Modi

‘স্তম্ভিত’ মোদী মুখ খুললেও ইজরায়েলের নাম নিলেন না

জাতীয় আন্তর্জাতিক

গোটা বিশ্ব এখন ইজরায়েলের ‘যুদ্ধ অপরাধ’-এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, দাবি তুলেছে এই ‘গণহত্যা’ বন্ধের। গাজা সিটির আল-আহলি হাসপাতালে ইজরায়েলের সরাসরি বোমাবর্ষণে অন্তত পাঁচশো মানুষের মৃত্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য শুধুই ‘স্তম্ভিত’ বলে দায় সেরেছেন। প্যালেস্তাইন এবং ইজরায়েল– দুই স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে ভারতের পুরানো অবস্থান থেকে সরে এসে এবারের সংঘর্ষের পরেই প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথমেই বিবৃতি দিয়ে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে গেছেন। তারপর ১২দিন ধরে শরণার্থী শিবির, শহর-গ্রাম সব জনপদে ভয়াবহ আক্রমণ দেখে মুখ বুজেছিলেন মোদী। কিন্তু গত রাতে বর্বরতা সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে হাসপাতালে বোমা ফেলে ইজরায়েল মানুষ মারার দেশ-বিদেশের প্রতিক্রিয়া নীরবতা ভেঙে বুধবার দুপুরে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে এতগুলি সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনায় আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। যারা জখম হয়েছেন, তাঁদের দ্রুত সুস্থতার কামনা করছি।’ একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংযোজন, ‘যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই ঘটনার পিছনে যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।’ লক্ষণীয়ভাবে এদিনের বক্তব্যে ইজরায়েল শব্দটাই এড়িয়ে গেলেন মোদী। খোলসা করলেন না, শাস্তি কার হওয়া উচিত।
আল-আহলি হাসপাতালে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে গোটা বিশ্ব। এই হামলাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্যালেস্তান সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তার কথায়, ‘শয়ে শয়ে মানুষকে চোখের সামনে কাতরাতে কাতরাতে মরে যেতে দেখেছি। তাঁদের যন্ত্রণার শব্দ এখনও কানে বাজছে। সেই দৃশ্য যে কতটা ভয়াবহ তা বলে বোঝাতে পারব না।’ গাজা উপত্যকায় ইজরায়েলী বোমা হামলায় ইতিমধ্যেই ১১৫টি চিকিৎসা কেন্দ্রে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অবিরাম বোমা হামলায় অনেক চিকিৎসাকর্মীও নিহত হয়েছেন বলেও খবর। এদিকে গাজা হাসপাতালে বোমা হামলার ঘটনার বিরুদ্ধে আরব দেশগুলির বিক্ষোভ বাড়তে শুরু করেছে।
স্বাভাবিকভাবই এমন নৃশংস হামলা কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সিপিআই(এম) সহ বামপন্থীরা। সিপিআই(এম) তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, ‘গত রাতে গাজার হাসপাতালে বোমাবর্ষণ যুদ্ধ অপরাধ ছাড়া আর কিছু নয়। এই গণহত্যা বন্ধ হোক।’ ওই হ্যান্ডেলে আরও লেখা হয়েছে, ‘শুরু থেকেই ভারত সবসময় প্যালেস্তাইনের পাশে ছিল এবং দুই রাষ্ট্রের পক্ষে সওয়াল চালিয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের সেই সংকল্পকে আরও একাধিক বার পুনর্ব্যক্ত করার সময় এসেছে্।’
পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘এই ঘটনাকে যুদ্ধ অপরাধ হিসাবে ঘোষণা ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গোটা বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত।’ সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর আরেক সদস্য বৃন্দা কারাত গাজার হাসপাতাল লক্ষ্য করে ইজরায়েলী বোমাবর্ষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অবশ্যই নীরবতা ভাঙতে হবে এবং ইজরায়েল সরকার যা করছে ও করেছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। সিপিআই(এম) নেতা-নেত্রীরা যখন এমন কড়া প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন, তখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী। পরে মুখ খুললেও শুরুতেই ইজরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়া ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইজরায়েল শব্দটাই বর্জন করলেন। 
সারা ভারত কিষান সভা গাজার হাসপাতালে এই বোমাবর্ষণকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে মন্তব্য করেছেন। এক বিবৃতিতে মোদীর কড়া সমালোচনা করে কিষান সভা বলেছে, ‘ইজরায়েলকে সমর্থন করে মোদী সরকার প্যালেস্তাইন নিয়ে ভারতের বহু পুরানো অবস্থান থেকে সরে গিয়েছে।’ তাঁদের কথায়, গত সপ্তাহেই ইজরায়েল চারটি হাসপাতালে বোমা বর্ষণ করেছিল। তাতে ৫০০’র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অবিলম্বে প্যালেস্তাইনে ইজরায়লী আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। সেখানে আর্ত মানুষের জন্য সাহায্য পাঠাতে হবে। সিপিআই(এমএল)’ও এক বিবৃতিতে গাজার হাসপালে হামলায় ভারত সরকারের নিন্দার দাবি তুলেছে। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ নীরব দর্শক হয়ে সব দেখে যাচ্ছে। এমনটা চললে বিশ্বের শান্তি বিঘ্নিত হবে।

Comments :0

Login to leave a comment