TMC VIOLENCE

সন্ধ্যায় মন্ত্রীর সঙ্গে, রাতে খুনের অভিযোগে ধৃত তৃণমূল নেতা

রাজ্য

Tmc violence CPIM TMC Birbhum

সন্ধ্যাবেলায় মন্ত্রীর সঙ্গে খোশগল্প করেছেন। ছবি তুলিয়েছেন সার্কিট হাউসে। শনিবার রাতে সেই তৃণমূল নেতাকেই জনরোষে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় পুলিশ!
সিউড়ি-১নং ব্লকের ওই তৃণমূল নেতা এক যুবক খুনে অভিযুক্ত। খুন হয়েছে শনিবার সন্ধ্যায় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সিউড়িতে থাকাকালীনই। খুনের আগে পরে প্রচুর বোমাও ছোঁড়ে তৃণমূলীরা। রবিবার সকালেও তা চলে। আর এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সম্পর্কে রবিবার সকালে প্রশ্ন করা হলে ফিরহাদ হাকিম অম্লান বদনে বলে যান, ‘‘নিশ্চিতভাবেই প্রশাসনিক ব্যর্থতা রয়েছে। পুলিশের শীর্ষস্তরে বলেছি সিউড়িতে পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন করতে।’’ সেই সঙ্গে ফিরহাদ হাকিম আরও বলেছেন,‘‘আমি সিউড়িতে সার্কিট হাউসে বসেই এদিন সকালে বোমার আওয়াজ শুনেছি।’’ ধৃত তৃণমূল নেতার নাম কাজল শাহ।

শনিবার সন্ধ্যায় নিহত যুবকের নাম ফায়জুল শেখ (১৮)। সিউড়ি ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের লেঠেল বাহিনীর নিয়ন্ত্রক কাজল শাহের বিরুদ্ধেই এবার খুনের অভিযোগ। রবিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনার প্রতিবাদে সিউড়িতে প্রতিবাদ মিছিল করে সিপিআই(এম)।

খুন, বোমা ছোঁড়াছুঁড়ি হয়েছে সিউড়ি শহর থেকে ৫ কিমি দূরে বাঁশঝোড় গ্রাম। সেখানে গত কয়েকমাস চলছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ঝামেলা। একদিকে রয়েছে বালি মাফিয়া হিসাবে পরিচিত তৃণমূল নেতা কাজল শাহ। অপরদিকে রয়েছে বালিঘাটের বখরার বাটোয়ারা নিয়ে বিবাদে কাজল শাহের সঙ্গ ত্যাগ করা তার প্রাক্তন স্যাঙাতরা। গত কয়েক মাস ধরেই দুপক্ষের হানাহানি চলছে। পুলিশ বারবার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। সেই বিবাদের জেরে এবার এক খেটে খাওয়া তরতাজা ছেলেকে খুন গোটা গ্রামকে ক্ষুব্ধ করেছে।

সিউড়ির সবজির পাইকারি বাজারে মুটিয়ার কাজ করা ফায়জুল শেখের কোনও যোগ ছিল না এই সব বিবাদে। গ্রামের প্রবীণ হরমুজ শেখ, নিশাপতি বাদ্যকরের কথায়, ‘‘এমন শান্ত নিরীহ ছেলে হয় না। তাকে এভাবে মেরে ফেলবে ভাবিনি। গ্রামে কোনওদিন হয়নি এমন খুন।’’

ফায়জুলকে শনিবার সন্ধ্যায় গ্রাম লাগোয়া একটি পুকুর পাড়ে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে এলাকার মানুষ। মদের ভাঙা বোতল দিয়ে পেছন থেকে তাঁর বুকে, পেটে আঘাত করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। নিহত ফায়জুলের বাবা মাহফুজ শেখ কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছেন, ‘‘ছেলেটা আমার কী দোষ করেছিল? ও তো কোনও কিছুর সঙ্গেই যুক্ত নয়।’’ কারা এমন করল প্রশ্ন করতে একরাশ ক্ষোভ উগরে মাহফুজ জানান,‘‘ওই কাজল শাহ, শেখ জিয়রদের দলবলই করেছে। ওদের মাথায় আছে তৃণমূলের হাত। পুলিশ তো ওদেরই সেলাম করে। ছেলে খুন হওয়া পর পুলিশ গ্রামে এলে পুলিশের সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছিল জিয়ার শেখরা। উলটে আমার বাড়ির সামনেই বোমাবাজি করছিল। পুলিশ দেখছিল। তারপর আমি চেঁচামেচি করাতে পুলিশ ওকে ধরে।’’

গাঁয়ের তরতাজা একটি ছেলেকে এভাবে কুপিয়ে খুন মেনে নিতে পারেনি গ্রাম। জনরোষ আছড়ে পড়ে অভিযূক্ত তৃণমূল নেতা কাজল শাহ ও তার দলবলের বিরুদ্ধে। জনরোষে কাজল শাহের ডেরা একটি চালাঘরে আগুন লাগায় উত্তেজিত জনতা। বেশ কয়েকটি বাইক তছনছ করা হয় বলে অভিযোগ। গ্রামের বাসিন্দা কিশোর ডোম, সম্মত সেখরা উদ্বেগের সঙ্গে জানান,‘‘এমন ঘটনা গ্রামে প্রথম। একটু আধটু মারামারি, বোম ফাটানো অবধিই শেষ ছিল। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে যা চলছে তাতে আমরাই আতঙ্কিত।’’ 
গ্রাম ঘুরে স্পষ্ট বোঝা গেছে গোটা গ্রামের রাগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী ও পুলিশের ভূমিকা নিয়েই। গ্রামের এক প্রবীণের কথায়,‘‘কিছুদিন আগেই মসজিদ কমিটির তরফে গ্রামে শান্তি রক্ষার জন্য সবাইকে নিয়ে আপস মীমাংসা করা হয়েছিল। কিন্তু কে কার কথা শোনে।’’

জনরোষে ফুঁসে ওঠা গ্রামের ক্ষোভ দেখে পুলিশ তড়িঘড়ি গ্রেপ্তার করে ফেলে ওই তৃণমূল নেতাকে। ধৃত তৃণমূল নেতা নাম কাজল শাহকে বছর তিনেক আগে রাজ্যের মানুষ চিনেছিল জেলা শাসকের বাংলোয় বোমা মারার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ায়।

গোটা ঘটনায় জড়িয়ে গেছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে তিনি শনিবার এসেছিলেন সিউড়িতে। সেই সন্ধ্যায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা কাজল শাহকে দেখা গেছে দলের কার্যালয়ে, মন্ত্রীর সঙ্গে পথ হাঁটতে। এমনকি সার্কিট হাউসে মন্ত্রীর পাশে তার হাজির থাকার ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। সেই নিয়ে প্রশ্ন  করা হলে ফিরহাদ হাকিম প্রশাসনিক ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছেন। ঘটনার পর বেকায়দায় পড়া ফিরহাদ হাকিম রবিবার তলব করেন ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) শ্যাম সিংকে। তিনি জানান,‘‘পনেরো জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তল্লাশি চলছে।’

Comments :0

Login to leave a comment