পঞ্চাশ বছরের বেশি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সদস্য। কুড়ি বছরের বেশি সদস্য বিজেপি’রও। মাথায় কালো টুপি, গালে দাড়ি থাকায় মার খেতে হলো সেই প্রতাপ সিং-কেও। হরিদ্বারের ছোট শহর মাঙ্গলৌরের ঘটনা।
তেষট্টি বছরের বৃদ্ধ জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সঙ্গে ছিলেন বোরখা পরিহিত মুসলিম মহিলা। মার খাওয়ার আরেকটি কারণ সেটিও। এই মহিলা আবার বিজেপি’র স্থানীয় সংখ্যালঘু সেলের সদস্য। সিংয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, শিবভক্ত কানওয়ারিদের একাংশ তাঁর ওপর হামলা চালায় গত ১০ জুলাই। তাঁকে গাড়ি থেকে টেনে নামানো হয়। ভেঙে দেওয়া হয় গাড়ির কাচ।
ধর্মের নামে সমাজে বিদ্বেষ ছড়ালে কী হয়, হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন আরএসএস’র সক্রিয় সদস্য এই বৃদ্ধ। পুলিশ এফআইআর নিয়েছে। তবে হামলা ছাড়াও আরেকটি এফআইআর দায়ের করেছে। দ্বিতীয় এফআইআর’এ দায়ী করা হয়েছে ঘটনার ভিডিও ছড়ানো অংশকে।
১০ জুলাইয়ের ঘটনা হলেও উত্তরাখণ্ডের এই এলাকায় জানাজানি হয়েছে অতি সম্প্রতি। জাতীয় দৈনিক ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন বৃদ্ধ। তাঁর বক্তব্য, ওই মহিলার সন্তান স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়ে। দলেরই সহকর্মী। ফলে মাদ্রাসায় নিতে সাহায্য করেছিলেন মহিলাকে। পরে একটি দোকানে খাবারও কেনেন। রাস্তার পাশে দাঁড় করানো ছিল গাড়ি। সেই ফাঁকে কেউ শিবভক্তদের মাটির কলস বা ‘কানওয়ার’ গাড়ির সামনে রেখে দেয়। দেখতে না পেয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে ধাক্কা লাগে কলসিতে। এরপরই ঘিরে ধরে উন্মত্ত একদল লোক। তাঁকে মারধর হেনস্থার পর আরও কিছু ঘটতে পারত। মাথায় কালো টুপি ছিল, গালে দাড়ি। তা দেখেই মুসলিম মনে করেছে। স্থানীয় দোকানদাররা ছুটে গিয়ে বোঝান যে যাঁকে মারা হচ্ছে তিনি হিন্দু। বিজেপি-আরএসএস করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। গাড়ি ভাঙচুর করে দেওয়া হয়। তবু রক্ষা যে মহিলা কোনক্রমে পালিয়ে যেতে পেরছেন।
বাঁক কাঁধে শিবের মাথায় জল ঢালতে যাওয়ার প্রথা বহু বহু পুরনো। পাড়া বা এলাকা থেকে নিজেরাই যেতেন দর্শনার্থীরা। বহু অংশই একমত বিজেপি-আরএসএস’র সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন নামে-বেনামে দর্শনার্থীদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজ সংগঠিত করছে। ভক্তির বদলে বীরত্ব দেখানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।
এর আগে উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশের গুলিতে নিহত এক যুবকের পরিবার এমনই আর্তনাদ করেছিল। গোলমা মনে হলেই গুলি চালানোর নির্দেশ দেন যোগী। পুলিশের গুলিতে নিহত চাকরিজীবী নিরীহ এক যুবকের পরিবারের ভাষ্য অনেকটা এমনই ছিল, ‘ওদের গুলি করে মারবে বলেছিল। ভোট দিয়েছিলাম। আমাদের ছেলেই মেরে ফেলল!’
হরিদ্বারের ঘটনায় পুলিশ সুপার অজয় সিং বলেছেন, ‘‘কানওয়ারিদের সঙ্গে গন্ডগোল হয়েছে ওই ব্যক্তির। গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। তবে যারা ভিডিও ছড়িয়ে সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
অনেকেই বলছেন, ঘটনায় খুবই অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। ধর্মীয় বিদ্বেষে হামলার ঘটনা চাপতে চাইছে। তাই ভিডিও ছড়ানো লোকজনকে খুঁজতে নেমেছে!
Comments :0