Morocco

মরক্কোয় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ২০০০

আন্তর্জাতিক

Morocco


ঘড়ির কাঁটার সঙ্গেই দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের তালিকা। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মরক্কোয় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২০০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে আহত দুই হাজার ৫৯ জন। তাঁদের মধ্যে ৮০০ জনের আঘাত গুরুতর। প্রশাসনের আশঙ্কা নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
শুক্রবার গভীর রাতে জনপ্রিয় পর্যটন শহর মারাকেশ থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি অঞ্চলে জোরালো ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৮। উপকূলবর্তী রাবাত, কাসাব্লাঙ্কা, এসাঔরিয়া সহ দেশের বিভিন্ন শহর ও জনপদে মাঝারি থেকে তীব্র কম্পন অনুভূত হয়। 
‘‘আমরা তীব্র কম্পন দেখলাম। কিছু পরে বুঝতে পেলাম ভূমিকম্প,’’ সাংবাদিকদের এই কথা জানান আবদেলহক এল আমরানি (৩৩)। তিনি আরো বলেন,‘‘ চোখের সামনে দেখলাম বহুতল দুলছে। আতঙ্কে সবাই রাস্তায় চলে আসি। শিশু ও মহিলারা ভয়ে কাঁদতে থাকেন।’’
অনেকেই একে দেশের সব থেকে তীব্র ভূমিকম্প বলেই মনে করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, শেষ ১২০ বছরে মরক্কোতে এমন ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়নি। ভূমিকম্পে বহু আবাসন, বহুতল ভেঙে পড়েছে। ঐতিহাসিক মারাকেশ শহরে ছড়িয়ে ভেঙে পড়া ইমারতের ধ্বংসাবশেষ। দুর্গম অ্যাটলাস পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধারকারিরা পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। প্রশাসনের অনুমান, ওই অঞ্চলে ভূমিকম্পে বহু মৃত্যু হতে পারে। মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে স্থানীয় সময় ১টা ১১ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৬.৮ তীব্রতার ভূমিকম্প হয়। তার ঠিক ১৯ মিনিট পরে হয় দ্বিতীয় কম্পনটি। রিখটার স্কেলে দ্বিতীয় কম্পনের তীব্রতা ওঠে ৪.৯। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল মারাকেশের থেকে ৭২ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমের ইগহিল শহরে মাটির ১৮.৫ কিলোমিটার গভীরে। 
মরক্কোর আবহাওয়া সংস্থা অবশ্য জানিয়েছে কম্পনের কেন্দ্র মাটির ১১ কিলোমিটার গভীরে। প্রশাসনের আশঙ্কা ভূমিকম্পে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। যেহেতু উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত বহু এলাকায় এখন যেতেই পারেনি।
মরক্কোর সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল অনুসারে, ভূমিকম্পের সময় অনেকের ঘুম ভেঙে যায়। ভয়ে লোকজন রাস্তায় চলে আসেন। মারাকেশে বিভিন্ন সড়কে আতঙ্কিত জনতার জটলা দেখা গেছে। অধিকাংশই বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছিলেন।
ভূমিকম্পে অনেক বাড়ি ও বহুতলে ফাটল দেখা গেছে। সরকারের থেকে এমন ইমরাতে নাগরিকদের না ফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কাসাব্লাঙ্কার জনৈক ব্যক্তি ভূমিকম্পের কিছু আগে পাশের আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে কোনও কাজে যান। হঠাৎ তিনি দেওয়াল ছাদ কাঁপতে দেখেন। হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায় আসবাব এবং বাসনপত্র। পাশাপাশি জনৈক মহিলা ভূমিকম্পের সময় টাল সামলাতে না পেরে বহুতলের সিড়ি থেকে পড়ে মারাত্মক রকমে আহত হন। সংবাদ মাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে এমনই সব মর্মান্তিক ঘটনা নিয়মিত আসতে শুরু করেছে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মারাকেশে দ্বাদশ শতকে তৈরি বিখ্যাত কৌতৌবিয়া মসজিদ। ঐতিহাসিক স্থাপত্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি। মসজিদের ৬৯মিটার দীর্ঘ মিনারটি মারাকেশের ছাদ বলেই পরিচিত।
এদিন সমাজমাধ্যমে মারাকেশের বহু স্থানীয় ভূমিকম্পে ওল্ড সিটির বিখ্যাত রেড ওয়ালের ক্ষতিগ্রস্থ অংশের ছবি পোস্ট করেন। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত স্মারকটি দেখতে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক সমবেত হন।
শনিবার সকালে মরক্কোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভূমিকম্পের পর থেকে বহু এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ভেঙে পড়েছে অজস্র রাস্তাঘাট। তালাত এন’ইয়াকুব শহরের মেয়র আব্দেরহমান আইত দাউদ বলেন, আল হৌজ প্রদেশে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট পরিষ্কার ও মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় উদ্ধারকারীরা প্রভাবিত এলাকায় যেতে পারছেন না।
মরক্কোয় নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত আল হৌজ উপত্যকা। স্থানীয় মনোরম পরিবেশে পর্যটকদের আকর্যণ করে। গগনচুম্বী অ্যাটলাস পাহাড়ের কোলে এমনই একটি গ্রাম আমাজিগ। ভূমিকম্পের পর থেকে গ্রামটির সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভারত, আলজেরিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে মরক্কোতে ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর কথা জানানো হয়েছে। ভূমিকম্পে হতাহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি শোকপ্রকাশ করেছেন মরক্কোর জাতীয় দলের বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় আচরাফ হাকিমি। মরক্কোতে ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দলের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ডক্টরস ইউথআউট বর্ডার্স (এমএসএফ)। ‘‘ভূমিকম্পে প্রভাবিত এলাকায় ত্রাণকাজ আমাদের প্রথম লক্ষ্য,’’ শনিবার সাংবাদিকদের এই কথা বলেন সংস্থার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অ্যাভরিল বেনোয়েট।
‘‘উদ্ধার অভিযানে আগামী চব্বিশ ঘণ্টা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়ের মধ্যেই সম্ভবত জীবিতদের বের করে আনা যেতে পারে। কিন্তু ভূমিকম্পে যে ভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাতে ত্রাণ অভিযানে বিস্তর বেগ পেতে হবে,’’ জানান ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্টের মুখপাত্র ক্যারোলিন হোল্ট।
শনিবার দুপুর থেকে ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছে মৌলে ব্রাহিম গ্রামে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া অনেক বাড়ি থেকে দেহ বের হতে থাকে। পাশেরই ঢালু পাহাড়ে দেহগুলি সমাহিত করার জন্য কবর খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রামে সেনাবাহিনী অস্থায়ী হাসপাতাল খুলেছে। আহতদের সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

Comments :0

Login to leave a comment