প্রবন্ধ | মুক্তধারা
শালপাতার দেশ
সাঁঝবাতি
আমার শহর... ঠিক কতখানি আবেগ যে এই শব্দটাই জড়িয়ে থাকে তা শহর ছেড়ে দূরে না গেলে হয়তো বুঝতে পারতাম না,প্রত্যেকবারের মতই হোস্টেল যাওয়ার পথে যখন একটু একটু করে ছেড়ে যাচ্ছি তাকে, ইচ্ছে হলো মনখারাপটা একটু খাতায় বেঁধে রাখি।
আমায় যদি প্রশ্ন করা হয় এখানে এমন কি ভাল্লাগে... আমি বলি সব!!! সকালের সবজি বাজার, মোড়ের মাথায় ফুলের দোকান গুলো, বিকেল হলেই চায়ের ঠেকে জমা ভিড়,স্কুলের মাঠে ফুটবল,রাতে রাস্তার আলোয় চিকচিক করা শালপাতা,টিউশন ফিরতি সাইকেল আর ওই শালগাছ সব ভালো লাগে আমার। লোকে বলবে বাড়াবাড়ি... কিন্তু গুরুদেব বলেছেন "তারে বলে বলুক লোকে মন্দ, বিরহে তার প্রাণ বাঁচেনা।" আমার অবস্থাও ঠিক তাই।
ইট-কাঠ-পাথর,জঙ্গল-পাহাড়-নদী আর খানিকটা আবেগ ভালোবাসা মায়ার শহর আমার ঝাড়গ্রাম। যার লালমাটির পথ থেকে কালো পিচের রাস্তা,যার ফাঁকা গলি থেকে ট্র্যাফিক এর ভিড়, শুকনো দুপুর থেকে জল জমা রোড সব আমার বড্ড কাছের।আমার মতোই যেন বড়ো হচ্ছে সে, ব্যস্ত হচ্ছে আরও।ফ্ল্যাট আর শপিং মলের ভিড় বাড়ছে ঠিকই তবু আমার যেন অভিযোগ নেই একফোঁটাও!
ওই যে মেইন রোড তার দুপাশে শাল গাছের সারি, জানিনা কেন এটুকু দেখেই কেমন যেন মন ভালো হয়ে যায়। নগরায়ণ আর সবুজায়ন এর মতো বইমুখো শব্দগুলো যেন গলায় গলায় ভাব করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার শহর জুড়ে,একটুখানি লড়াই নেই তাদের মধ্যে। শীতের সময় হলুদ হয়ে আসে শালবনের সমস্ত পাতা, পাতা খসানোর সময় হয়ে ওঠে, শুকনো পাতার রঙে সেজে ওঠে অরণ্যসুন্দরী। ঠিক বসন্ত এলেই কচি কচি পাতায় ভরে ওঠে সব গাছ। ছোটো ছোটো শাল ফুল বাতাসে ঝরে পড়ে। শহরের রং তখন সবুজ। গ্রীষ্ম আর বর্ষার মাঝামাঝি শাল ফলে ভরে ওঠে শাখা, শুকনো হতেই চরকির মতো ঘুরে ঘুরে খসে পড়ে রাস্তায়..শহর জুড়ে চলে সেই নৃত্যের মহড়া। সারাটা বছর জুড়ে ঋতু আর রঙে মেতে থাকে শালবন আর শহর ঝাড়গ্রাম।
মহীনের ঘোড়াগুলিতে কবি যেমন লিখেছেন "আমি প্রায় এখনও খুঁজি সে দেশ" কবি তাতে যে দেশের কথাই বলুন না কেন আমি নিশ্চিত আমার চোখে সে দেশ শালপাতার দেশ, আমার ঝাড়গ্রাম।যেখানে দাঁড়িয়ে আজও বুক ভরে শ্বাস নেওয়া যায়। সবুজ গন্ধে ঠিক হয়ে যায় শরীর মনের সমস্ত অসুখ।
ছবি : লেখক / জঙ্গলমহল
Comments :0