অনিল কুণ্ডু : বিষ্ণুপুর
‘‘গোটা রাজ্যে কারখানা বন্ধ। গুন্ডাগিরি, মদের বোতল, কয়লা পাচার, বালি পাচার চলছে। এটাই রাজ্যে কাজ। রাজ্যের সরকার ঘরে ঘরে বোমা, পিস্তল করেছে। এটাই চলবে?’’
বিষ্ণুপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্ন ছুঁড়লেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিষ্ণুপুর। সাংসদ তৃণমূল নেতা অভিষেক ব্যানার্জি।
এখানেই মীনাক্ষী বললেন, ‘‘ প্রতিটি ঘরে অমলা মন্ডল তৈরি হবে। তাঁদের ইনসাফ চাই।’’
শহীদ কমরেড বিদ্যুৎ মন্ডলের মা অমলা মণ্ডল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিষ্ণুপুরের জয়রামপুরে বৃহস্পতিবার সকালে সমাবেশের সূচনার সময়েই ছিলেন অমলা মণ্ডল। সমাবেশ মঞ্চেই শহীদ কমরেড বিদ্যুৎ মণ্ডল, রঞ্জিত মণ্ডলের প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধায় জানানো হয়। সমাবেশের মাঠ উপচে পড়েছে তখন। যানবাহন চলাচল কার্যত স্তব্ধ।
বিষ্ণুপুরের মানুষ দেখেছেন ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্র জুড়ে নির্বাচনে সরকারি কর্মচারী, পুলিশ কর্মীদের একাংশের যোগসাজসে শাসক তৃণমূলের সন্ত্রাস, ভোট লুট। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর কল কারখানাগুলি বন্ধ হয়েছে। তোলাবাজি চলছে। এই বিষ্ণুপুরেই‘সারদা’ চিটফান্ড কেলেঙ্কারির রমরমা ব্যবসা শুরু হয়েছিল। মানুষ জানেন। লুট, সন্ত্রাস এখনও চলছে।
মীনাক্ষী মুখার্জি বললেন, ‘‘কিছু সরকারি কর্মচারী, পুলিশ আছেন, যাঁরা সন্ত্রাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াননি। বিষ্ণুপুরের মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না।’’
বক্তৃতায় এসেছে সাংসদের প্রসঙ্গও। মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী দরজা বন্ধ করে বৈঠক করছেন। অভিষেক ব্যানার্জিকে বাঁচানোর সার্টিফিকেট এখনো আদায় হয়নি। ওতো জেলে যাবেই। এরপর তৃণমূলের চার আনা নেতাদের কী হবে। শুনে রাখুন এদের কেউ বাঁচাতে পারবে না। রাজ্যের মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। তোমাদেরও জেলে যেতে হবে।’’
নিয়োগ দুর্নীতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের পকেটে টাকা দিয়ে অনেকে চাকরি পেয়েছে। আবার টাকা দিয়েও চাকরি পাননি অনেকে। আত্মহত্যা করেছেন। মানুষের বুকে আগুন জ্বলছে। রাস্তাতেই নেমে ইনসাফ আদায় হবে।’’
সমাবেশে ডিওয়াইএফআই’র সর্ব ভারতীয় সম্পাদক হিমগ্নরাজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুরেও তোলাবাজি শিল্প চলছে। সারদা লুট করেছে। রাস্তায় লড়াই, আইনের লড়াইয়ে জেলের ভাত খেতে হচ্ছে। লুটেরাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে।’’ বক্তব্য রাখেন ডিওয়াইএফআই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সোমনাথ ঘোষ, সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা সভাপতি অপূর্ব প্রামাণিক।
জয়রামপুর থেকে শুরু হওয়া ইনসাফ যাত্রা আমতলা মোড়, পীরতলা, ঘাঁটুর মোড়, গাববেড়িয়া, জুলপিয়া হয়ে সোজা টংতলা। প্রায় ১৯ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এদিন সন্ধ্যায় বারুইপুরের পদ্মপুকুরে পৌঁছায় ইনসাফ যাত্রা। সেখানে সিআইটিইউ, পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চ সম্বর্ধনা দেয়।
পদযাত্রীদের সামনে ছিল সুসজ্জিত ট্যাবলো, ব্যান্ড পার্টি, রণপা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে তরুণীদের নৃত্য পরিবেশন ছিল আকর্ষণীয়। ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন মহিলারাও। রাস্তার দুধারে ছিল মানুষের ঢল। বেলা যতো বেড়েছে পদযাত্রা মিছিলের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। গণ আন্দোলনের নেতা শমীক লাহিড়ী, রাহুল ঘোষ, তুষার ঘোষ প্রমুখ ছিলেন মিছিলে।
শুক্রবার বারুইপুর রেল মাঠে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে ইনসাফ যাত্রা, যাবে যাদবপুরে।
Comments :0