Post Editorial

সাজানো সমীক্ষা নয়, ইতিহাস গড়বে মানুষই

উত্তর সম্পাদকীয়​

Post Editorial

পলাশ দাশ
তৃণমূলকে জেতাতে, বিজেপি-কে দ্বিতীয় করতে আর বাম-কংগ্রেসকে শূন্য করতে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, রাজ্যপালের পর এবার ‘‘প্রি পোল সমীক্ষা’’। কর্পোরেট মিডিয়া নেমে পড়েছে প্রত্যক্ষভাবে। সামান্য স্যাম্পেল নিয়ে করা সমীক্ষায় মানুষ তৃণমূল ও বিজেপি’র বিরুদ্ধে উত্তর লিখলেও সাজানো রেজাল্ট। সেখানে প্রথম, দ্বিতীয় আগেই ঠিক করা ছিল, রেজাল্টেও তাই বসানো হয়েছে। রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার কারণে নির্দিষ্ট মত উৎপাদনের জন্য, ভোটারদের বিভ্রান্ত করার জন্য, বাম,কংগ্রেস, আইএসএফ কর্মীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য তৃণমূল ও বিজেপি’র পরিকল্পিত মরিয়া চেষ্টায় মিডিয়ার ‌অংশীদারিত্ব হলো এই সমীক্ষা।  
সমীক্ষায় কি মেলে? সামান্য স্যাম্পেল থেকে সত্যে আসা সহজ নয়। স্বাভাবিক ভোট হলে তবে তো সমীক্ষার তাৎপর্য থাকে। মমতার আমলে বাংলার ভোট নিয়ে সমীক্ষার কোনও অর্থ আছে কি? এ রাজ্যে পঞ্চায়েত, পৌরসভায় তৃণমূলের আমলে কোনও ভোট হয় না। নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। নমিনেশন পর্বে পুলিশ আর দুষ্কৃতী মিলে ব্লক অফিস ঘিরে বোমা, গুলি আর টিয়ার গ্যাসের সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে বহু জায়গায়। বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল জুড়ে সারা রাত পুলিশের সাহায্যে তৃণমূল দুষ্কৃতীরা অস্ত্র ও অর্থ হাতে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করানোর জন্য পাগলা কুকুরের মতো ঘুরে বেড়িয়েছে। কমিশন ও পুলিশ তাদের পাহারাদার। ভিন দেশে থেকেও নমিনেশন হয়েছে তৃণমূল প্রার্থীর। প্রভিশনাল কাস্ট সার্টিফিকেট পেয়েছে তৃণমূল প্রার্থীরা, বিপুল অংশের বাম প্রার্থীদের নমিনেশন বাতিল হয়েছে প্রভিশনাল কাস্ট সার্টিফিকেট না দেওয়ায়। অভিযোগ, দু’সেট ব্যালট ছাপা হচ্ছে। এরপর ভোট লুট, ছাপ্পার উৎসব ও গণনায় কারচুপি করার পরিকল্পনা তৃণমূল পুলিশ, প্রশাসনকে নিয়েই করে রেখেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে না যাবে তা নিয়ে নাটক চলছে তো চলছেই। ফলে এরাজ্যের মানুষ বুঝেই গেছেন গণতন্ত্র রক্ষা করতে গেলে প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতিরোধ করে, জীবন দিয়ে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে, রক্ত দিয়েই মানুষ ঐতিহাসিক লড়াই দেবে বুথে। লড়েছে, মরেছে, রক্ত ঝরেছে, জামিন অযোগ্য ধারায় মামলায় জড়ানো হয়েছে বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ প্রার্থী ও কর্মীদের। প্রতিরোধের এই পথে কোথাও বিজেপি নেই। বিজেপি আছে কোর্টে আর টেলিভিশনে। বাস্তব জগতে যে পার্টি নেই, মানুষ যাদের তৃণমূলের সঙ্গী হিসাবেই ভাবেন তাকে প্রধান প্রতিপক্ষ করার চেষ্টা ঠান্ডা ঘরে বসে হতে পারে। কিন্তু বাংলার মানুষের রায় ভোটের শেষে ঠান্ডা ঘরের সমীক্ষা বাতিল করবে।  কিন্তু সমীক্ষা না মেলার দায় ‘‘ঘণ্টা খানেক’’ নেবে কি?

বলাই বহুল্য, এই সমীক্ষা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ২০১৯ ও ২০২১ সালের লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে সর্বাত্মক আগ্রাসী প্রচার মানুষকে তৃণমূল ও বিজেপি’র মধ্যে আবদ্ধ রেখেছিল। এরাজ্যে তৃণমূল সরকারে, বিরোধী দল বিজেপি। 
ভোট মিটতেই গ্রামে, শহরে বিজেপি কর্মীরা রাতারাতি তৃণমূল হয়ে যায়। বিজেপি’র বিধায়কদের লাইন পড়ে যায় কালীঘাটে। মানুষ এসব প্রত্যক্ষ করেন। যাঁরা বিশ্বাস করে বিজেপি-কে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের বিশ্বাসভঙ্গ হলো। এই আবহে অনেকগুলো নির্বাচন হয়েছে ২০২১ বিধানসভা ভোটের পর। বড় মাপের নির্বাচন ছিল কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচন।  সন্ত্রাস, ছাপ্পার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও ঘটা করে আজকের মতো সি-ভোটার ও এবিপি ‘‘প্রি পোল সার্ভে’’ ফলাফল প্রকাশ করেছিল।  ২০২১ সালেই ডিসেম্বর মাসে কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচন হয়। সমীক্ষার ফলাফলে দেখানো হয় তৃণমূল ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম স্থানে, ২৪ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে থাকবে। বাম পাবে মাত্র ৯ শতাংশ ও কংগ্রেস ৩ শতাংশ ভোট। লুট, ছাপ্পা, সন্ত্রাসের রক্ত ঝরানো ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ৭২.১৩ শতাংশ ভোট, জোর করে দ্বিতীয় বানানো বিজেপি পেয়েছিল ৯.২১ শতাংশ ভোট। অথচ শূন্য বিধায়কের বামফ্রন্ট পেয়েছিল ১১.৮৯ শতাংশ ও কংগ্রেস ৪.১২ শতাংশ ভোট। বাম ও কংগ্রেসের মিলিত আসন সংখ্যাও ছিল বিজেপি’র থেকে বেশি। এর পরে বাকি ৪ কর্পোরেশন ও গোটা রাজ্যের পৌরসভা নির্বাচনেও হরেক সমীক্ষায় সাজানো ফলাফল দেখালেও মানুষ সেই হীন রাজনৈতিক মিথ্যাচারকে পরাজিত করেছিলেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সারা রাজ্যের শহরাঞ্চলের সরকারের ভোট। ২৫/৩০ শতাংশ মানুষ প্রকৃত ভোট দিতে পেরেছিলেন আর ভোট পোল হয়েছিল গড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ, বহু জায়গায় ৯০/৯৫ শতাংশ। মাঠের সেই লড়াইয়ে বিজেপি অদৃশ্য ছিল। ৯০ শতাংশ বুথে বিজেপির কোনও পোলিং এজেন্ট ছিল না। লড়াই তৃণমূল বনাম বাম ও কংগ্রেসের। বামফ্রন্ট প্রার্থী ও বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থীদের মিলিত ভোট শতাংশের হিসাবে ছিল ১৭ শতাংশ, কংগ্রেসের ছিল ৫ শতাংশ। বাম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট ছিল ২২ শতাংশ। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ১৩ শতাংশ আর তৃণমূল বাকি সব ভোট লুট করে নিয়েছিল। সাজানো নির্বাচন, সাজানো ফলাফল সাজানো সমীক্ষা। মানুষ যাতে বিস্মিত না হয়, লুট আর ছাপ্পা যাতে অভাবনীয় জয়ে রূপান্তরিত হয়, আর নির্বাচনের আগে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তৃণমূল ও বিজেপিতে আটকে রাখা যায় - এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই সমীক্ষার নাটক। চমকপ্রদ বিষয় যে ক’টি প্রশ্ন নিয়ে এই সমীক্ষা তার প্রতিটির উত্তর তৃণমূল ও বিজেপি’র বিরুদ্ধে গেছে। তবু তৃণমূল ও বিজেপি-কে আসন সংখ্যায় উপরে তুলে ধরা হয়েছে এই সমীক্ষা নামক ভণ্ডামিতে।


আমাদেরও একটা সার্ভে আছে।  তার স্যাম্পেল সাইজ ১ কোটির বেশি, যা সি ভোটার এবিপি ভাবতেই পারবে না। শুধু গ্রাম ধরলে প্রায় ৬০ লক্ষের বেশি মানুষ যে সার্ভেতে মতামত দিয়েছেন প্রত্যক্ষভাবে নিজের নাম লিখিয়ে। আমাদের সার্ভে হলো তৃণমূলের অপার দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত সুবিচার চেয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদনে স্বাক্ষর সংগ্রহ। এমন আবেদনে ২০২১ সালের আগে সাধারণ মানুষ সই করার কথা ভাবতেই পারতেন না। আশ্চর্যের বিষয় ১ কোটির বেশি মানুষ গ্রামে, শহরে পরিবারের সকলে মিলে উৎসাহের সঙ্গে ফর্ম চেয়ে সই করলেন, এমনকি নিজের মোবাইল নম্বরটিও দিলেন। গড়ে প্রতি ২০০ সই পিছু প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা বড় জোর ১৫/২০ জন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ কি পরিমাণ ক্রুদ্ধ, ক্ষুব্ধ তা এই বিপুলায়তন সার্ভে থেকে পাওয়া যায়। যে মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে লিখতে পারেন তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দেবেন?  ২০২১ -র আগে ‘‘হয় তৃণমূল নয় বিজেপি’’ জনপরিসরে এই ধারণা বহু অর্থ ব্যয়ে কুশলী প্রচারে গড়ে তোলা হয়েছিল। এখন নতুন পারসেপশন বা ধারণা মানুষের মনে তৈরি হয়েছে তা হলো- তৃণমূল একটি আদ্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত দল, বিজেপি আর তৃণমূল সমার্থক। বামপন্থীরা ‌অগ্রসর হচ্ছে। মানুষ ঝুঁকছেন বামপন্থীদের দিকে। তাই দু’তরফের আক্রমণ, মিথ্যাচার, কুৎসার লক্ষ্য বামপন্থীরা। মাঠে এখন রাজ্যপালও। যে কোনোভাবে বামেদের আটকাতে হবে। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নাকি বিজেপি’র চাণক্য। সমীক্ষকরা ঢাকতে চাইলেও তিনি কিন্তু বিজেপি’র সঙ্কট কয়েক মাস আগেই ধরেছিলেন। কলকাতায় এসে বঙ্গ বিজেপি’র টেলিভিশন নেতাদের নিয়ে কেশব ভবনে বসে কড়া স্বরে প্রশ্ন করেছিলেন, বাংলায় কয়েকমাস আগে পদ্ম ফুটলেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে এতো অসংখ্য ইস্যু থাকা সত্ত্বেও সর্বত্র লাল ঝান্ডা আন্দোলন করছে কী করে, ওরা তো শেষ হয়ে গিয়েছিল? তাঁর আরও বিস্মিত প্রশ্ন, বিজেপি-কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন? ভয়ে সঙ্কোচে জড়সড় নাবালক বিজেপি নেতাদের উত্তর স্যার, বিধানসভার আগে যারা বিজেপি করতে এসেছিল তারা সব চলে গেছে তৃণমূলে। আরএসএস’র পত্রিকা স্বস্তিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে শাহের কলকাতা ছাড়ার আগে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলা কথা ছাপা হয়েছে। শাহ বলেছেন, বাংলার মানুষ বামপন্থীদের দিকে ঢলে পড়ছে তা মমতার মুখ্যমন্ত্রী থাকার চেয়েও বিপজ্জনক। তাই আটকাতেই হবে।

যৌথ কার্যক্রমে তৃণমূল ও বিজেপি’র দ্বৈরথ প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন কমিশন থেকে রাজ্যপাল, ডিএম-এসপি থেকে বিডিও, থানা থেকে মিডিয়া সবাই হই হই করে আসরে আছে। তৃণমূলের সমস্যা হলো, পঞ্চায়েত ও পৌরসভা না থাকলে দলটার মৃত্যু হবে। এটাই ওদের মধুর উৎস, প্রাণভোমরা। দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তৃণমূল এই কথার মধ্যে এখন আর কোনও নতুনত্ব নেই। মামলা আর জেলখানায় চলে যাওয়া মন্ত্রীসভা। কালীঘাটের বাসিন্দাদের সিবিআই-ইডি’র সমনের পর সমন। এখন মানুষের কাছে তৃণমূল একটি কদর্য শক্তি। বিজেপি’র অবস্থাও রাজ্যে তথৈবচ। সংগঠন নেই। তাদের সাহায্যেই যে তৃণমূল আছে তা মানুষ বুঝে ফেলায় তারাও সমর্থন হারিয়েছে। এদিকে ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। দেশের দক্ষিণ, পূর্বে বিজেপি মুছে গেছে। পশ্চিম পুরো হাতে নেই, উত্তরে কংগ্রেস থাবা বসাচ্ছে। ভীষণ  দুশ্চিন্তায় ভরসা তৃণমূলের দুর্নীতি আর সিবিআই-ইডি’র নিয়ন্ত্রণ। অমিত শাহের লক্ষ্য ৩৫ আসন। রফা হবে, হয় জেল নয় আসনে। তার আগে মানুষকে তৃণমূল আর বিজেপিতে ভাগ করে রাখতে হবে। তাই সমীক্ষার ফলাফলে বিজেপি দ্বিতীয়, তৃণমূল প্রথম আর বাম-কংগ্রেস শূন্য অথবা শূন্যের কাছাকাছি।

২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই হয় বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের। ২০১৬-র সন্ত্রাসবিদ্ধ নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস হারলেও, তারা থেমেছিল মাত্র ৫ শতাংশ দূরে, তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে। তৃণমূল পেয়েছিল ৪৪ শতাংশ ভোট, বাম-কংগ্রেস ৩৯ শতাংশ ও  বিজেপি মাত্র ১০ শতাংশ। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের গণনার দিন থেকে শুরু হয় এক বিরাট ষড়যন্ত্র। তৃণমূলকে হারাতে পারবে না ৩৯ পাওয়া বাম ও কংগ্রেস, পারবে ১০ পাওয়া বিজেপি। একইভাবে বলা হলো সাম্প্রদায়িক বিজেপি-কে একমাত্র ঠেকাতে পারবে নাকি, তারই গোপন সঙ্গী তৃণমূল। মানুষকে ব্যাপকভাবে এহেন প্রচারে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। ২০২১ বিধানসভা পর্যন্ত  ১০ শতাংশ ভোট পাওয়া বিজেপি-কে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বানানোর অতি সুচতুর প্রচার চলে অবিরত, আজও এই সমীক্ষা সেই লক্ষ্যেই। 
এই লক্ষ্যেই  সাম্প্রদায়িকতা ও পরিচিতি সত্তার বিভেদমূলক পথে দুই শক্তি মানুষকে বিভাজিত করেছে। খণ্ডিত সত্তার খণ্ড খণ্ড ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি করা , কোনোটা তৃণমূলের কোনোটা বিজেপি’র। তার সুচতুর শরিক মিডিয়া। ২০২১ পরবর্তী পর্বে রাজনৈতিক ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটা শুরু হয়। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ধারাবাহিকভাবে নানা নির্বাচনে সমর্থন হারাতে থাকে। শান্তিপুর উপনির্বাচনে বামেদের ভোট বাড়ে ১৫ শতাংশ আর বিজেপি’র কমে ১২ শতাংশের বেশি। বালিগঞ্জে বাম প্রার্থী প্রায় জেতার জায়গায় চলে যায়, ভোট বাড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ, বিজেপি’র ভোট যাচ্ছেতাই রকম কমে যায়। কর্পোরেশন, পৌরসভা ভোটে বাম দ্বিতীয়, বিজেপি কোথাও তৃতীয় কোথাও চতুর্থ। যত সমবায় ভোট হয় তার অধিকাংশ জায়গায় বিজেপি, তৃণমূল দু’জনেই হারে, জয়ী হয় বামপন্থীরা। এভাবেই সাগরদিঘি। বাম-কংগ্রেসের কাছে গোহারান হারে তৃণমূল ও বিজেপি। বিধানসভা ভোট পরবর্তী বাংলায় সব ধরনের নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপি কমে আর বাম ও কংগ্রেস বাড়তে থাকে। সাগরদিঘিরও পরে হতে যাচ্ছে পঞ্চায়েত। সেখানে গণপ্রতিরোধ হবে তীব্র লুটেরাদের হাত থেকে জনগণের হাতে পঞ্চায়েত ফেরাতে।

এটা প্রতিরোধের ভোট। যেভাবে পঞ্চায়েত-পৌরসভা ভোট তৃণমূল আমলে এযাবৎ হয়েছে তার থেকেও বেশি মরিয়া হয়ে এবারের ভোট করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু এবারের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো মানুষের রুখে দাঁড়ানো। উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র বামপন্থীরা জানকবুল লড়াই করছে মানুষকে নিয়ে। সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো বিষয়, মানুষ আগের মতো আর পিছু হটছে না, তৃণমূলও আগের মতো ভয় দেখাতে পারছে না। গ্রামগুলো জেগে উঠেছে। পরিযায়ী শ্রমিক থেকে, বেকার, কাজ হারানো যুবক, হেঁশেল সামলাতে নাজেহাল গৃহবধূ, ১০০ দিনের কাজ না পাওয়া গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষ, ফসলের দাম না পাওয়া কৃষক, ধুঁকতে থাকা খেতমজুর, বাড়ি আর প্রকল্প থেকে বঞ্চিত গরিব মানুষের এবার সাংঘাতিক জেদ সৃষ্টি হয়েছে মনে।  লড়াই মানুষের সঙ্গে তৃণমূল ও তার দোসর বিজেপি’র। সব মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। এ দায়িত্ব বামপন্থীদের। বুথে বুথে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে যাতে ভোট লুট না করতে পারে তৃণমূল। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার অন্যতম জনক কমরেড জ্যোতি বসুর কথায় ‘‘মানুষ ইতিহাস রচনা করে’’। জ্যোতি বসুর জন্মদিন ৮ জুলাইয়েই হবে পঞ্চায়েত ভোট আর সেই ভোটে গ্রাম বাংলা আবারও প্রমাণ করবে সমীক্ষা নয় ইতিহাস রচনা করবে মানুষই তৃণমূল ও বিজেপি-কে পরাস্ত করে।

Comments :0

Login to leave a comment