SILIGURI WBCUTA PRESS MEET

ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা, ৯ ডিসেম্বর সংসদ অভিযানের ডাক

রাজ্য জেলা

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সাধারণের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে শিক্ষাকে বেসরকারীকরণ করে দেবার চেষ্টা করছে। উত্তরবঙ্গের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অব্যবস্থা ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠেছে। কলেজগুলো পর্যাপ্ত শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী সহ অন্যান্য পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে। কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতির ফলে উত্তরবঙ্গের পরিকাঠামোহীন কলেজগুলির ছাত্রছাত্রীরা চরম সমস্যার সম্মুখীন। এই পরিস্থিতিতে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করলো পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)। সংগঠনের দার্জিলিঙ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ি কলেজপাড়া এবিটিএ ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠক হয়। সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিলয় সাহা, সহ সভাপতি অধ্যাপক প্রবোধ মিশ্র, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ভিনায়ক ভট্টাচার্য, সংগঠনের দার্জিলিঙ জেলা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তাপস সরকার সহ অন্যান্যরা। 
জনবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ বাতিলের দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি সম্পর্কে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, অভিভাবক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি, প্রাক্তনী সহ সমাজের বিভিন্ন মহল অবহিত। ২০২২সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ স্থায়ী উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য এসএসসি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে জেল খাটছেন। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্রকে অস্থায়ী উপাচার্য করে নিয়ে আসা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুবীরেশ ভট্টাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫বিঘা জমি কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে বেসরকারি মালিকের হাতে তুলে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলো, সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়েছে ওমপ্রকাশ মিশ্র। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সমিতি, অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি সহ সকলের আন্দোলনের ফলে সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। 
নেতৃবৃন্দ বলেন, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলার, ফিনান্স অফিসার, কন্ট্রোলার, রেজিস্ট্রার সহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সমস্ত পদ শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং অন্যান্য পরিকাঠামোর অভাবে পঠনপাঠন এবং গবেষণা বন্ধ হতে বসেছে। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাশের হার যেমন ব্যাপক হারে কমেছে, তেমনি অকৃতকার্যের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে প্রকাশিত স্নাতকোত্তর পর্বের বিভিন্ন পরীক্ষায় পাশের হার ১০ শতাংশের নীচে নেমেছে। যা সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার ইঙ্গিত বহন করছে। গবেষণার সুযোগ দ্রুত কমেছে। বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবরেটরিগুলি টাকার অভাবে বন্ধ হতে বসেছে। টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে নতুন বই কেনা বন্ধ। অথচ লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায় করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলছে কার্নিভাল। কেন্দ্রীয় সরকার, ইউজিসি এবং রাজ্য সরকার সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সুষ্ঠভাবে চালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দিচ্ছে না। ফলে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অর্থাভাবে ধুঁকছে। স্থায়ী শূন্যপদ পূরণ হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে চুক্তিভিত্তিক এবং অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। স্থায়ী চাকরির অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০০’র বেশি কর্মী দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী করার কোন উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। 
নেতৃত্ব আরও অভিযোগ করে বলেন, অগনতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যাক্তি। সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল ও প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রীর দ্বৈরথ ফসল ভুগতে হচ্ছে। পিএইচডি ডিগ্রি মিলছে না। কনভোকেশন হচ্ছেনা। নতুন নিয়োগ বন্ধ। সরকার পোষিত শিক্ষাব্যবস্থা মৃতপ্রায়। বেসরকারি শিক্ষাকে উৎসাহিত করছে সরকার। সম্প্রতি ক্যাগ রিপোর্টে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আধিকারিক নিয়োগের চরম দুর্নীতি প্রকাশিত হয়েছে। দেশ ও রাজ্যের ভেঙে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি জনস্বার্থে ও সর্ব সাধারণের শিক্ষার্থে আগামী ৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে সর্বভারতীয় সংগঠনের আহ্বানে মার্চ টু পার্লামেন্ট’র প্রতিবাদ কর্মসূচি সর্বাত্মক সফল করার আহ্বান জানান তারা।

Comments :0

Login to leave a comment