Left in Panchayat

‘বামপন্থীরাই পারে, বলতে হবে পঞ্চায়েতের লড়াইয়ে’

রাজ্য জেলা

দীঘায় সমাবেশের একাংশ। মঞ্চে সূর্য মিশ্র, অমিয় পাত্র এবং নেতৃবৃন্দ।

তৃণমূল এবং বিজেপি’র লক্ষ্য এক। গরিবকে একশো দিনের কাজ দেয়নি দু’দল মিলেই। দ’দলই চাইছে যাতে বামপন্থীদের আটকানো যায়। দুই দলের বিরুদ্ধেই লড়াই করতে হবে বামপন্থীদের। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের কাছে আমরাই পৌঁছে দেব বিকল্পের বার্তা। দু’দলেরই বিকল্প চাইছেন মানুষ। বলতে হবে যে বামপন্থীরাই পারে, বামপন্থীদের পক্ষেই লড়াই করা সম্ভব।

রবিবার দীঘায় সিপিআই(এম)’র ডাকে জনসভায় এই আহ্বান জানিয়েছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র। সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নেরও রাজ্য সম্পাদক তিনি। বক্তব্য রেখেছেন পার্টির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি, পার্টিনেতা হিমাংশু দাস। সভায় প্রধান বক্তা পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র। 

পাত্র বলেছেন, ‘‘একটা ট্রাক্টর জমি চষে দিচ্ছে, কাজ হারাচ্ছেন খেতমজুররা। ধানকাটার একটা মেশিনে ১০০ জনের কাজ বন্ধ হচ্ছে। রেগার কাজ জরুরি। বছরে ২০০ দিন কাজ হওয়া প্রয়োজন।’’

রাজ্যে একশো দিনের কাজ বন্ধের জন্য তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপি’র কড়া সমালোচনা করেছেন পাত্র। তিনি বলেছেন, ‘‘তৃণমূল ব্যাপক চুরি করছে। চুরি প্রমাণিত। মমতা ব্যানার্জিই শিখিয়েছেন, চুরি করতে ভয় পেয়ো না। ঠিক। কিন্তু দিল্লির বিজেপি সরকার কি ঠিক করছে? চোরকে শাস্তি না দিয়ে শুকিয়ে মারছে গরিব মানুষকে। গ্রামের সবচেয়ে গরিব খেতমজুরকে। রাজ্যে রেগার কাজ বন্ধ করে দিল দিল্লি। এই কাজ দিল্লি করতে পারে না।’’ 

কলকাতায় এসে বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ দলেরই নেতাদের জিজ্ঞেস করেছেন, বামপন্থীরা বাড়ছে কেন। বিজেপি কেন বাড়ছে না। সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে পাত্র বলেন, ‘‘বিজেপি কেবল কমছে না তৃণমূলও কমছে। গ্রামে গ্রামে হয়েছে পদযাত্রা। চলছে আবাস প্রকল্পে গরিবকে ঘর দেওয়ার জন্য লড়াই, ডেপুটেশন। বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’দলই চাইছে বামপন্থীরা যাতে না বাড়তে পারে।’’ 

তিনি বলেছেন, আসলে বামপন্থীদের পক্ষে মানুষের সমাবেশ আটকাতে চাইছে আরএসএস। আরএসএস’র সরাসরি অনুগামী বিজেপি এবং পরোক্ষ অনুগামী তৃণমূল। এ রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোটে টান পড়ার আশঙ্কায় তৃণমূল সরাসরি বিজেপি’র সঙ্গে যেতে পারে না। জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরিতে যে আরএসএস প্রবলভাবে সক্রিয়, সে কথা মনে করিয়েছেন পাত্র। সংবাদমাধ্যমে যে সেই উদ্দেশ্যে প্রচার হচ্ছে, সেই বিষয়েও সতর্ক করে সমবায় নির্বাচনের উদাহরণ দেন তিনি। 

পাত্র জানিয়েছেন, তৃণমূল বিভিন্ন পাড়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি’কে সহায়তা করতে নেমেছে টাকার থলি নিয়ে। 

পাত্র বলেন, ‘‘ঋণখেলাপি না হলে যে কেউ সমবায়ে প্রার্থী হতে পারেন। কোনও দলীয় প্রতীকে ভোট হয় না। তৃণমূলের চুরিতে অতিষ্ঠ সদস্যরা একজোটে প্রার্থী ঠিকও করেন। জয়ীদের মধ্যে কেউ আগে হয়ত বিজেপি’কে ভোট দিয়েছেন। এবার তা নিয়ে সংবাদপত্রে প্রচার চলল বাম-বিজেপি জোটের।’’ 

পার্টির অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি জানান যে দু’দলের কোনোটির সঙ্গেই বোঝাপড়া বরদাস্ত করা হবে না। সেই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘কিন্তু আগের নির্বাচনে বিজেপি’কে ভোট দিয়েছেন বলে এবার আমাদের সমর্থন করতে পারবেন না? আর কখনও বামপন্থীদের ভোট দিতে পারবেন না?’’ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ বিকল্প চাইছেন। বিকল্পের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে আমাদেরই। পঞ্চায়েত ভোটে সেই লক্ষ্যে চলবে লড়াই। বলতে হবে যে দু’দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে বামপন্থীরাই।’’

দীঘার সঙ্কট নিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন নিরঞ্জন সিহি এবং হিমাংশু দাস। দীঘায় উন্নয়নের নামে ঝাউগাছ কেটে সাফ করা হচ্ছে। বোল্ডার পড়ছে আর হচ্ছে কংক্রিটের নির্মাণ। পরিবেশবিধির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না মুনাফার লোভে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা আবাসন করছে, বড় দোকান খুলছে। তৃণমূলকে কোটি কোটি টাকা দিতে পারে যারা কেবল তাদের বন্দোবস্ত। আর বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র থেকে সমানে উচ্ছেদ করা হচ্ছে হকারদের। তাঁরাও বিকল্প চাইছেন। সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা তাঁদের জীবিকার সঙ্কটে পাশে থাকবে। 

(ছবি:দিলীপ সেন)

Comments :0

Login to leave a comment