নিয়ান্ডার, জার্মানির এক উপত্যকা। ১৮৫৬ সালে চুনাপাথর কাটতে গিয়ে সেখানকার ফেল্ডহোফার নামক একটি গুহায় শ্রমিকেরা কিছু কঙ্কাল খুঁজে পান। অবাক করার বিষয় ছিল, ওই কঙ্কালের খুলিটি অনেকটা মানুষের মতো দেখতে হলেও, মানুষের নয়। যেহেতু জার্মানরা উপত্যকাকে ‘থাল’ উচ্চারণ করেন, তাই ওই জীবাশ্মের নামকরণ করা হয় ‘নিয়ান্ডার থাল’। পরবর্তীতে ইতালি, বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশ থেকেও এই প্রজাতির আরও বেশ কিছু কঙ্কাল উদ্ধার হয়। গবেষণা করে জানা যায়, আজ থেকে ২৫,৮০,০০০ বছর আগে শুরু হওয়া এক বিশেষ ভূতাত্ত্বিক আবহাওয়া সম্পন্ন ‘প্লাইস্টোসিন’ যুগে, যে যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে প্রায় ১১৭০০ বছর আগে, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়া ছিল এই বিশেষ ধরনের মানুষের বিচরণস্থল। বৈজ্ঞানিকরা এই প্রজাতির মানুষের বিজ্ঞানসম্মত নাম দেন ‘হোমোসেপিয়েন্স নিয়ান্ডারথালেনসিস’।
জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভোলিউশনারি অ্যানথ্রোপলজির ডিরেক্টর প্যাবো দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর প্রায় চল্লিশ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানব প্রজাতি নিয়ান্ডারথালের জিনোমক্রম অর্থাৎ বংশগতির তথ্য বহনকারী জিনের নকশা তথা অনুক্রম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। সুপ্রাচীন ওই জিনোম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি আরও এক ধরনের বিলুপ্ত ও অজানা হোমিনিনের সন্ধান পান। দ্বিপদ বিশিষ্ট আধুনিক মানুষের সেই বিলুপ্ত পূর্বপুরুষের নাম রাখা হয় ডেনিসোভা। এই সমস্ত জীবাশ্ম থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ’র উপর দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তিনি প্রমাণ করছেন— আধুনিক মানুষের ডিএনএ’র সঙ্গে মিল রয়েছে বিলুপ্ত নিয়ান্ডারথাল এবং ডেনিসোভাদের। শুধু তাই নয়, ওই বিলুপ্ত দুই প্রজাতি থেকে মানব শরীরে জিন স্থানান্তরিত হয়েছে। আধুনিক মানুষের নিকটাত্মীয় নিয়ান্ডারথালেরা বহু বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেলেও গবেষক প্যাবো ও তাঁর দল আফ্রিকার বাইরের মানুষদের মধ্যে ১-২ শতাংশ নিয়ান্ডারথাল জিনের সন্ধান পেয়েছেন। এরকম তথ্য এই আভাস দেয় যে নিয়ান্ডারথাল মানুষ বিলুপ্ত হওয়ার আগে আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সদের সঙ্গে সহাবস্থান করেছে, পারস্পরিক মিলনের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন করেছে। এ কারণে প্যাবো বলেছেন, ‘নিয়ান্ডারথালেরা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়নি। আমাদের কারও কারও মধ্যে তারা এখনও কিছুটা পরিমাণে বেঁচে আছে।’ বিলুপ্ত হোমিনিনদের জিনোম সংক্রান্ত তাঁর এই গবেষণার জন্য গতবছর তাঁকে জীববিদ্যায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। তাঁর এই নিরলস পরিশ্রমসাধ্য গবেষণা যে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব তথা মানব প্রজাতির বিবর্তনের ইতিহাসকে আগামীতে আরও সমৃদ্ধ করবে, তা বলাই বাহুল্য। জেনেটিকসের অভাবনীয় উন্নতি ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বকে আজ অকাট্য বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
তবে, বানর থেকে আজ অবধি কাউকে মানুষ হতে দেখেননি বলে যারা ‘ডারউইনের তত্ত্ব প্রমাণিত হয়নি’ দাবি করেন (যদিও ডারউইন কোথাও লেখেননি বানর থেকে মানুষের উৎপত্তি হয়েছে, তিনি বলেছিলেন মানুষ, বনমানুষ এবং বানর একই গোত্র থেকে এসেছে), তাদের কাছে আবিষ্কারটি যে যথেষ্ট বিব্রতকর, সেটা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে, বছর ঘোরার আগেই তারা পাঠক্রম থেকে বিবর্তনবাদকেই বাদ দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। না থাকবে বাঁশ, না বাজবে বাঁশরি গোছের ব্যাপার। ওদের কে বোঝাবে যে, অন্ধ সেজে কখনও প্রলয় বন্ধ করা যায় না। নিউটনের সূত্র যদি কেউ অস্বীকার করে, তাতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কি উধাও হয়ে যাবে? ডারউইনের মতবাদের বিরুদ্ধে যে যতই বিষোদগার করুন, করোনা ভাইরাস প্রমাণ করেছে, বিবর্তনের মাধ্যমে নতুন নতুন ভাইরাসের আবির্ভাব তাতে বন্ধ হবে না। সুতরাং মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থে বিবর্তন তত্ত্বের অনুশীলন করে যেতেই হবে। কারণ ওই অনুশীলন ব্যতীত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক জাতীয় রোগ সংক্রামক জীবাণু বা প্যাথোজেনের বিবর্তন বুঝতে পারা কিংবা নতুন ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা কখনোই সম্ভব নয়।
তথাপি কায়েমি স্বার্থের শক্তি আজও বিবর্তনবাদকে আজও মান্যতা দিতে রাজি নয়। দেড়শো বছর ধরে যেভাবে তারা এই তত্ত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণিয়ে আসছে, অদূর ভবিষ্যতে তা থামবে বলে মনে হয় না। একেবারে শুরু থেকেই পত্রপত্রিকায় তাঁর মুখের আদল দিয়ে বানরের কার্টুন আঁকা থেকে শুরু করে সভ্য সমাজে যতরকমভাবে একজন মানুষকে অপদস্থ করা যায়, তা সবকিছুই প্রয়োগ করেছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপ। এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকপ্রাপ্তির সেই যুগেও সংগঠিত ধর্ম ডারউইনের বিরোধিতা করেছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল ওই মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। তাই তারা বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিল। ফলে, ইউরোপীয় সমাজের একটা বড় অংশ সেদিন ডারউইনকে স্বীকৃতি দেয়নি। শুধু ইউরোপ কেন, তাঁর মৃত্যুর তেতাল্লিশ বছর পরেও আমেরিকার পাবলিক স্কুলে সৃষ্টিবাদের পরিবর্তে বিবর্তনবাদ পড়ানোর দায়ে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ‘স্কোপস মাঙ্কি ট্রায়াল’ নামে সেই মামলা রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল সেই যুগে। যদিও আদালতের রায়ে তখনকার মতো পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া আনুষ্ঠানিক ফতোয়া। আদালতের নির্দেশে অবশেষে বিবর্তনবাদকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেই দেশের শাসক। কিন্তু বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার থামেনি আজও। একবিংশ শতাব্দীতেও গালমন্দ, নিন্দা, অপবাদ ডারউইনের নিত্যসঙ্গী। শাসকের পক্ষ থেকে কখনও সেটাকে তীব্র আকার দেওয়া হচ্ছে, কখনও আবার ছাই চাপা আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য।
এদেশে আরএসএস-বিজেপি’র তবু না হয় একটা হিন্দুরাষ্ট্র গড়ে তোলার কর্মসূচি আছে (রাষ্ট্রের ধর্মীয় পরিচয় যাই হোক না কেন, নিয়ন্ত্রণ তো থাকবে আদানি-আম্বানিদের অর্থাৎ কর্পোরেট পুঁজির হাতেই), কিন্তু উন্নত পুঁজিবাদী আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি কিংবা ফ্রান্সের শাসকদের নিশ্চয়ই হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার কোনও অভিপ্রায় নেই। স্মরণাতীত সময়ে কেউ তারা খ্রিস্টান রাষ্ট্র গড়ে তোলার আহ্বানও দেয়নি। তাহলে, ওই সমস্ত দেশগুলোতে মাঝে মাঝেই ডারউইন বিরোধিতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে কেন?
কালানুক্রমিক পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, পৃথিবীতে বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদ তখনই আক্রান্ত হয়েছে, যখন তা শাসকের স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার কারণ হয়ে উঠেছে বা বিঘ্ন ঘটানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কপিল মুনি থেকে চার্বাক, গ্যালিলিও থেকে নিউটন, কিংবা ডারউইন থেকে শুরু করে হাল আমলের স্টিফেন হকিং; সুদীর্ঘ এই তালিকাটি যদি আমরা বিবেচনার মধ্যে রাখি, তাহলে দেখা যাবে, প্রতিটি ক্ষেত্রে যুক্তিবাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করার জন্য শাসক তার সমস্ত নখ-দাঁতগুলিকে ব্যবহার করেছে যুগ যুগ ধরে। খুব বেশি অতীতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, আমেরিকায় ‘মাঙ্কি ট্রায়াল’-র কথাই ধরা যাক। সময়টা ছিল ১৯২৫, ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের অনিবার্য পরিণতিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। একেবারে শেষ পর্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও আমেরিকা নতুন শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। অন্যদিকে মহামতি লেনিনের নেতৃত্বে জারের শাসনের অবসান ঘটিয়ে বিপ্লব সংঘটিত করেছে রাশিয়ার জনগণ। মার্কসীয় মতাদর্শকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে শোষণ মুক্ত সমাজ গড়ে তুলেছে তারা। সমগ্র বিশ্বের মেহনতি এবং মুক্তিকামী মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠছে তারা। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের অনুপ্রেরণা ও সাহচর্যে এবং মার্কসবাদ-লেনিনবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইউরোপের দেশে দেশে সমাজতন্ত্র বিকশিত হচ্ছে। শ্রেণি ভারসাম্যের দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে গোটা বিশ্বজুড়ে। আর সমাজতন্ত্রের বিকাশ মানেই মানুষের চেতনা, যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞান চর্চা বিকশিত হবার ক্ষেত্রটা প্রসারিত হওয়া। যেহেতু মার্কসীয় দর্শনের বিশ্ববীক্ষা হলো বিজ্ঞান ভিত্তিক, তাই তাকে তথ্য, পরিসংখ্যান, ক্রম বা নিয়ম, পদ্ধতি, কাঠামো ইত্যাদি মেনে চলতে হয়। এবং এগুলোকে ব্যবহার করেই মার্কসবাদ দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে পৃথিবীর বুকে ঘটতে থাকা যাবতীয় ঘটনাবলীর নেপথ্যের কারণগুলি উদ্ঘাটন করে। এমনকি, আগামীকাল কী ঘটতে পারে, তাও বলে দিতে পারে। যার জেরে অবধারিতভাবেই কুসংস্কার, অবিজ্ঞান, অপবিজ্ঞান ইত্যাদিকে পিছু হটতে হয়। ‘মাঙ্কি ট্রায়াল’-র রায় তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
অথচ, তার পাঁচ- সাত বছরের মধ্যে ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটল পৃথিবীতে। ১৯২৯-এর অর্থনৈতিক মহামন্দার সুযোগে ইতালি, জার্মানিতে অভ্যুত্থান ঘটল ফ্যাসিবাদের। ফ্যাসিবাদ তার নিজস্ব ধর্ম অনুযায়ী যুক্তিবাদের গলা টিপে ধরল। শুরু হলো ডারউইন বিরোধিতা। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে যেই ফ্যাসিবাদ পর্যুদস্ত হলো, সোভিয়েতের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের সামনে যখন পুঁজিবাদী দুনিয়ার গরিমা ম্লান, প্রতিক্রিয়ার শক্তি পিছু হটল, ডারউইন তত্ত্ব স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা পেল। গত শতকের শেষার্ধে সোভিয়েতের পতন ঘটার পর পৃথিবীতে আবার নতুন পরিস্থিতি তৈরি হলো। একমেরু বিশ্বে পুঁজিবাদের প্রভাব প্রতিপত্তি আবার বাড়তে শুরু করল। পাশাপাশি পুঁজির নিয়মেই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলো পুঁজির অভ্যন্তরীণ সঙ্কট। এবং পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে, পুঁজি যখনই সঙ্কটে নিমজ্জিত হয়, পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে প্রতিক্রিয়াশীল দক্ষিণপন্থার শক্তি। একটা পর্যায়ে তা থেকে জন্ম নেয় চরম দক্ষিণপন্থী ফ্যাসিবাদী শক্তি। যাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে যুক্তিবাদকে কোণঠাসা করে ফেলা। গত শতকের ইতালি জার্মানির ঘটনাক্রমের সাথে সাযুজ্য রেখেই বিশ্বায়ন পর্ব শুরু হবার প্রাক মুহূর্ত থেকে উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোতে নতুন করে মাথাচাড়া দিতে থাকে ডারউইন তত্ত্বের বিরোধী ‘ক্রিয়েশনিজম’ বা সৃষ্টিবাদের শক্তি। পাঠক্রমে যতই ডারউইনবাদ পড়ানো হোক, পথেঘাটে সেই বিবর্তনবাদের বিরোধিতা করার জন্য, সৃষ্টিবাদের হয়ে প্রচারের জন্য শাসকের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন উৎস থেকে প্রচুর টাকা ঢালা শুরু হলো। ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন’, ‘সায়েন্টিফিক ডিজাইন’, ‘বেসিক টাইপ বায়োলজি’ ইত্যাদি নানা পরিভাষা ব্যবহার করে, সৃষ্টিবাদের পুরানো ধ্যানধারণা নতুন বোতলে ভরে ফেরি করা শুরু করল। আরএসএস-বিজেপি আমলে একই অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমাদের দেশেও।
আসলে গোটা বিষয়টা পরিচালিত হচ্ছে একটা পরিকল্পনা মাফিক। বলা চলে, এটা একটা প্রকল্প। যে প্রকল্পের গালভরা নাম— উত্তর আধুনিকতা। এই প্রকল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, বিজ্ঞানের পালটা ন্যারেটিভ তৈরি করা। এবং সেই ভাবনা যে অমূলক নয়, তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিস্টান সৃষ্টিবাদীরা (মৌলবাদী) প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন— ‘নিয়ান্ডারথালরা তো আধুনিক মানুষেরই বর্তমানে বিলুপ্ত একটি গোত্র মাত্র। তারা বাইবেলে বর্ণিত টাওয়ার অব বেবেল-এর পতনের পর নানা দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। সুতরাং আধুনিক মানুষের (হোমো স্যাপিয়েন্স) সঙ্গে তাদের মিলনে তো বাধা নেই।’ আবার আরেকদল মৌলবাদীরা বলছেন— নিয়ান্ডারথালরা থাকলেও তারা মানুষ ছিল না, তারা ছিল পশু। স্বাভাবিকভাবেই এই পশুদের সঙ্গে মানুষের মেলামেশার যে তথ্য প্যাবোর দল আবিষ্কার করেছেন, সেটা তাদের পছন্দ নয়। আসলে নিজেদের বক্তব্য বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করার দায় যাদের নেই, তারা যে কোনও বিষয়ের মনগড়া হাস্যকর ব্যাখ্যা দিতেই পারে। সেই পথে হেঁটে আগামী দিনে আরএসএস যদি দাবি করে— বিবর্তনবাদের তত্ত্ব বৈদিক যুগের মুনি ঋষিরা আবিষ্কার করেছিল, তবে আঁতকে উঠবেন না। কারণ, তারা বলতেই পারে- প্রাণের অন্যতম প্রধান উপাদান যে জল, সেটা উপনিষদে বলা আছে। পুরাণে বর্ণিত আছে দশ অবতারের কথা। যার প্রথমটি হলো মৎস্য— অর্থাৎ জীব প্রথম দশায় ছিল জলচর। এরপর হলো কূর্ম-অর্থাৎ উভচর। তারপর বরাহ-স্থলচর। সুতরাং সাধু সাবধান।
Comments :0