Lekhak Shilpi Sangha

লেখক শিল্পী সঙ্ঘের আলোচনাসভা

রাজ্য

Lekhak Shilpi Sangha

পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের ১০ম (নব পর্যায়) দার্জিলিঙ জেলা সম্মেলনকে সামনে রেখে আলোচনাসভা হয়। শনিবার বিকালে শিলিগুড়ি দীনবন্ধু মঞ্চের রামকিঙ্কর প্রদর্শনী কক্ষে এই আলোচনাসভা হয়। ‘আজকের ফ্যাসিবাদ—আমাদের প্রতিস্পর্ধা’ বিষয়ক এই আলোচনা সভাতে বিস্তারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশিষ্ট চিন্তক ও শিক্ষাবিদ সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশিষ্ট অভিনেতা ও নাট্যব্যক্তিত্ব চন্দন সেন। ছিলেন সংগঠনের দার্জিলিঙ জেলার সভাপতি সঞ্জীবন দত্ত রায়। 

 

 

 

পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের ১০ম (নব পর্যায়) দার্জিলিঙ জেলা সম্মেলন ৪ডিসেম্বর শিলিগুড়ি তরাই তারাপদ আদর্শ বিদ্যালয়ে হতে চলেছে। এদিনের আলোচনাসভাতে উপস্থিত ছিলেন জীবেশ সরকার, অশোক ভট্টাচার্য, সমন পাঠক ও জয় চক্রবর্তী। আলোচনাসভার শুরুতেই গণনাট্য সঙ্ঘের উত্তরধ্বনি শাখার শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। 

 


পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এক এক জায়গার জীবনধারা এক একরকম। সংষ্কৃতি মানে শুধুই গানবাজনা নয়। সংস্কৃতি মানে জীবনধারা। যেকারণে এক এক জায়গার সংস্কৃতি এক এক ধরনের হয়। সাংস্কৃতিক কর্মী হিসাবে আমাদের দায়িত্ব সেই এলাকাগত বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করা। কোন জায়গায় যেতে হবে বা কি করতে হবে তা সেই এলাকার মানুষকে যুক্ত করেই করতে হবে। যাঁরা অভিনয় করছিলেন তাঁরা কখনও দর্শকের ভূমিকায়, আবার যাঁরা দর্শক ছিলেন তাঁরা অভিনেতার জায়গাতে চলে এসেছেন।

 

 

 

 এই কথার মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। শ্রেণি সংগ্রামের নির্দিষ্ট পদ্ধতি সূত্র রয়েছে। একে অপরের সাথে দ্বন্দ্ব ও মার্কসবাদী সূত্র আছে। সেই সূত্র অস্বীকার করার উপায় নেই। আট ঘণ্টা কাজ, ন্যূনতম মজুরি, শিল্পপতিদের মুনাফার উপর কর, মেয়েদের ভোটাধিকার, নারী উন্নয়ন, ভূমিহীনদের জমি, জমির পাট্টা সব ভালো কথা বলেছিল ওরা। প্রতিশ্রুতির কিন্তু কোনটিই হয়নি। ফ্যাসিবাদ পতনের পরে স্তালিন বলেছিলেন আমাদের বিপদ রয়ে গেল। ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদ নানাভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। 

 

সেই বিপদ ঘনিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। দ্রুত ফ্যাসিবাদ তার চরিত্র বদলাচ্ছে। এই ফ্যাসিবাদকে রুখতে প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার কথা বলেন তিনি।  
এদিনের আলোচনাসভাতে বিশিষ্ট চিন্তক ও শিক্ষাবিদ সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সঙ্ঘ পরিবার এক এক জায়গায় একরকমভাবে আক্রমণের ছক কষছে। আক্রমণের চেহারা ভিন্ন। সর্বত্র সন্ত্রাসের একনায়কতন্ত্র চলছে। ফ্যাসিবাদী শক্তি ও আক্রমণের বিরুদ্ধে বামপন্থী, কমিউনিস্ট ও গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলিকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ফ্যাসিবাদী শক্তি মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এই প্রসঙ্গেই হিটলার, মুসোলিনি, রুশবিপ্লব সহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ তার আলোচনায় উঠে এসেছে। বলেন, ধনতান্ত্রিক সমাজে শ্রম ও পূঁজির দ্বন্দ্ব চলছে।

 

 

 ফ্যাসিবাদী শক্তির মূল লক্ষ্য মানুষ যাতে শ্রেণি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে না পারে। আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা বলছি যেকোনভাবেই সংবিধানকে রক্ষা করতে হবে। একই সাথে শ্রমিক কৃষক ঐক্য গড়ে তুলে মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি।   


বিশিষ্ট অভিনেতা চন্দন সেন সক্রিয় বামপন্থী সমর্থক হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে তার আলোচনা তুলে ধরেছেন সকলের সামনে। বলেছেন, কাশ্মীর, অরুণাচল সহ আমরা সব জায়গাতেই প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছি। প্রতিস্পর্ধার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দায়। প্রতিস্পর্ধী কথা বললে রাষ্ট্র বা শাসক কেউ ছেড়ে দেবে না। আরএসএস দ্রুততার সাথে প্রতিদিন আক্রমণ নামিয়ে আনছে। তাই প্রতিস্পর্ধার দায় নিতে হবে। যতো আক্রমণ বাড়বে ততই প্রতিস্পর্ধা বাড়াতে হবে। ফ্যাসিজম আক্রমণ করছে প্রযুক্তির হাত ধরে। প্রতিস্পর্ধায় করণীয় যাদের সমস্যা তাদের নিজস্ব ভাষায় থিয়েটারের মাধ্যমে তুলে ধরা জরুরি। যাতে ভুক্তভোগীরা নিজেদের দাবি সমস্যার কথা বুঝতে পারেন। সব মিলিয়ে রাজনীতি ও সংস্কৃতির সংশ্লেষণে একেবারে ময়দানে নেমে প্রতিস্পর্ধা দেখানোর ইঙ্গিত ও দীর্ঘ দিশা দেখিয়েছেন তিনি।  

Comments :0

Login to leave a comment