SAKSHI BRIJBHUSHAN MURDER THREAT

সাক্ষীর মা'কে হুমকি ব্রিজভূষণের গুন্ডাদের

জাতীয়

 মেয়ের মুখ বন্ধ করতে এবার মা’কে খুনের হুমকি দিতে শুরু করল ব্রিজভূষণের গুন্ডা বাহিনী। কুস্তিগির সাক্ষী মালিক বুধবার সরাসরি অভিযোগ করেছেন বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে। সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, ‘‘গত দুই-তিন দিন ধরে ব্রিজভূষণের লোকজন খুবই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফোন করে বারবার আমার মা’কে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার পরিবারের যে কারোর বিরুদ্ধে যখন-তখন মামলা ঠুকে দেওয়ার হুমকিও পাচ্ছি।’’ যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ-ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিং ফেডারেশনের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর ওইদিনই (২১ ডিসেম্বর) কাঁদতে কাঁদতে কুস্তি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা করেন সাক্ষী। প্রতীক অর্থে নিজের বুট খুলে রেখে দেন টেবিলের উপর। তারপর একে একে বীনেশ ফোগট, বজরঙ পুনিয়ারা প্রতিবাদে সরব হন। পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেন বজরঙ, বীনেশ ফেরান অর্জুন এবং খেলরত্ন। দু’জনেই চিঠি লেখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। মোদী বা তাঁর সরকারের কেউই কুস্তিগিরদের যন্ত্রণাকে পাত্তা দেয়নি। 
সাক্ষী এদিন স্পষ্ট করে দেন, ফেডারেশনের নতুন কমিটি নিয়ে সার্বিকভাবে তাঁর কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ব্রিজভূষণের অনুচর ওই সঞ্জয় সিংকে ফেডারেশনে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী এই কুস্তিগির বলেন, ‘‘সরকার আমাদের কাছে অভিভাবকের মতো। আমি তাই সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, কুস্তিগিরদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন। সঞ্জয় সিংয়ের আচরণ দেখুন। এরকম একজন ফেডারেশনে যুক্ত থাকতে পারেন না। নতুন কমিটির আর কাউকে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। অ্যাডহক কমিটি নিয়েও আমাদের কোনও অসুবিধা নেই।’’ ব্রিজভূষণ নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলেও কড়া ভাষায় অভিযোগ করেছেন সাক্ষী। বলেন, ‘‘ফেডারেশনের ভোটের ফলাফল বেরনোর পর কোনও আলোচনা ছাড়াই বিজেপি সাংসদ জুনিয়র ন্যাশনালের ঘোষণা করে দেন নিজের বাড়িতে।’’ সামাজিক মাধ্যমে ধেয়ে আসা মোদী বাহিনীর একাধিক কটূক্তির বিরুদ্ধে কুস্তিগির বলেছেন, ‘‘যাঁরা আমাদের নিয়ে কুমন্তব্য করছেন, তাঁদের মনে রাখা দরকার যে নিজেদের ঘরেও মা-বোন আছেন।’’ 
ফেডারেশনের নতুন কমিটিকে অবশ্য চার দিনের মধ্যেই সাসপেন্ড করে দেয় কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক। অ্যাডহক কমিটি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই অ্যাডহক কমিটির কাছে সাক্ষী আরজি জানান, ‘‘আমি চাই একজন কুস্তিগিরের কেরিয়ারও আমাদের জন্য বাধার মুখে পড়ুক। অ্যাডহক কমিটি ইতিমধ্যেই সিনিয়র ন্যাশনাল ঘোষণা করেছে। দ্রুত অনূর্ধ্ব ১৫, অনূর্ধ্ব ১৭ এবং অনূর্ধ্ব ২০’র ন্যাশনালের দিনও ঘোষণা করা হোক।’’
এই একই আরজি জানান বজরঙ পুনিয়াও। কিন্তু এদিন দিল্লির যন্তর মন্তরে কমপক্ষে ৩০০ কুস্তিগির বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাক্ষী-বীনেশ-বজরঙের বিরুদ্ধে। এই তিনজনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। অভিযোগ করেন, সাক্ষীদের জন্যই তাঁদের কেরিয়ার ডুবতে বসেছে। বেশ কিছু ব্যানারও দেখা যায় এই বিক্ষোভ-আন্দোলনের ময়দানে। সেই ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘‘ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড রেসলিং (ইউডব্লিউডব্লিউ) এই তিন কুস্তিগিরের কবল থেকে আমাদের বাঁচান।’’ বিক্ষোভকারীদের একজন সুনীল রানা বলেন, ‘‘এটা প্রতীকী প্রতিবাদ। আমরা কেন্দ্রের সরকারকে ১০ দিন সময় দিচ্ছি। সাসপেনশন তুলে নিন এবং ন্যাশনাল শুরু করুন। যদি তা না হয়, তাহলে বীনেশ, বজরঙের মতোই আমরাও অর্জুন সহ অন্যান্য পুরস্কার ফেরত দিতে শুরু করব।’’ সুনীল অর্জুন পুরস্কার পেয়েছেন এবং ২০২৩ এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জও জিতেছেন। মুজফ্ফরনগর স্টেডিয়ামের প্রশিক্ষক প্রদীপ কুমার বলেন, ‘‘উত্তর প্রদেশের ৯০ শতাংশের বেশি আখড়া আমাদের এই প্রতিবাদের সঙ্গে আছে। উলটোদিকে তিন জন কুস্তিগির এবং আমাদের সঙ্গে লক্ষাধিক।’’ বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করা সাক্ষী-বীনেশ-বজরঙদের খাটো করতে এবং তাঁদের দাবিদাওয়া-আন্দোলনকে খর্ব করতেই এবার ময়দানে এই কুস্তিগিরদের নামানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment