা দিলীপ ঘোষ, নিরঞ্জন সিহি প্রমুখ। সেখানে ইনসাফ যাত্রার পদযাত্রীদের সংবর্ধনা জানানো হয়। একটি সংক্ষিপ্ত সভাও হয়।
এরপর পদযাত্রাটি যায় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি। শরৎচন্দ্রের মূর্তিতে মাল্যদান করেন যুব নেতৃত্ব। বাগনান ২নং ব্লকের শরৎচন্দ্র গ্রাম পঞ্চায়েত। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দিদি অনিলা দেবীর শ্বশুরবাড়ি ছিল সামতাবেড়ের গোবিন্দপুরে। জীবনের শেষ ১৪ বছর এই বাড়িতেই কাটান তিনি। ২০০৮সালে বামফ্রন্ট সরকার, রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ও তৎকালীন বামফ্রন্ট পরিচালিত হাওড়া জেলা পরিষদের সহযোগিতায় ও অর্থানুকূল্যে ভগ্নপ্রায় শরৎচন্দ্রের বাড়িকে মেরামত করে ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয়। বামফ্রন্ট সরকারের চেষ্টায় ও শরৎ মেলা কমিটির আন্দোলনের ফলে কেন্দ্রীয় প্রকল্প সার্কিট ট্যুরিজিমের আওতায় আসে শরৎচন্দ্রের সামতাবেড়ের বাড়ি। কিন্তু ২০১০ সালের পরবর্তীকালে এই বাড়ির প্রয়োজনীয় কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। যুব নেতৃবৃন্দ কথা শিল্পী শরৎচন্দ্রের বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের ও সংরক্ষণের দাবি জানান।
পানিত্রাস বড়াবাড় পোলে বক্তব্য রাখেন ধ্রুবজ্যোতি সাহা। এরপর ইনসাফ যাত্রা আসে বাইনান ষষ্ঠীতলা মোড়ে। পথে অগণিত জায়গায় যুবদের ইনসাফ যাত্রাকে সংবর্ধনা ও পুষ্পবৃষ্টিতে অভিবাদন জানায় অসংখ্য মানুষ। বিকালে প্রতিবাদী ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতে যান যুব নেতৃবৃন্দ। তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন মীনাক্ষী মুখার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহা সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা। এরপর তাঁরা যান আনিসের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে। যুবনেতাদের সঙ্গে ছিল আনিসের বাবা সালেম খান ও দাদা সাবির খান। পরে বাইনান ষষ্ঠীতলা মোড়ে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মীনাক্ষী মুখার্জি।
বাইনান ষষ্ঠীতলা থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শেষ বাগনান লাইব্রেরি মোড়ে। সেখানে একটি সমাবেশ হয়। পরে উলুবেড়িয়া গোরুহাটা মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশগুলিতে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে যত লাশ পড়েছে তার সওদা করেছে তৃণমূল সরকার। কিন্তু ওরা জানে না সব লাশের সওদা হয় না। বিক্রি হওয়া তো দূরের কথা চোখে চোখ রেখে লড়াই করছে তৃণমূল সরকারের সঙ্গে আনিসের বাবা সালেম খান। ১০০০ দিন রাস্তায় বসে আছেন রাজ্যের মেধাবী ছেলেমেয়েরা। একটা সরকার কতটা অমানবিক ও দুর্নীতিগ্রস্ত হলে, মেধাবী ছাত্রদের পরিবর্তে টাকার বিনিময়ে সাদা খাতা জমা দেওয়া ছেলেদের হাতে চাকরি তুলে দেয়। এর জবাব দিতে আগামী ৭ জানুয়ারি ব্রিগেড ভরাতে হবে।
Comments :0