Rail system Post Editorial

ধন্দে ভারত বেহাল রেলে

উত্তর সম্পাদকীয়​


পার্থপ্রতিম বিশ্বাস
ভারতীয় রেলে এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনার বলি হয়েছে ২৭৫ জন মানুষ, আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। স্বভাবতই এমন দুর্ঘটনার পর শুরু হয়েছে চাপান উতোর। এমন দুর্ঘটনার পেছনে রেল সুরক্ষার ত্রুটি নিয়ে মানুষ সরব হলেও দেশের শাসক এর মধ্যে ষড়যন্ত্র এবং নাশকতার গন্ধ আবিষ্কার করেছে। দুর্ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে দুর্ঘটনার মূল কারণ জানা গেছে।  ইতিমধ্যে  রেলের নিজস্ব তদন্ত ‘ কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি’র তত্ত্বাবধানে চলছে। এমন অবস্থায় এই দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে নিয়োগ করা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সিবিআই-এর দক্ষতা সাধারণভাবে ফৌজদারি অপরাধ অন্বেষণের ক্ষেত্রে প্রমাণিত কিন্তু রেলের এই দুর্ঘটনার পেছনে পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটির কথা যা প্রাথমিক ভাবে উঠে এসেছে সেখানে নিরপেক্ষ এবং উপযুক্ত  তদন্তের পরিবর্তে শাসকের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিবিআই সত্য উদ্ঘাটনে নাকি সত্য ধামা চাপা দেওয়ার লক্ষ্যে সেই প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে। 
মৃত্যুপুরীতে গ্রিন সিগন্যাল  
ইতিমধ্যে এই দুর্ঘটনার পেছনে যান্ত্রিক ত্রুটির কথা স্বীকার করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। লুপ এবং মেন লাইনের সংযোগস্থলের ‘ পয়েন্ট ’ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে বিপথে পরিচালিত হয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস পাশের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে ধাক্কা মারার ফলেই ঘটে এই দুর্ঘটনা। ট্রেনের যাত্রাপথে ট্রেন তার গতিপথ পরিবর্তন করে ভিন্ন ভিন্ন লাইনে যেতে পারে বর্তমানে চালু উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর ‘ রিলে - ইন্টার লকিং’ ব্যবস্থার মাধ্যমে। সড়কপথ , জলপথ  কিংবা আকাশপথের যান চালকেরা নিজের গতিপথ নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও ট্রেনের ক্ষেত্রে সেটা ট্রেনের চালক পারেন না। ফলে ট্রেনের বাইরে থাকা রেল কর্মীদের সাজিয়ে রাখা লাইনের ওপর দিয়ে সিগন্যাল দেখে তাঁকে ছুটতে হয়। এক অর্থে চালকের আসনে বসে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া চালকের হাতে কিছু থাকে না। কিন্তু সিগন্যাল হয়ে আছে সবুজ,  মেন লাইনে উচ্চগতিতে ট্রেন যাওয়ার জন্য অথচ পয়েন্ট বিভ্রাটে লাইন তৈরি হয়ে আছে পাশের ‘ লুপ ‘ লাইনের দিকে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রেলের চালকেরা ট্রেন চালাবেন কিংবা ট্রেনে যাত্রীরা চড়বে কোন ভরসায়? টিকিট কেটে ট্রেনে চড়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা রেলের মতো গণ পরিবহণ ব্যবস্থায় না থাকলে দেশের মানুষের প্রাণের বিপদ উত্তরোত্তর বাড়বে বই কমবে না। এই প্রেক্ষিতে এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পরে রেলের চালু প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থার মধ্যের  ফাঁক বেরিয়ে এসেছে। এমন ত্রুটি প্রযুক্তির ভুলে না কি পয়েন্ট মেরামতির ভুলে সেই প্রশ্ন এখন ওঠা অসঙ্গত নয়।

কর্মী সংকোচনে বিপন্ন রেল 
এদেশে এখন প্রতিদিন গড়ে আড়াই কোটি মানুষ প্রায় ১৬০০০ ট্রেনে চড়ে যাতায়াত করেন।  কিন্তু দুর্ভাগ্য যে এদেশে রেল ব্যবস্থার উন্নয়নের মাপকাঠি হিসাবে বিবেচিত হয় না রেলের সুরক্ষার মান বরং মাপকাঠি হয় নতুন গতিতে নতুন নতুন ট্রেনের উদ্বোধনের সংখ্যা। সন্দেহ নেই যে দেশের যাত্রী চাহিদা সামাল দিতে প্রয়োজন নতুন ট্রেন রুটের পরিকল্পনা এমনকি  চালু ট্রেনের গতি বৃদ্ধিও প্রয়োজন দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে। কিন্তু এর কোনটাই কাঙ্ক্ষিত সুরক্ষার মান বিসর্জন দিয়ে নয়। ফলে একশো চল্লিশ কোটি মানুষের দেশে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষের ‘ লাইফ লাইন’-কে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন সঠিক অগ্রাধিকারের। এদেশে রেল দুর্ঘটনার অন্যতম বড় কারণ হল রক্ষীবিহীন লেভেল ক্রসিং। এছাড়াও রেল লাইনের তদারকি এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ মুলত শ্রম নিবিড় প্রযুক্তি নির্ভর। ফলে এদেশের প্রায় ১,২৬,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে স্বাভাবিক কারণেই প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ দক্ষ কর্মী বাহিনীর। অথচ দেশে এই মুহূর্তে রেলে শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ৩,১২,০০০ যার মধ্যে ১,২৫,,০০০ এর বেশি পদ রেলের পরিকাঠামোর সুরক্ষার সাথে সম্পর্কিত। সম্প্রতি রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্টে প্রকাশিত যে   রেলসেতু পর্যবেক্ষণ এবং মেরামতির কাজে প্রয়োজনীয় কর্মীর ৬০%  পদ খালি। অথচ এদেশের ১৪৫,৫২৩ টি রেলসেতুর মধ্যে ৩৭৬৮৯ টি সেতুই শতাব্দী প্রাচীন যার অর্থ প্রতি চারটি সেতুর মধ্যে একটির বয়স একশো বছরের বেশি। ফলে রেল সেতুর সুরক্ষা সমেত সার্বিক রেল পরিকাঠামোর সুরক্ষা আজ এই কর্মী সঙ্কটে বড় প্রশ্নের মুখে।


বেসরকারিকরণে উপেক্ষিত সরকারি দায় 
রেল লাইনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ট্রেনের ‘সংঘাত মোকাবিলার যন্ত্র’ (অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস),  সিগন্যালের মতো  প্রযুক্তি নির্ভর রেলের সুরক্ষার  সিংহভাগ এখন বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মী সঙ্কটের কারণে ট্রেনের ‘অপারেশনের’ সাথে যুক্ত চালক, সহ চালক, গার্ড , টিকিট পরীক্ষক, ওয়ার্কশপের কর্মীদের কাজের চাপ বেড়ে চলেছে ভয়াবহ ভাবে। গত তিনমাসে ৪০% ট্রেন চালকদের গড়ে প্রায় বারো ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়েছে। অনিয়মিত এবং কাঙ্ক্ষিত  বিশ্রামের  অভাবে ক্লান্তি গ্রাস করছে এমন চালকদের। ফলে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে সিগন্যাল ফেল করার ঘটনা বাড়ছে, বাড়ছে বিপদের সম্ভাবনা।  গত এক বছরে ঘটা  দুর্ঘটনার ৭০%-এর বেশি ঘটেছে মানুষের ভুলেই। এমন প্রেক্ষিতে দেশে রেলের নিয়োগ বন্ধ রাখার অর্থ জেনে শুনে কেন্দ্রের সরকার দেশের রেল কর্মী এবং রেল যাত্রীদের প্রাণঘাতী  বিপদের মুখে ফেলার ব্যবস্থা করছে সজ্ঞানেই। স্বাধীনতার পর থেকেই সামাজিক দায়বদ্ধতার নজির গড়েছিল রেল এদেশের মানচিত্রে তাঁর নিজস্ব দক্ষ কর্মী বাহিনীর সাহায্যেই। কিন্তু এখন দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে রেলের নিজস্ব কর্মী সম্পদ নয় বরং অনেক বেশি নির্ভরশীল হতে হচ্ছে বেসরকারি সংস্থার কর্মদক্ষতা এবং তাদের দায়বদ্ধতার ওপরে। প্রধানমন্ত্রী মুখে আত্মনির্ভরতার কাহিনি প্রচার করলেও মনোযোগ দিয়ে রেল ব্যবস্থাকে কর্পোরেট নির্ভর করে তুলতে চাইছেন রেলের বিরাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে। আর এই বেসরকারিকরণের পথ ধরে বাড়ছে টিকিটের দাম, স্টেশনে এবং ট্রেনে বিভিন্ন পরিষেবার দাম, তুলে নেওয়া হচ্ছে বয়স্ক নাগরিকদের ট্রেনের টিকিটে ভরতুকি। নিত্যদিন বাড়তি ভাড়ার  চাপ বাড়ছে মানুষের ওপর আবার তার সাথে বেড়ে চলেছে ট্রেন যাত্রার ঝুঁকি। 
কাঠামোহীন গতি ভয়ের 
গরিব দেশে গণ-পরিবহণে পরিবেশ বান্ধব আর সুলভ যানের ভূমিকায় রেল অদ্বিতীয়। কিন্তু পরিবহণের দুই মূল সূত্র দ্রুত এবং নিরাপদ পরিবহণের ক্ষেত্রে রেলের কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা এখনও অধরা এদেশের মাটিতে। ফলে ‘বন্দে ভারতের’ মত হাতে গোনা দ্রুতগামী ট্রেনের গতি কিংবা সুরক্ষা দেশের আত্মনির্ভর প্রযুক্তির পরিচয় ঘটালেও প্রশ্ন ওঠে মেদিনীপুর লোকাল থেকে হাসনাবাদ প্যাসেঞ্জারের মতো আমজনতার রেলের গতি, সুরক্ষা এবং  স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে। কিন্তু গালভরা বন্দে ভারতের মতো বাহারি ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়েও কি এদেশে উন্নত রেলযাত্রার মাপকাঠি হিসাবে রেলের গতি বেড়েছে ? এদেশে মাত্র ২% ট্রেনের গড় গতি ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটারের ওপরে। ট্রেনের ইঞ্জিনের কিংবা কোচের দৌড়ের ক্ষমতা যতই বাড়ুক না কেন যাত্রাপথের সার্বিক রেল লাইনের হাল, রেল সেতুর হাল, ট্রেনের সংখ্যা, সিগন্যাল, স্টেশনের সংখ্যা এবং নিরাপত্তার আনুষঙ্গিক বিষয়গুলি ব্যতিরেকে যাত্রার সময় কমানো যায় না। কারণ খেয়াল রাখতে হবে যে দ্রুতগতির ট্রেন চালানোর জন্য ভূপৃষ্ঠ থেকে বেশ খানিক ওপরে তুলে রেললাইন পাতা না হলে সেক্ষেত্রে ট্রেনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে বই কমে না। ইতিমধ্যে আমেদাবাদ, বারাণসী কিংবা কাটরা গামী ‘বন্দে ভারত’ এক্সপ্রেস বেশ কিছু দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে রেললাইনের ওপরে চলে আসা গবাদি পশুদের সাথে সংঘাতে। ফলে যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রেনের যাত্রাপথের জনবহুল অংশগুলিতে লাইনের দুই পাশ নিরাপত্তা বলয়ের ঘেরা টোপে না আনা যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত ট্রেনের গতি বৃদ্ধির সাথে জুড়বে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও । 
আম জনতার ট্রেনের গতি 
এদেশে আম জনতার ট্রেন পরিকাঠামোর উন্নতি অথবা অবনতি বোঝা যায় সেই আম জনতার ট্রেনের গড় গতির বাড়া কমা দিয়েও।  দেশের শহর–শহরতলির  আমজনতার লাইফ লাইন হল লোকাল ট্রেন।  ২০১২-১৩ সালে  দেশজোড়া ইএমইউ লোকাল ট্রেনের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪১.৬ কিলোমিটার যেটা ২০১৯-২০ সালে  কমে  হয়েছে ঘণ্টায় ৩৮.৫ কিলোমিটার ।  ঐ একই সময়কালে নন-এক্সপ্রেস মানে চালু কথায় প্যাসেঞ্জার ট্রেনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৬.২ কিলোমিটার থেকে কমে হয়েছে ৩৩.৫ কিলোমিটার। সময় এগিয়ে চললেও তার সাথে পিছিয়ে গিয়েছে আম জনতার ট্রেনের গতি। ‘শতাব্দী’ থেকে ‘রাজধানী’ কিংবা ‘তেজস’ থেকে ‘বন্দে ভারতের’ গতি নিয়ে সরকারি স্তরে মাতামাতি হলেও সামগ্রিকতার বিচারে গতি কমেছে আম জনতার ট্রেনে। পাশাপাশি ট্রেনের সময় মেনে চলার পরিসংখ্যান ঐ একই সময় কালে খুব স্বস্তির নয়। যেখানে  ২০১৩-১৪ সালে দেশের ৮২.৬% ট্রেন সময়সীমার মধ্যে চলেছিল সেটাই ২০১৮-১৯ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫.৩ % । 
পণ্য পরিবহণে রেলের ভবিষ্যৎ 
এদেশে রেলের আয়ের সবচেয়ে বড়ো সুত্র পণ্য পরিবহণের ভাড়া। পণ্য পরিবহণ থেকে লাভের টাকায় রেল, যাত্রী পরিবহণে ভরতুকি জোগাতে পারে বলেই আমজনতার ট্রেনে যাত্রী ভাড়া নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। ফলে পণ্য পরিবহণ থেকে রেলের আয় উত্তরোত্তর না বাড়াতে পারলে আখেরে যে সুলভে যাত্রী পরিবহণ বিপর্যস্ত হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।  স্বাধীনতার পর দেশের ৮৫% পণ্য পরিবহণ হতো রেলের মাধ্যমে, বাকিটা মুলত সড়ক পথে। কিন্তু গত কয়েক দশকে উত্তরোত্তর সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির কারণে রেলের পণ্য পরিবহণের ভাগ কমে এসে দাঁড়িয়েছে ২৭%। এর ফলে রাজস্ব ঘাটতিতে ধুঁকছে রেল যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে রেলের ভাড়া এবং মাশুলে। রেলের সাম্প্রতিক পরিকল্পনা অনুযায়ী পণ্য পরিবহণের ভাগ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ২৭% থেকে ৪৫%-এ বাড়ানোর লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। কিন্তু রেল পরিবহণে মালগাড়ি সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত অথচ যেটি রেলের আয়ের মেরুদণ্ড।  ২০১২-১৩ সালে দেশে মালগাড়ির গড় পড়তা গতি ছিল ২৫.১ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়, যা ২০১৯-২০-তে কমে দাঁড়িয়েছে ঘণ্টায় ২৩.৬ কিলোমিটার। কার্যত সড়ক পরিবহণের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে এখন রেলের পণ্য পরিবহণে। ফলে রেলপথে পণ্য পরিবহণের গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এখন আশু প্রয়োজন মালগাড়ি চলাচলের জন্য আলাদা নির্দিষ্ট রেলপথ ‘ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর’।  এটা বোঝা দরকার যে  মালগাড়ির গতি দ্রুত বৃদ্ধি করে রেলের আয় না বাড়লে  কার্যত সুলভে আম জনতার ট্রেন যাত্রা অচিরেই  বিপন্ন হবে। আর তার সাথে লোকসান কমানোর নামে  বাড়বে রেলের বেসরকারিকরণের ঝোঁক।


অরক্ষিত রক্ষা ‘কবচ’ 
দেশজুড়ে গাল ভরা বিজ্ঞাপন চলছে ‘ ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র । অথচ ট্রেনের সুরক্ষায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে শম্বুক গতিতে। এখন কৃষ্ণপক্ষ – শুক্লপক্ষের বিভিন্ন দিনক্ষণ দেখে তাবিজ কবজে বিশ্বাসী রেলমন্ত্রী কিংবা প্রধান মন্ত্রী উদ্বোধন করে চলেছেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের। মানুষের ধন্দ এখন সেই গতিমান ট্রেনের গতি মাহাত্ম্য নিয়েও। কারণ ট্রেনের গতি যত উচ্চ হবে ততো  উচ্চ গ্রামে পৌঁছাতে পারে যাত্রাপথে বিপদের মাত্রা। সেই নিরিখে উচ্চ গতির ট্রেন চলাচলের পথে ট্রেনের সংঘর্ষরোধী প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন বাড়ছে প্রতিদিন। অথচ দেশের মোট ৬৭০০০ কিলোমিটার ট্রেন রুটের কেবল ২% অংশে দুর্ঘটনা রোধী রক্ষা কবচের প্রয়োগ হয়েছে। দেশের রেলের বাজেটে এই খাতে উল্লেখ করার মতো অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ট্রেন দুর্ঘটনা এড়াতে শুধু ট্রেনের ইঞ্জিনে এমন প্রযুক্তির প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। ট্রেনের দুর্ঘটনা ঠেকাতে সেই প্রযুক্তি রেল লাইন, লেভেল ক্রসিং এবং স্টেশন প্লাটফর্মেও প্রয়োগ করতে হবে। ট্রেনের গোটা যাত্রাপথ জুড়ে এমন প্রযুক্তি প্রয়োগের  কোনও পরিকল্পনা অন্তত সরকারের ব্যয় বরাদ্দ দেখে বোঝা যাচ্ছে না। এর অর্থ দাঁড়ায় মুখে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্লোগান দিলেও রেলের সুরক্ষায় ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ দূর অস্ত। দেশের মানুষের কাছে ‘ সেমি -হাই স্পিড’ চালিয়ে কিংবা আধুনিক ভারতের বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন ফেরি করে বেড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী অথচ দেশজুড়ে চলা ট্রেন পরিষেবার হাঁড়ির হাল। বালেশ্বরের ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা সেটাই  চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল। কিন্তু সরকার দেখতে পেল কি না সে সময়ই বলবে! যাত্রী এবং পণ্য পরিবহণের নিরিখে দেশের ব্যস্ততম সাতটি রেল রুটের তিনটি শুরু হয় বাংলার শহর কলকাতা থেকে। এই প্রেক্ষিতে বঙ্গবাসীর সচেতন হওয়া উচিত এবং সোচ্চার হওয়া উচিত রেল যাত্রায় বিপন্ন রাজ্যবাসীর সুরক্ষার দাবিতে।

Comments :0

Login to leave a comment